সুকান্ত ঘোষালের কবিতা
: প্রভুর দরজা
------------------
'হে প্রভু আমাকে সমস্ত কুকাজ থেকে মুক্ত করুন' , কথাটা মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ি। পাখির ডাকের নীচে দিয়ে-শিশুর হাসির শব্দের পাশ দিয়ে - বৃক্ষপল্লবের মধ্যে দিয়ে । এভাবে পুরো রাস্তাটা শেষ হয়ে যায় । প্রভুর বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হই । সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সবাই উপর দিকে হাত তুলে রয়েছে ,শরীর দুলছে সমগ্র বাঁদিক থেকে ডানদিক।জগতের কোন কিছুর প্রতি তাদের আকর্ষণ নেই।এমন কী টাকা-পয়সার উপরেও না। গম্ভীর গুঞ্জন উঠছে 'হে প্রভু আমাকে সমস্ত কুকাজ থেকে মুক্ত করুন।' আমি ভিড় সরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। যদিও এটা এখানকার নিয়মবিরুদ্ধ । কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিই। কারণ আমার হাতে বেশি সময় ছিল না। একসময় বহু চেষ্টায় একদম লাইনের সামনে চলে আসি। একজন ভদ্রলোক আমায় দেখে মুচকি হাসেন । যাকে আমি এর আগে কোন দিন হাসতে দেখিনি। 'আপনি সঠিক জায়গায় দাঁড়িয়েছেন, যেটা আগে থেকেই আপনার জন্য বরাদ্দ, এটা প্রভুর দরজার পিছনদিক' , তিনি বললেন।
: সমাপ্তিভাষণ
-------------------
আমাদের মধ্যে কেউ একজন,একটা নতুন জায়গা খুঁজে পেয়েছে । অথচ এটা নিয়ে আমার নিজের ভেতরে কোন উত্তেজনা নেই। ওরা আমায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে ,বাস্তবে এমন জায়গা সত্যিই হয়।যেখানে বসে চারদন্ড বিশ্রাম করতে পারব , নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতে পারব - যে স্থানটির তল্লাশ সকলেই কখনো কখনো করে থাকি হয়তো। আমরা যেখানে বসে রোজ দীর্ঘসময় ব্যয় করি সেখানে পাড়ার ছেলেরা বল খেলতে এসে দখল করেছে। জায়গাটা খুঁজে পাওয়ার জন্য আমরা যে তাকে ধন্যবাদ জানাই নি তা নয় বরং তার এই শ্রমসাধ্য কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি এবং মাননীয় সম্প্রীতিরক্ষক মহাশয়কে মুখ্য অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি । কারণ মুখ্য অতিথিই একমাত্র সমাপ্তিভাষণ দেন । সমাপ্তিভাষণে তিনি জিজ্ঞাসা করেন , ' তাহলে সেই অস্থির বলটির কী হবে, ছেলেরা খেলার সময় যেটা আপনাদের গল্পের মাঝে এসে পড়ত?'
: বৃহৎ শহরের ধারাবিবরণী
-------------------------------------
এই বৃহৎ শহর আমার ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নয় । অথচ আমি মাঝেমধ্যেই সবাইকে ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি । চায়ের দোকান, বাসযাত্রীদের প্রতিক্ষালয়, শিশুদের বিদ্যালয়চত্বর ইত্যাদি জনবহুল স্থানগুলোকে আমি কঠোরভাবে এড়িয়ে যাই । হয়তো এদের চেয়ে আরো ভিড়ে ঠাসা জায়গায় লুকিয়ে থাকি । তবু বন্ধুরা আমায় সেই গোপন জায়গাটি থেকে টেনে ঠিক প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। যদিও আমি বন্ধুদের কোন উপকারে আসি না । এমন কী তাদের জন্মদিনের তারিখটাও আমার মনে থাকে না - শুভেচ্ছা জানানোর জন্য । বন্ধুরা আমাকে কয়েদ করে এনে নিয়মরক্ষকের হাতে তুলে দেয় । যাতে অন্তত তিনি আমায় এমন প্রাণঘাতী অদূরদর্শীতার কবল থেকে বাঁচাতে পারেন । সমস্ত লিখিত প্রমান খতিয়ে দেখে তিনি অসংখ্যবার আমাকে ছেড়ে দেন যখন শহরের দীর্ঘ ধারাবিবরণীতে সত্যিই কোথাও না কোথাও আমার বর্ণনা রয়েছে ।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী
----------------------------
প্রথম দফা গণনার পর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমাকে তিনশো হাত পিছনে ফেলেছে। বুঝতে পারলাম এতে তার তৎপরতা অনেকটা বেড়ে যাবে। দ্রুত পা চালিয়ে সে আমাকে ঝেড়ে ফেলবে আরো দূরে। দ্বিতীয় দফায় ব্যবধান দাঁড়াল পাঁচশো হাত।তৃতীয় দফায় সাতশো , এভাবে পর পর আরো কয়েক দফা গণনার পরেও আমি নিজের মধ্যে কোন হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছি না। জানি আক্রমনাত্মক হওয়ার প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই যেহেতু অন্তিম দফার গণনা এখনো বাকি। অধিকাংশ ব্যবধানগুলো অন্তিম দফাতেই শূন্য হয়। যত চমৎকার এখানেই ঘটে। একটা সন্তোষজনক দূরত্ব রচিত হয় দুটো বেলাগাম প্রাণীর মধ্যে। আর সবসময়েই আমি এক নিরাপদ আশ্রয় লাভ করি যেখানে কেউ ইচ্ছা করলেও দখল করতে পারে না,এমন কী ওই প্রবল পরাক্রান্ত আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও নয়। রুদ্ধশ্বাস অন্তিম দফা গণনার শেষে আমি প্রতিবার লোকটির চেয়ে হাজার হাত পিছনেই থাকি।
------------------
'হে প্রভু আমাকে সমস্ত কুকাজ থেকে মুক্ত করুন' , কথাটা মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ি। পাখির ডাকের নীচে দিয়ে-শিশুর হাসির শব্দের পাশ দিয়ে - বৃক্ষপল্লবের মধ্যে দিয়ে । এভাবে পুরো রাস্তাটা শেষ হয়ে যায় । প্রভুর বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হই । সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সবাই উপর দিকে হাত তুলে রয়েছে ,শরীর দুলছে সমগ্র বাঁদিক থেকে ডানদিক।জগতের কোন কিছুর প্রতি তাদের আকর্ষণ নেই।এমন কী টাকা-পয়সার উপরেও না। গম্ভীর গুঞ্জন উঠছে 'হে প্রভু আমাকে সমস্ত কুকাজ থেকে মুক্ত করুন।' আমি ভিড় সরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। যদিও এটা এখানকার নিয়মবিরুদ্ধ । কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিই। কারণ আমার হাতে বেশি সময় ছিল না। একসময় বহু চেষ্টায় একদম লাইনের সামনে চলে আসি। একজন ভদ্রলোক আমায় দেখে মুচকি হাসেন । যাকে আমি এর আগে কোন দিন হাসতে দেখিনি। 'আপনি সঠিক জায়গায় দাঁড়িয়েছেন, যেটা আগে থেকেই আপনার জন্য বরাদ্দ, এটা প্রভুর দরজার পিছনদিক' , তিনি বললেন।
: সমাপ্তিভাষণ
-------------------
আমাদের মধ্যে কেউ একজন,একটা নতুন জায়গা খুঁজে পেয়েছে । অথচ এটা নিয়ে আমার নিজের ভেতরে কোন উত্তেজনা নেই। ওরা আমায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে ,বাস্তবে এমন জায়গা সত্যিই হয়।যেখানে বসে চারদন্ড বিশ্রাম করতে পারব , নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতে পারব - যে স্থানটির তল্লাশ সকলেই কখনো কখনো করে থাকি হয়তো। আমরা যেখানে বসে রোজ দীর্ঘসময় ব্যয় করি সেখানে পাড়ার ছেলেরা বল খেলতে এসে দখল করেছে। জায়গাটা খুঁজে পাওয়ার জন্য আমরা যে তাকে ধন্যবাদ জানাই নি তা নয় বরং তার এই শ্রমসাধ্য কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি এবং মাননীয় সম্প্রীতিরক্ষক মহাশয়কে মুখ্য অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি । কারণ মুখ্য অতিথিই একমাত্র সমাপ্তিভাষণ দেন । সমাপ্তিভাষণে তিনি জিজ্ঞাসা করেন , ' তাহলে সেই অস্থির বলটির কী হবে, ছেলেরা খেলার সময় যেটা আপনাদের গল্পের মাঝে এসে পড়ত?'
: বৃহৎ শহরের ধারাবিবরণী
-------------------------------------
এই বৃহৎ শহর আমার ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নয় । অথচ আমি মাঝেমধ্যেই সবাইকে ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি । চায়ের দোকান, বাসযাত্রীদের প্রতিক্ষালয়, শিশুদের বিদ্যালয়চত্বর ইত্যাদি জনবহুল স্থানগুলোকে আমি কঠোরভাবে এড়িয়ে যাই । হয়তো এদের চেয়ে আরো ভিড়ে ঠাসা জায়গায় লুকিয়ে থাকি । তবু বন্ধুরা আমায় সেই গোপন জায়গাটি থেকে টেনে ঠিক প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। যদিও আমি বন্ধুদের কোন উপকারে আসি না । এমন কী তাদের জন্মদিনের তারিখটাও আমার মনে থাকে না - শুভেচ্ছা জানানোর জন্য । বন্ধুরা আমাকে কয়েদ করে এনে নিয়মরক্ষকের হাতে তুলে দেয় । যাতে অন্তত তিনি আমায় এমন প্রাণঘাতী অদূরদর্শীতার কবল থেকে বাঁচাতে পারেন । সমস্ত লিখিত প্রমান খতিয়ে দেখে তিনি অসংখ্যবার আমাকে ছেড়ে দেন যখন শহরের দীর্ঘ ধারাবিবরণীতে সত্যিই কোথাও না কোথাও আমার বর্ণনা রয়েছে ।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী
----------------------------
প্রথম দফা গণনার পর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমাকে তিনশো হাত পিছনে ফেলেছে। বুঝতে পারলাম এতে তার তৎপরতা অনেকটা বেড়ে যাবে। দ্রুত পা চালিয়ে সে আমাকে ঝেড়ে ফেলবে আরো দূরে। দ্বিতীয় দফায় ব্যবধান দাঁড়াল পাঁচশো হাত।তৃতীয় দফায় সাতশো , এভাবে পর পর আরো কয়েক দফা গণনার পরেও আমি নিজের মধ্যে কোন হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছি না। জানি আক্রমনাত্মক হওয়ার প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই যেহেতু অন্তিম দফার গণনা এখনো বাকি। অধিকাংশ ব্যবধানগুলো অন্তিম দফাতেই শূন্য হয়। যত চমৎকার এখানেই ঘটে। একটা সন্তোষজনক দূরত্ব রচিত হয় দুটো বেলাগাম প্রাণীর মধ্যে। আর সবসময়েই আমি এক নিরাপদ আশ্রয় লাভ করি যেখানে কেউ ইচ্ছা করলেও দখল করতে পারে না,এমন কী ওই প্রবল পরাক্রান্ত আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও নয়। রুদ্ধশ্বাস অন্তিম দফা গণনার শেষে আমি প্রতিবার লোকটির চেয়ে হাজার হাত পিছনেই থাকি।
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteঅনন্য আবেশ
ReplyDeleteদুর্দান্ত লেখা।
ReplyDelete