দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা
বাঁকুড়া জেলার রাউৎখন্ড গ্রামে জন্ম। একান্নবর্তি পরিবারে বেড়ে ওঠা । প্রথম ছাপা অক্ষরে ছোটো গল্প নদীয়ার একটি ছোটো পত্রিকায় প্রকাশিত,, বাংলা স্নাতক শেষ না করেই বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য কল্যাণীতে ফার্মাসি পড়তে যাওয়া । তখন থেকেই,ভাবনা,, আস্তে আস্তে কবিতা,, বেশ কিছু লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন। ।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির মৃত্যু সিরিজের কবিতা।
মৃত্যু ১
যখনই জীবনের কথা ভাবি
শশ্মানে গিয়ে বসি ,
অঙ্গারের সেকি অহংকার !
ছুঁয়ে যেও, পারলে তোমারও,
যেও ছুঁয়ে----
অনেকের স্পর্শ পেয়ে
অন্য জন্ম অনিবার্য জেনে
মরে যেতে চাই ।।
মৃত্যু ২
সত্যি বোঝো ? মৃত্যু ?
হরিপদবাবু নস্যিরংয়ের সিকনি মুছতে মুছতে
বললেন, মেটাফিজিক্স বোঝো ?
আমি বললুম না ।
গায়ত্রী ? বামুনের পো ?
বললুম না ।
সঙ্গে জুড়ে দিলুম, খিদে পেয়েছে
বুঝি
ভালো বুঝি
ওতে চলবে না ?
এক মুহূর্ত কী ভাবলেন, তারপর চোখে বাহান্নর এক পৃথিবী কঙ্কাল ধরে, ব্ল্যাকবোর্ডে খসখস করে
লিখে দিলেন
ফ্যান----।।
মৃত্যু ৩
যে সব পাখিরা বাসাই ফেরেনি
তাদেরই দু'কথা বলছি,
যারা ভেবেছিল চলে যাবে সব
কেউ চলে যেতে পারেনি
রেখে গেছে উবুজ্বলন্ত কষ্টের কুণ্ডে
এক কুঁড়ি আনন্দ মৃত্যু
এখন তো সেই সময়, যখন তুমি অন্ধকারে দিকে
অন্ধকার তাক করে বসে আছো !
নিঃস্তব্ধতা যে এক ধরনের হাহাকার
বুঝতেই চায়ছো না !
মৃত্যু ৪
ক্ষুধা ও আসন্ন মৃত্যু
কোন যাত্রাপথ শ্রেয় ?
বিশ্বাস কর,
বিশ্লেষন বুঝি না ,
ভাইয়ের শবদেহটি বুঝি
কোন ফুল দিয়ে ঢাকলে
ঠিক হবে
মাটি না আগুন
ঠিক কোনটি !
তোমরাই ঠিক করে দিও ।
মৃত্যু ৫
প্রপাতের শব্দে ভাঙে পাহাড়ের ঘুম
আঁধারে রাতকথা আলোচোখে জাগে
আমি তার কাছাকাছি যাই
ছিহ্ন সুর, ক্ষিন্ন-প্রবাহ
ভেতরে বাহির দেখি, বাহিরে ভিতর
পাথরে আগুন জ্বালাই
যে প্রবাহ অতিক্রান্ত রাতের মোহনা
জোনাকির মতো
তাকে আলোর আদর দিই
উষ্ণ সোহাগে অন্তিম চুম্বন দিই ঠোঁটে
বলি, তুমি মৃত্যু ? না ক্ষুধা !
মৃত্যু ৬
এই ফাঁকে
রেল লাইনে বাসা বাঁধে
সমান্তরাল পাতে
আড়াআড়ি শুয়িয়ে দিই প্রেম
আঙুলে ফাঁক রাখি
ঠোঁট, ঠোঁটে হুইশেল বাজাই
হে--ই---ই--- জীবন---
মৃত্যু ৭
আই সি ইউ-এ উঁকি দিয়ে যে বিষন্ন মুখ ফিরে যাচ্ছে, ওকে বলো-"নহন্যতে হন্যমানে শরীরে"
দুঃখ ক্রমশ ডট ডট হয় মৃত মানুষের ই সি জি র
মতো , স্ট্রেটলাইনে।
চলে যাওয়া রেখার থেমে যাওয়া না থাকলেও , বেঁকে সে যাবেই ভেবেছো !
যা কিছু ভারি কালো, আলো ভেবে সেখানেই
ছোবল রেখেছো
কার্বন স্টিলের ওষ্ঠে 'স্ক্যালপেল চুম্বন, মাপা ধার
লেফ্ট রেডিয়াস আর্টারিতে নাচে
ইউথানেসিয়া ।
মুরগি জবাই করতে করতে কপালে রক্তের ছিটে
লাগলেও যদি কশাই না ভাবো
পুরোহিত হিসেবেই প্রণাম নিও মৃত্যু,,,
দারুন দারুন দাদাভাই
ReplyDeleteখুবই গভীর ভাবনায় সমৃদ্ধ। পড়ে প্রশান্তি আসে। কিন্তু বাঁকুড়িয়া প্রদোষ মুক্ত হ'ল না।
ReplyDeleteমৃত্যু শব্দটা কবির ছোঁয়ায় কতই না জীবন্ত --- প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
ReplyDeleteমৃত্যুর আধারে বিধৃত জীবন। সেখানেও ঘনায় আঁঁধা।।
ReplyDelete