আলিমন নেছা মনির কবিতা
এম জি সেক্টরে,একজন ওয়েলফেয়ার এক্সিকিউটিভ। দেশের বাড়ি দিনাজপুর।থাকেন গাজীপুর। দেশ বাংলাদেশ।
আলিমন নেছা মনি, উদ্ভিদবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত, তীতুমীর কলেজ,মহাখালি,ঢাকা।
আলিমন নেছার কবিতার মধ্যে স্বতন্ত্র এক সরল ভাষা যা পড়লে বোঝা যাবে এবং দীর্ঘ কবিতার রূপ আছে কিছুটা।
ভুল অনুবাদ
তোমাকে কাছে পাওয়ার চেয়ে বড় সুখ
হয়ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
অরণ্য তোমাকে দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে
অামি সমস্থ সুখের অনুভুতি পেতে চাই।
তবে প্রেমের নেশা আমার রক্তে নেই
তবুও তার গন্ধ শুঁকি রাতের হাসনাহেনায়
যখন মৌ মৌ সুবাসেই ঘর ছুয়ে যায়।
আর আমি মাতাল হয়ে অনুভব করি
তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতির ডানায়
আমার অশ্রু সজল চোখের তৃষ্ণা মেটাই।
অরণ্য, আমি বড্ড বেশি সরল
তুমি ছাড়া বেঁচে থাকবার কোন আশা নেই।
এছাড়া আর কোন পথও খোলা নেই
এই বস্তিতে তুমি ছাড়া কোথাও সুখ নেই।
তোমাকে কাছে পাওয়ার চেয়ে বড় সুখ
হয়ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
অরণ্য,তোমাকে ছাড়া আর কি ভাবব ?
আমার ভাবনার আকাশ জুড়ে খোলা মাঠ
যার ধারে সবুজ ঘাস তীব্র যাতানা সয়ে
একফোঁটা বৃষ্টির সজীবতা নিতে আকুল হয়।
কিন্তু বস্তি এখানে কোন মুক্ত বাতাস নেই
সারাদিন মানুষের কোলাহল আর সীসায়
অকালেই প্রাণ হারায় অনেক যুবক
যার চিঠি লিখার কথা ছিল তার প্রিয়াকে
সেই চিঠি ভিজে যায় রক্তের শুকনো দাগে
একটি পাখির নখের সাথে বাতাসে উড়ে গেল ।
বাড়িওয়ালারা বাসার পসরা খুলে দিয়েছে
রাত্রি নামলেই চারিদিকে গাঁজার গন্ধ ছোটে
কয়েকটি নারীর আনাগোনা অনায়াসে দেখে
কেউ বা পাহারাদার সেজে প্রেমের হুল ফোটায়।
গলির মোড়ের সামনের চায়ের দোকানটায়
অনেক রাজনীতির উঠকো গুজবে কান ভরে যায়।
পয়সাওয়ালা লোকগুলো গরীবের রক্ত চুষে
খুব রাতারাতি নিজের রুপকে পালটে ফেলে
খেতে না পাবার শ্রমিক মজুরদের নেতা হয়ে যায়।
অরণ্য, সেখানে আমি নিতান্তই সরল
তাই তুমি ছাড়া আমার যাওয়ার জায়গা নাই।
রাত্রি হলে বিছানায় কারোও প্রশস্ত খোলা বুকে
মাথা গুজিয়ে ঘুমাবার কোন ঠিকানা নাই।
অরণ্য, তোমাকে ছাড়া আমি কর্মহীণ হয়ে যাব
এছাড়া এমনিতেই এ শহরে মেধাবীদের দাম নেই
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররাও কাজ জুটাতে পারে না
সারাদিন ধরে হণ্য হয়ে ঘুরে বাসায় ফিরে এসে
আত্নসম্মানের ভয়ে আত্নহত্যার পথকে খুঁজে নেয়।
সেদিন পাশের বস্তির মেয়েটা চাকুরি নিতে গিয়ে
এক যুবকের খপ্পরে পড়ে রক্তাত্ব লাশ হয়ে যায়
তা দেখে বস্তির মদখোর লোকটা উল্লাসেই হাসে
সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে কন্ডম চিবিয়ে খায়।
এসব দেখতে দেখতে আমার চোখে ময়লা জমেছে
কোনকিছুই এখন আগের মতো ভালো লাগে না
এই শহরের মানুষের হৃদয় বড্ড বেশি কঠিন
তারা সহজেই কারোও বিপদে এগিয়ে আসে না
তাই নির্মমতা আমাকে ভুল অনুবাদে ফেলে দেয়।
অরণ্য,আমাকে সেই ভুল অনুবাদ হতে রক্ষা কর
যাতে আমি চিরকাল তোমাকে মুখস্থ করতে পারি
তোমার লিখে রাখা প্রবন্ধ ,গল্প,কবিতার ছায়ায়
প্রিয়া সাহার মতো নারীরাও একদিন মানুষ হয়ে যায়।
অরণ্য, কেউ না জানুক অন্তর্ত আমিতো জানি,
এই শহরের মায়াবী আচঁলের আড়ালে কত মা কাঁদে
কত নারী,পুরুষ গোঁপনে সন্ত্রাণহারা কান্না বিলায়
সে গোপন জল গড়িয়ে যায় বানভাসি মানুষের দ্বারে
আত্রাই ,যমুনা, মেঘনা পদ্মার উত্তাল সর্বগ্রাসী ঢেউ
কত মানুষকে আবার নতুন করে ক্ষুর্ধাত করে দেয়।
তাই বুঝতে পারি তোমাকে কাছে পাওয়ার যে সুখ
তা হয়ত এই পৃথিবীর আর কোনখানেতে নাই
আর তোমার ভালবাসায় হারানো সে দিনগুলিকে
আমি মরু বাগানের ফোটা শুষ্ক ফুলে ফুলদানি সাজাই।
মরণত্তোর পুরুষ্কার
অরণ্য আজ কিছু লিখতে পারছি না,
লেখা আসে না আমার কলমের নিবে
সব কালি নিসঙ্গ ব্যাথায় শুন্য হয়ে যায়।
পচিঁশটা বছর আমি নিসঙ্গতায় কাটিয়েছি
তবুও সে নিসঙ্গতা আমাকে পোড়ায় না
শরীরের কামনা বাসনার যাপিত বিলাস
কোন সময় আমাকে গ্রেফতার করে না
কখনোও মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে আসে না
তাই মৃত্যুর পর মানব আত্না জেগে উঠে
আর্তমানবতার ক্রদনে চিৎকার করে উঠে
সে ডাক দৈন্যদিন আমাকেই ডেকে যায়।
রাতের গলিতে পচে যাওয়া শিশুর লাশ
আমার চোখে বেদনার অশ্রুকে আনে না
পাঁপের সঙ্গমের খেলায় মেতে জন্মায় যে
কখনোও তাকে আমি মানুষ ভাবতে পারি না।
তাহলে কে মানুষ? প্রশ্ন করে আমার বিবেক
তার উত্তরের খোঁজও হয়ত কেউ জানে না।
ছুটে যাই ভাবনাহীণ এক মানুষের কাছে
সে মানুষও দেখি সঙ্গম ছাড়া কিছু বুঝে না।
তাই এখন আর আমার লেখা আসে না
আমার সব লেখা কোথায় যেন হারিয়ে যায় !
হারিয়ে যায় কোন নির্জন পাহাড়ী রাস্তায়
যেখানে মানুষ শুধু মানুষের শরীর খায়
রক্ত ,পাকস্থলি ,হৃৎপিন্ড চেটেপুটে গিলে খায়
তার রক্তচোষা ঠোট উষ্ণ চুম্বনে মিশে
আমার জিহ্বার ভীতর ঢুকিয়ে নিশব্দময়ী
আবেগ ঘননিঃশ্বাসে মরণত্তোর পুরুষ্কার চায়।
শ্রাবনের ডুঁকরে কাঁদা বৃষ্টি
আমাকে ভুলে গিয়ে যদি তুমি সুখী হও,
তবে যেন তাই কর তোমার জীবনে
কারন এ শহরের কোথায় মানুষ কাঁদে,
কোথায় অনাহারী প্রাণ ক্ষুধার যাতনায় মরে,
তা শুধুই আমার এই শহর জানে,
সে তুমি বুঝবে না আর কোনদিন,
কতবার বোঝাতে চেয়েছি তোমাকে,
কতবার কলম ধরেছি আমার আঙ্গুলের ফাঁকে,
কতবার মিছিল করতে নেমেছি শহরের রাজপথে,
কেউ সাড়া দেয় নি কখনোও আমার ডাকে,
শুধু রাত্রির নিয়ন আলোয় জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্ট, হালকা হলুদ রঙে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে শরীর,
যাতে আমার রুপবতী মিষ্টি গোলাপি ঠোটের স্পর্শ , মৃদ্যু কেঁপে প্রতিবাদ করে এই বর্বর বিশ্ব দ্বারে।
সেদিন তুমিও আমাকে ভুল বুঝলে,
নারীর কলঙ্কমুক্ত মনে দিলে পরকীয়ার অপবাদ,
যাকে মানতে পারে নি আমার আটপৌরে বয়স,
তাই ভুল করে বার বার ছুটে যাই আমি
আমার ছোট ঘরের কোনে পড়ে থাকা উজ্বল হাসি,
তোমার হাতে জড়িয়ে রাখা কোল বালিশের কাছে
সেও আমাকে ঘোর আবেগে তিরষ্কার করে
তার ক্রদনবিনীত বাচ্চাসুলভ আচরনের ভালোবাসা,
সে ফিরিয়ে নেয় শ্রাবনের ডুঁকরে কাঁদা বৃষ্টির মতো করে।
নগ্ন হয়ে উঠেছি দেয়ালের নীল খামে ।।
আমি নেশাতুর টাকার উগ্র গন্ধে চোখে মুখে ঝাপসা দেখি তখন যখন কংক্রিটের শহরে রাত্রি নামে।
প্রতিদিন ভুলে যাচ্ছি আমি
স্কুল-কলেজের পাঠ্যভরা বিদ্যে
ভুলে যাচ্ছি ন্যায় আর সত্যের ধর্ম।
কারণ আমি বড় পিপাসার্ত--
পাপের তৃষ্ণায় বুক ছটফট করে
গ্রাস করছি তাদেরকে নিজ হাতে যারা ন্যায়ের সংগ্রামে জীবন গড়ে।
উষ্ণ আমার রক্তের জালিকা
বিদঘুটে খুন করার নেশা মতিষ্কে সর্বক্ষণ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আমাকে।
আমি দুঃখিত পবিত্র মানুষের কাছে
ইচ্ছে যতটুকুর ততটুকু দুঃখবোধ কবেই উৎসর্গ করেছি ব্যর্থ রাষ্ট্রে।
আমি ত বাঁচতে চেয়েছি স্বাধীন, আর থাকতে চেয়েছি স্বাধীনভাবে কিন্তু কোথাও তা কি আমি পেয়েছি?
দেখিনি স্বাধীনতা জন্মের বীজমন্ত্রে
নেই তা নেই। যা শিখেছি আমি তা হারিয়ে গেছে খুবলানো দাগে। মাটিতে পচে হয়েছে গলিত লাশ।
তাই ভুলে যাচ্ছি বিচারের সভ্যতায় নিভৃতে কাঁদা অসহায়ত্বের প্রতিবাদ।
দেখে যাচ্ছি রক্তাত্ব লাল ফিতে বাঁধা মায়ের কোলের শিশুর যন্ত্রণার প্রাণ। তৃপ্তি নেয় ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর পূর্ণ স্বাদ।
বিক্রি হয়ে গেছি সাদা কাগজের দামে। নগ্ন হয়ে উঠেছি দেয়ালের নীল খামে।
রাষ্ট্র তুমি ভুলে যাও এবার আমাকে। আমি খুনি হব। গিলে খাব মানুষ।
আর আমাকে খুনি হতে দাও, রাষ্ট্রে!
Comments
Post a Comment