হরিদাস পালের কবিতা



কবি হরিদাস পাল কোচবিহারের তুফানগঞ্জে থাকেন। সঙ্গীত চর্চা থেকে এসেছেন কবিতা লেখায়। পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন । তাঁর কবিতায় জীবনের অভিজ্ঞতা এবং জীবন দর্শন থেকে নেওয়া স্বর শুনতে পাওয়া যায় ।স্পষ্ট জড়তাহীন উচ্চারণ । 
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা । আশা করি পাঠক মননে কম্পন তুলবে। 



( ৪) পরিবার   

এই বুঝি তোমার পরিবার? 
এতো ফুটোফাটা! পারবে তো বন্ধ করতে
তোমার ওই একা হাতে?  
সে সময় হারাবার কিছুই ছিল না, এখন আছে। 
কেউ কেউ বলছে, " আছে, নিজের পরিবার 
তো ! "   
তবে একা কেন ?  সব্বাইকে পাশে আনো, 
কথা বলো, শোন ; নইলে দেখবে, কত মূল্যের
মূল্য সরে পড়ছে, হয়তো স্বয়ং সম্পূর্ণ শরীরটাও
ক্ষয়ে গেছে দিন শেষ হবার আগে। 

( ৫) চাল

কথা হয়ে গেছে, ভিতরে ভিতরে। 

মিথ্যেয় কৃপণতা নয়, যত পার... ;
পোশাক ঠিক রেখো, যে সময়ে বসে আছ। 

উপর থেকে যা দেখছ, সব মিথ্যে। 
মিথ্যে আমার নিষ্পাপ চোখের চাওয়া। 
এখানেও একটা চাল থাকে, বলতে পার
দাবা, আমি ওস্তাদ। 
এভাবেই এতদূর, সত্য সুন্দরে ঘোরাফেরা, 
সুস্থ মন, তোমাদের ভালবাসা। 

পরে এসে চালটা শিখে যেও, ভবিষ্যতে 
কাজে আসতে পারে।     

( ৬) অস্তিত্ব

লড়াই, তোমার আমার লড়াই ছিল, আছে, 
থাকবে ; নইলে একে অপরের অস্তিত্বই মুছে
যাবে। 
এই অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রাখবার জন্যই যে
শুধু লড়াই, তা নয় ; দেশকে সমাজকে কে
কতখানি দিতে পারবে, সেই কথার 
ফুলঝুরিতে লড়াই, শক্তির লড়াই। 
দু ' জনের একজন হেরে গেলেও থেমে যাবে
না, অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে যে রাখতেই হবে।  
সবার চিন্তা ভাবনার মূলকেন্দ্র বিন্দু কিন্তু ওই
একটাই কথার নিপুণ কৌশলে নাগরিকদের
চেতনাবোধে ফিরিয়ে আনা, ইতিহাসের সুন্দরে
নিজদের তালিকাভুক্ত করা। 
আমরা কি সে তালিকায় আদৌ পড়ব? 
যথেষ্ট সন্দেহ! ক ' জনের কাছেই বা পৌঁছে
দিয়েছি ভাতগন্ধ? 
সব আদর্শে আদর্শ থাকে না ; চলো, 
আপাতত চায়ের টেবিলে, লড়াই পরে।  

( ৭ ) মানুষের পাশে আছি, থাকবো

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলা, বোঝা, জানা
কর্তব্য বলে মনে করি। 
তুমি একটু অন্যরকম, আমার মতোই বলো, 
সময়ে সব ভুলে ঘুরে দাঁড়াও। 
তোমার ওই মনোভাব মেনে নিতে পারি না
বলেই সরে এলাম। 

আমি আমার মতো চলতে শুরু করতেই বেঁকে
বসলে, গায়ে দিলে বিপরীত বং। 
মেখেও শান্ত নও, কী সব সুর চড়িয়ে করছ
উত্ত্যক্ত। 
আমি ঝিম হয়ে বসে বসে তোমাকে শুনছি। 
তবু বলছি, মানুষের পাশে আছি, থাকব। 
তুমি শুধু দূর থেকে দেখবে বানভাসি বন্যা, 
এগিয়ে যাবে না।     

( ৮) পোকা ও মানবধর্ম
মশা মাছি নয়, পোকা, একটা পোকা ; তবে
মাছির মতো অনেকটা। 
ভারি চঞ্চল, উদলা শরীরে দারুণ উৎপাত ! 
ব্যাটাকে খতম করতে চাই , পারি না। 
এতো চালাক, আগেই বুঝে ফেলে আঘাত কোন
দিক থেকে। 
নিজের বীরত্বেকে গালিগালাজ করি, শেষে
কিনা  একটা পোকার কাছে হার মানি ! 
না না, এ হার মেনে নেব না, ব্যাটাকে খতম করা 
চাই চাই -ই ; মনোসংযোগের পতন ঘটাল ? 
দাঁড়া ! কী সুন্দর ছিলাম কবির ভাবনায় ! 
সে ভাবনা কি আর আসে, একবার চলে গেলে? 
না না, ব্যাটাকে শেষ করেই ছাড়ব। 
মনে মনে আবার ভাবি, পোকা তো ! 
সত্যিই যদি বুঝত কবির আলো উৎস, তবে
নিশ্চয় ভাবত। 
না না, এই সাধারণ ভুলের জন্য হত্যা ! 
হত্যাই যদি করি,  দুইয়ের পার্থক্য কী? 
ওকে বরং ছেড়ে দেওয়াই মানবধর্ম।   

Comments

  1. ভালো লাগলো কবিতা গুলি।সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোলে লেখা পাঠানোর আহ্বান রইল ।

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগলো হরিদাস বাবুর কবিতা ..I জীবনকে মন্থন করতে শিখলে এরকম কবিতা লেখা যায় কবিকে ধন্যবাদ ...I

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা