শ্রেয়ণের কবিতা


পেশায় সাংবাদিক। 'নিবিড়' ই-পত্রিকার সম্পাদক এবং অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।  পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ।  পরিচিতি এইটুকু বললেই অনেকটা বলা হয়ে যায় । শ্রেয়ণ বরাবর ই একটু ভিন্ন ঘরানার কবিতা লিখতে অভ্যস্ত । আজ রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা পাঠকের দরবারে ।



 1: প্রজাপতি


আমার বিছানায় যতটুকু জায়গা খালি আছে,
সেখানে একটা প্রজাপতি অনায়াসে
ধরে যেতে পারে।
আমি ঠিক করেছি,
এমন প্রজাপতিকেই ডেকে আনব,
যার পাখনাগুলো হবে প্লাস্টিকের তৈরি,
তার মুখগহ্বর দিয়ে ঢুকে
সোজা মনের অবচেতন স্তরে পৌছনো যাবে।

সেই রকম একটা পতঙ্গ
খুঁজে বার করেছিল আমার এক বন্ধু।
ওই প্রজাপতির বড়ো আত্মহত্যার দিকে ঝোঁক।
আমি খুব মজা পেলাম।
তার ডানার চারটে কোণ
সেলাই করে আটকে দিলাম
আমার বিছানার গদিতে।

সে ওই অবস্থায় ছটফট করে,
আমি চেয়ারে বসে
তার ওপর পা দু'খানা তুলে চা খাই।



2:  মহাশূন্যের ছিদ্র


তিনের থেকে পাঁচ বাদ দিলে
কত অবশিষ্ট থাকে,
তার ওপর নির্ভর করছে অনেকগুলো সম্পর্ক।

একজন মানুষের সঙ্গে
আরও অনেক মানুষ যেভাবে জুড়ে থাকে,
তাদের সঙ্গে জুড়ে গাছপালা, গ্রহ, নক্ষত্র ---
সবকিছু চুষে খাচ্ছে এক ব্ল্যাকহোল।
এটা সব থেকে বড়ো মজার ব্যাপার।

কিছুই দেখতে পাওনা তোমরা,
এমনকি মহাশূন্যের ছিদ্রগুলোও
তোমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।
অবশ্য তোমাদের কীভাবে দোষ দিই?

আমার রক্তে যা কিছু গরম,
তা আসলে ভীষণ ঠান্ডারই এক প্রকাশ,
আমি সেটা বুঝতে শিখেছি এখন,
সাপের মতো ঠান্ডা শরীর নিয়ে
চলে ফিরে বেরানো
অভ্যেস করে ফেলেছি।

3: সমুদ্রের গভীরে


আমার শরীরে মাছের মতো
বায়ুথলি রয়েছে জন্ম থেকে।
আজও সুযোগ পেলে
সমুদ্রের গভীরে চলে যাই,
হাতরে বেড়াই
মৃত নাবিক আর ক্যাপটেনদের জিনিসপত্র --
কম্পাস, দূরবিন আর খাসা মদের বোতল।

মহাসমুদ্রের তলায় একটা মরুভূমি আছে,
আমি দেখেছি।
সেখানে আজও প্রাচীন দেবদেবীদের
বন্দি রাখা হয়েছে
এক ভয়ংকর কারাগারে।
বিশাল দানবরা তাদের অত্যাচার করে,
ধর্ষণ করে,
কিন্তু মেরে ফেলতে পারে না।

আমি লুকিয়ে সব দেখি,
এবং মজা পাই।


4 : চাঁদের বুড়ি


ঘোর অমবস্যায় গিয়েছিলাম
চাঁদের বুড়ির কাছে,
সেই রাতে চাঁদের ওপর বিশাল চাদর
ঢেকে রেখেছিল সে।
ওই কাপড়ে আমি ঘাম মুছেছি,
তাতে বুড়ি রেগে গেল।
অবশ্য তার জন্য খানিকটা
এলএসডি নিয়ে গিয়েছিলাম,
ফলে খুব বেশি রাগ দেখালো না।

বুড়ির প্রেমিক তাকে ছেড়ে
কোন সুদূর নীহারিকাপুঞ্জে লুকিয়ে পড়েছে,
আর বুড়ি অভিমান করে
আজও তাকে খুঁজতে যায়নি।
সে লক্ষ কোটি বছর আগের কথা,
বুড়ি তখন কচি মেয়ে।
এসব কথা সে আমায় বলছিল।
অভিমান বড়ো মধুর, যন্ত্রণাদায়কও বটে।

কুঁজো বুড়ি চায় সব মানুষকে
ধ্বংস করে ফেলতে।
পৃথিবীতে কোনো মানুষ থাকবে না,
শুধু মৃতদেহ পড়ে থাকবে,
এরকমই আশা নিয়ে সে
আপন মনে চরকা বোনে,
আর জীবিত মানুষদের খিস্তি দেয়।

5 : মৃত ছায়াপথ


মৃত বান্ধবীদের ফিরিয়ে আনার
সময় হয়েছে এবার,
পুজোর দিনগুলোয় তাদের নিয়ে
দূর কোনো নির্জন জায়গায় চলে যাব।

পৃথিবীর তো যথেষ্ঠই অভিজ্ঞতা হল,
তবুও সে জানল না,
প্রিয়জনকে হারালে কী রকম
তাজা ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়।

গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে নিলে
পচন শুরু হয় তার,
সমস্ত ছায়াপথ গিয়ে মেশে
ওই পচা ফুলগুলোর বৃন্তে।
আমি তাই ছায়াপথগুলোকে ঘৃণা করি,
বরং সেগুলো মরে গেলে
আরও বেশি মনোরম হয়ে ওঠে।

মৃত ছায়াপথে ঘুরে বেড়ায়
আমার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবীরা৷
এবার তাদের ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে।



Comments

  1. বাহ্ ।
    দারুণ লাগলো আপাত বিরোধগুলো ।

    ReplyDelete
  2. অন্যমাত্রা অন্য স্বাদে ভরা, খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  3. প্রথম কবিতাটা বিডিএসেম

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা