আমিনুল ইসলামের কবিতা

মুর্শিদাবাদের তরুণ কবি আমিনুল ইসলাম  নিজস্ব ভাষা শৈলী খুঁজে নিতে চেষ্টা করছেন । আমাদের জিরো বাউন্ডারি  whatsApp group  এ ব্যাপারে তাঁকে অনেকটা support দিয়েছে। তরুণ এই কবি  ভুবনডাঙা  ম্যাগাজিনের সম্পাদক ।
আজ রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা যা ভিন্নধর্মী । পাঠকের ভালো লাগবে আশা করি ।


১:নিকোটিন ও রাখাল

লক স্ক্রীনে বসন্ত এসে গেলেও হোম ওয়ালে ফুটে উঠছে দাবদাহ, এ এক অপরূপ কারুকাজ
নিমেষেই অটো অ্যাডজাস্টমেন্টে গোধূলি ডেকে নিলে মাঠ থেকে ফিরবে রাখাল
তোমার চুল এইমাত্র একঝাঁক বৃষ্টি জানান দিলে আনন্দে জ্বলে ওঠে ইনবক্স
ভয়েস পারাপারে প্রজাপতি রং ওড়নার সহবাসে নীরব মুঠো ফোন
তৎক্ষণাৎ ভিজুয়্যাল হয়ে উঠছে লিপস্টিকের কারসাজি
আর অনবদ্য পুড়ছে প্রগ্রেসিভ ওয়ালপেপার-

২:  অধুনান্তিক ওয়েদার রিপোর্ট

এল.ই.ডি ফুল ফুটে উঠলেই উন্মাদনায় ভাসছে শহর
তোমার-আমার, সবার প্রিয় কলকাতা।
কিছু জোনাকির স্ক্রীনশট পাঠানো হলো জানালায়
ড্রপবক্সে এযাবৎ আপডেট সংগ্রহে গোলাপের পাপড়ি গুলিবিদ্ধ হলে উপসি সামনের করুন টেবিল
কফি হাউসের ওয়েটারও জানে তোমার ডিয়োড্রেনটির পরিধি-
এখন গেম প্লাজায় টেবিল-টেনিসে মনসংযোগ স্থাপন করলে
তুমি পকেটে বাজিয়ে দাও ভাইব্রেশন
তড়িঘড়ি উঠে পড়ি সিটবেল্ট আটকে
এখন একটি ওয়েব ধরে পিছুপিছু অক্ষর সাজিয়ে দিচ্ছি তোমার নেটওয়ার্কে


৩: আপগ্রেড প্রেম ও ব্যাকডেটেড প্রেমিক

অন্ধকার ‌স্ক্রল করে ঘুম নেমে আসে এফ.বি'র পাতায়
সাইলেন্ট মোডে চলে যায় সভ‌্যতা
পেখম  ইন্সটল করে নিলে ময়ুর, বৃষ্টির নোটিফিকেশন
স্ক্রিনে-
তোমার আপগ্রেড ঘুমের শস্যক্ষেতে যে মজুরটি শ্রম দেয় সে এখনো স্মার্ট ডিভাইসে সড়গড় হয়ে উঠতে না পারায়
জিন্সে ঢুকে পড়ে নরম বিশ্বাস
মহীরূহ নেটওয়ার্কিং ভাসিয়ে দেয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস
স্ন্যাপশর্টিতে প্রজাপতি দখল নিলে প্রেমিকা উড়ন্ত পাখি হয়ে যাবে
এই রুটের সমস্ত লাইন ব্যস্ত থাকায় ঘুর পথে বার্তা পৌঁছে যায় তোমার উইন্ডোজে

৪: মালতীর অন্দরমহল

তোমাকে উস্কোখুস্কো করে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে নিয়ে পাখি উড়ে গেল।
বুকের ভেতর এক আকাশ মেঘ ঢুকে বৃষ্টি হল মুষলধারায়,
জানালার গ্রীলের নক্সাগুলো কতবার ভেবেছে তোমাকে একবার ছুঁয়ে আসবে
তারাও কংক্রিটে বাঁধা, পাখিও খাঁচায় -
ডানা ঝাপটে ঝাপটে পালক খসে পড়ে
ছাড়া পেলে একবার অন্ততঃ দেখবে ডানা মেলে মুক্তির মন্ত্র পাঠে বাতাস কতটা ফন্দিবাজ
অতর্কিতে মরু প্রদেশ থেকে ঢুকে পড়ে তোমার ডেস্কটপে-
আদিগন্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে যায় চোখের সীমানা
আর অন্যমনস্কতায় ভিজে যায় পায়ের আলপনা
বুকের জৈব যন্ত্রাংশগুলো বিকল হয়ে পড়ার প্রান্তে এসেও ইচ্ছেরা দাঁড়িয়ে থাকে খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়ার উদ্ধত সম্ভাবনায়-

৫: চোরাবালি

ব্যানারটির পিছন দিকে ঠিক কী রং আছে, সেটা হয়তো জানার প্রয়োজন নেই
আসলে কিছুটা না জানাই ভালো
তারপর, শরীর মহাস্রোতে ভাসমান আগ্নেয়গিরি লেখা হলে
পরস্পর তেঁতুল পাতায় ঘুমিয়ে পড়ে আবহ সঙ্গীত
শুনসান গৃহকোণে বধূ সেজে রাখে চিত্রলেখা
শরীরের দূরত্বে অবস্থান রত সৈনিক ঠোঁট মেপে নিচ্ছিল মায়াবী মাদুলি, কিছু আতর আর পান পাতার খয়েরী স্বপ্ন
তোমার সংলাপে লেখা হয় প্রত্ন জলস্রোত আর একটি অন্তসলীলা চোরাবালি -


৬: উৎসমুখ

কার্নিশে ঝুলে পড়েছে রাতের নক্ষত্র, গহীন অন্ধকার খুলে ফেলছে মেঘ
শরীরে লুকোনো আগ্নেয়গিরি মেলে ধরে ফুটন্ত গোলাপের
যৌনতা
বিড়ির সুখ-টানে চেয়ে থাকে যুবতী আলো
ঘুঙুরের তৈলাক্ত স্বপ্নের রস ছাপিয়ে দু এক ফোঁটা অন্তর্বাসে ছায়া ফেললে একটি অপটিক্যাল জীভ খেলা করে নাগরদোলায়
শুকনো তেজপাতার কন্ঠে জেনে নিও প্রলাপের জন্ম যন্ত্রণা
কঁকিয়ে কঁকিয়ে বেঁচে থাকার আঁতুর সম্ভব
একটি বিড়ি পুড়িয়ে নিয়ে যায় বয়সের ছাপাখানা
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য নিষিদ্ধবেড়াল
চোখের দলা পাকিয়ে ছোট্ট শিশুটির আনন্দ প্রকল্পে বাজিয়ে দাও যন্ত্রণার বাঁশি
এসো ঈশ্বর জাগাও ভুতুড়ে পাততাড়ি সমুহ সংসারের ক্ষয়িষ্ণু মেরুদণ্ডের হিমাঙ্কে নেমে আসা পতনের উৎসমুখ-

৭: অভিব্যক্তি

সন্ধ্যার গণতান্ত্রিক আলোগুলো জ্বলে উঠতেই
চারিদিকে ফোটে রঙের মহড়া
ঠোঁটের খুনসুটি সামাল দিতে প্রস্ত্তত প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট
হ্যালোজেন, ভ্যেপার, এল.ই.ডি. প্রভৃতি বর্ণময়তায় পথ দেখতে দেখতে
ওঁরাও কখন অজান্তেই মানুষ হয়ে উঠেছে
ওড়নার অন্তরে ফুরফুরে হাওয়ার বসবাস
বসত ও বাসস্থানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাষ্ট্রিয় চোখ ঘুমিয়ে গেলে-
বেমালুম উত্তরণের ঝুঁকি নিয়ে একদল শূন্যতা,
বিরোধী আসন সংগ্রহে গড়ে তোলা বয়কটের কোনো সমাজতান্ত্রিক প্রতিবিম্ব না থাকায় কিছু আলোর আত্মহননে জন্ম হয় প্রগাঢ় অন্ধকার
নির্বাসিত কমিউনে ফুটেছে জরায়ুর পচন
মহা কান্নার অনন্ত অশ্বারোহে ছুটছে খুন হতে থাকা মনুষত্বের মায়াবী জল্পনা
অথচ, আলপনায় এঁকে ফেলছো প্রতিটি পুজোর নির্ঘণ্ট



Comments

  1. খুব ঝরঝরে নতুন এক ভাষা। সত্যিই প্রশংসনীয়।

    ReplyDelete
  2. শব্দের ব্যবহার সুন্দর। ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  3. ভালো লাগলো।শব্দের ঝঙ্কারে মনে অনুরণন তুললো। শুভেচ্ছা রইলো।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা