কার্তিক ঢকের কবিতা


কার্তিক ঢক থাকেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে। পেশায় ক্ষৌরকার। প্রতিদিন তাঁর জীবন যুদ্ধ ।তবু কবিতার প্রতি দুরন্ত টান তাঁকে আবিষ্ট করে রাখে । তিনি কবিতাকে করতে চান সময়ের উপযোগী  বা সময় উত্তীর্ণ । তাঁকে নিয়ে লেখালিখি হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকায় । তাঁর পেশার জায়গা ঠিক রেখে কবিতা চর্চা যে কত কঠিন  এবং সেই কঠিনের পরীক্ষায় কবি কার্তিক ঢক উত্তীর্ণ । তাই  বিষ্ণুপুরে তাঁর সেলুনটি হয়ে উঠেছে কবিদের মিলন ক্ষেত্র । কবিতা পাক্ষিক সহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক পত্রিকায় তিনি দীর্ঘদিন লিখে চলেছেন ।  আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা যা তাঁর নিজস্ব ঘরানার ।



1: প্রকৃতি

কোমরের দ্রাঘিমায় আটকে আছে
তীব্র রোদে পোড়া চশমার লেন্স-
নাভিকুন্ডের পিচ্ছিল পথ বেয়ে
নেমে যেতে চায় স্নানের ঘাটে...

অপরাধ বোধ নেই কোনো-
শরীরের অবগাহন শরীরই তো দিতে পারে।
আমি তো পুরুষ
আর তুমি, পরমা প্রকৃতি


2 : কাসুন্দি


মিথুনলগ্নে আধ-খোলা চাঁদ দেখা দিলে
নিউটন জেগে ওঠে,বিলম্বিত আইন্সটাইন ও...

প্রেম-টেম ঝরা-পাতার কাসুন্দি
রতি-গন্ধেই মোমাছির তান।

বায়স্কোপ বায়স্কোপ খেলা আর নেই।
ন্যাকু-ঘুম ভেঙে ফেললে দেখবে--
ষোলকলার ইশারা  চৌষট্টিকলার হাতকে...


3 : এলোমেলো কোরাস


বাগান বিরক্ত!
তাই, গাছেদের নিশ্বাস
কিনে খেতে হয় তোমাকে...

আসলে ভালোবাসতে ভুলে গেছো!
তির্যক হাওয়া তাই তোমাকেই বিদ্ধ করে।

সপ্তমে গায়ছে  এলোমেলো গানের কোরাস।
আলোকের বিচ্ছুরণে পালকের স্পর্শ আছে।
তোমার আঙ্গুল জুড়ে বিছুটির রং...

জল দাও গাছটির ধূলোট বাকলে
দীর্ঘশ্বাস খুলে ফেলে
হেসে উঠবে সেও  তোমাকে  জড়িয়ে ....


4 : ত্রিকোণ সরলরেখা
   
অক্ষর বিহীন শব্দ সাজাচ্ছো তুমি
দু-হাতের দশ-আঙুল বর্ণমালায়-

আয়তক্ষেত্রটি বারুদ গন্ধ মাখছে শরীর-মনে
আসমানি রং ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে
সবুজ গালিচায়!

একটি তিতির ডাকছে ব্রহ্মনাদ উজাড় করে
ত্রিকোণ সরলরেখাটি বক্রাকারে
হাওয়ার সাথে খেলে!

ঘুম থেকে জেগে ওটা স্বপ্নগুলি
চোখে-মুখে জল নিয়ে  আয়না দেখবে!
নাকি টুথব্রাশ খুঁজবে?


5 : গলনাঙ্কের নির্যাস

বাতিস্তম্ভের নিওন আলো
শীত-রাতটিকে ফায়ারপ্লেস উপহার
দিতে পারেনি।

আমার বুকপকেটে অ-শরীর ভালোবাসার
বাহুল্য রেখা নেই।
তবু মোম জ্বলছে খামোখা
বরফের পাশে--

পড়ে আছে গলনাঙ্কের টোকো-নির্যাস
আর মাছিদের ডানা-বিলাস শব্দ!

হিমাঙ্কের সিড়ি ভেঙে আরো নীচে নেমে গেলে
তোমার নাম রাখবো অহল্যা...


6 : ধ্রুপদী মুদ্রা


শরীরী গন্ধে বাঘ জেগে উঠলে
ঘুমজলের অস্থির বুদবুদ গুলি
বিছানার রানওয়ে ধ'রে ছুটে...

অন্য বাগানে তন্বী  আলোটি
বেডকভারে ছড়িয়ে আছে এম্বোডারি হ'য়ে...

অন্ধকার হাওয়াকে ভেদ করে
একটি তে-চোখা মাছ  তীক্ষ্ণ  জেগে আছে-
ডিসপ্লে জুড়ে বকুলফুলটির ও
 নিওন-শরীরে জ্বর...

রাত ব'য়ে চলেছে ঘুমের জানালা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
একটি কাগুজে বাঘ লাল অক্ষর সাজাচ্ছে
নিজের আঁচড়ে-কামড়ে...

আলোটির শরীরেও কষ্টের ধ্রুপদী মুদ্রা!

Comments

  1. প্রিয় কবির জন্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
    প্রতিটি কবিতায় অনন্য শব্দ চয়ন, ও শব্দ বন্ধ ।

    ReplyDelete
  2. অসাধারণ বললেও কম মুগ্ধ হলাম...

    ReplyDelete
  3. কী বলে বাহবা দেবো ওনাকে,ভাষা নেই।একগাদা আশা নিয়ে এই শব্দকথার যাদুকরকে হাজারো কূর্নিশ!ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।(গৌতম বাড়ই)

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা