প্রসেনজিৎ আচার্যর কবিতা

প্রসেনজিৎ আচার্য
মুর্শিদাবাদের গোকর্ণ গ্রামে থাকেন।  বর্তমানে কাণ্ডারী সাহিত্য পত্রিকি , নীল দিগন্তের নীল পালক , স্বপ্নকথা সাহিত্য পত্রিকা অঙ্কুরসাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন।  নতুন লিখতে আসা তরুণ মুখ  , প্রসেনজিৎ আচার্যর কবিতায় ধরা পড়ে শাশ্বত চেতনার ভাব ও প্রকাশ । আজ রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা


 1: বারাঙ্গনা
       

বারাঙ্গনা রাত হাতছানি ডাকে 
               চীবরহীন বুক
আর বাঁকা সুরুগলি বেয়ে পথ হারায়
যৌবন পালিত হয় নিঝুম রাতে
কার্তিকের শিশির স্নাত ঘাস অশ্রু মাখে
পথচলতি স্ট্রিট লাইটে হোঁচোট খায়
ভুলে যায় পথ চলতে নিঃসঙ্গ রাত
তখন যায় উড়ে পেঁচার বেশে
হয়তো বা ইঁদুরের রূপ ধরে
               কতবার মেঠোধুল মেখে
ক্ষতবুকে নিমেষে
হাতধরে স্ট্রিটলাইটের হলুদ আলোয়
পারফিউমের রুমালী মেয়ে
       আবছা বুক চীবরহীন
সরল রাত তখন বারাঙ্গনা সাজে

       
2 : চাঁদ কথা

চাঁদের জৌলুস শুঁষেছে মাছের শরীরটা,
যেমন কালো রাত্রি হয়েছে পুকুরের জল৷
আর যত শ্যাওলা - মন - দূষণ গেছে
আমার অবয়বে মিশে,
ঘোর একটা রাত্রি শীতল পুকুরে পরিণত ;
মাধ্যাকর্ষণে  মুখ থুবরে পড়ছে সাজানো হাড়গোর!
নিভে যাওয়া দিনের শেষে চাঁদ এসেছিল ,
এসেছিল যৌবনের ডালি নিয়ে ;ভরপুর আশা তার ,
আশা তার ;কে দিল ভেঙে জলের ভিতর?
বাঁকা মাকুর মতো বিদ্যুৎ খেলায় যেমন,
আমারও সংযোগ বিচ্ছিন্ন প্রেম অপ্রেম খেলাঘর !
ভরপুর আশা মেখলার ছিন্ন দ্রাঘিমার অবস্থানে— তখন ,আমি সর্বশান্ত চাঁদের গভীরে কলঙ্ক রেখা....
গোপনে সণ্চারিত প্রেম বাঁধভাঙা পূর্ণিমা ডাকে৷

             
3 : দেখুন আমাকে

ক্যামেরার চুম্বনে আপডেট ফেসবুকে,
ফেষ্টুন ব্যানারের ভিড়ে পারদের ঊর্দ্ধগমন!
এই যে এখানে লাইক করো ,
এখনো শ পাঁচেক হল না তো!
ফানুস আপডেট অন্ধকারেই;
দিনকে বাছে না তো ৷
রাত তো চাঁদেরই চারণভূমি
আপডেট লাগে না তো৷


 4 : ইতিকথা


সবুজে জড়ানো ছায়ায় দেখেছি
                পাদমূলে এসে ময়নার সুরে সরু বীথি
ওড়নার ঘুম ভিজে যায় প্রাত্যহিক আকর্ষণে
নিঝুম নীরবতার কথাবলে শ্যামার ডানা
বুকের শ্বাস চড়ুইএর বেশে বিষণ্ণতা ভাঙে
ঝাঁজালো রোদ্দুরের হলুদ বিষণ্ণতা মূর্ছা গেছে
                নুপূরের ঘায়ে কতদিন আগে সবুজের বনে
পড়ে থাকা বটের ফল জানিয়ে যায় ইন্দ্রলোকের
               ক্ষত ইতিহাস ইরার বিস্রস্ত আঁচোলের ঘ্রাণ
   লাল বিকৃত বটের ফল
শ্যামল ছায়ার নিচে শুয়ে থাকে
এমন কত দগ্ধ ইতিকথা....

 
5 : ধর্মযুদ্ধ


শুয়েছি সঙ্গোপনে সঙ্গে নিয়ে তোমাকে,
দেখা হয়নি মুখ কারুকার্যের কোলাহলে!
বিরামহীন ব্যাথা নিয়ে লাবন্য ভিড়েছে ঘাসে,
যত তরঙ্গ উদ্গিরণ করি ভাস্কর্যে; আর সজল মেঘ...
বিদ্যুৎ খেলেছে ব্যাধির ওপর !নিমজ্জমান শঙ্কু৷
শণিতের বিক্রম শান্ত হলে ঘুম আসে পাশ ফিরে ,
মুখে মাখা থাকে বিবর্ণ প্রলাপ, প্রতিশ্রুতির উপোস!
কলিঙ্গ জয় করে বিকেলে বৌদ্ধ সম্মুখে করুক্ষেত্র৷
পতনশীলবস্তু ক্রমাগত ওপরে ওঠে মুখ দেখে পুকুরে
দেহের মলিনতা সঙ্গে করে ধর্মযুদ্ধে যাই হাত ধরে৷

               

Comments

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা