পৃথা চ্যাটার্জির কবিতা
পৈত্রিক বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদে।পড়াশোনা লালবাগ/ বহরমপুরে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় মাস্টার্স । কবিতা পাক্ষিক সহ একাধিক পত্রিকায় ইতিমধ্যেই তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে । কাব্যের সহজতা , সরলতাও বলা যেতে পারে এবং সরাসরি প্রকাশ করা - এই দুটো কবি পৃথা চ্যাটার্জির লেখনীর বৈশিষ্ট্য । শব্দের সহজতার মধ্যে দিয়ে প্রবল অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম কবি। তাঁর লেখা পাঠককে অন্যমনস্ক করে তোলে অনুভূতির ঘোরে । সহজ অথচ বেশ তীব্র । প্রেম তাঁর কবিতার অন্যতম উপাদান ।
আজ রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা । পাঠকের ভালো লাগবে আশা করি ।
1: বড্ড অদ্ভুত আবদার
তোমাকেই চাই।
কীভাবে তা জানা নেই ,সঠিকভাবে জানতে চাই না। অথচ পাওয়ার কী নিবিড় ইচ্ছে।
ভালোবাসো ? উত্তরে স্পষ্ট বলেছিলে' জানো না'।
নারী মানে নারীকে চাওয়া,
ভালোবাসা আসে নি কখনো।
তাহলে কী প্রেমহীন দেহ
আর অযাচিত মন
কী তীব্র ছিল সেই কথার দহন
বিশাল হৃদয় ছিল বিঁধেছিল
অনায়াসে বিষাক্ত তিরের ফলায়
এখনও জীবন জুড়ে হৃদয়ক্ষরণ।
2: তোমাকে সত্যিই যদি ভালোবেসে ফেলি
জীবনের নানা ছাঁদে বাঁধা সম্পর্ক সযত্নে থাক
কোনো অসম্ভব ভাবনা
কখনো ভাবিনি
অথচ আজকাল প্রায়ই মনে
হয়
আকাশের ছাত থেকে লাফিয়ে পড়ি
ভো কাট্টা ঘুড়িটা ধরার জন্য
অথচ লাফ তো দূর আগে ঘুড়ি ওড়ানোর কথা ভাবি নি গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে
ডুব সাঁতারে অনেকটা যেতে পারতাম একসময়
ছোটবেলার এক বন্ধু শিখিয়েছিল
একবার মাত্র আর কখনো
চেষ্টা করি নি
আমার কেমন যেন দম আটকে আসতো
রাস্তার মোড়ে ঝালমুড়ি কিনে খেতে দেখে শ্বশুর নিষেধ করেছিল
তারপর থেকে বাইরে বেরোলে আগে রাস্তার মোড়ে কিছু খেতাম
জীবনের সত্যিকারের ঘটনা একদিন গল্প হয়ে যায়
হয়তো এই সম্পর্কটাও
কিন্তু
কী করে বোঝাবো
এটা গল্প নয়
সত্যিই
তুমি কী খুব রাগ করবে
অথবা খুব নিষ্প্রাণ তাকিয়ে থাকবে কিছু বুঝতে না দিয়ে ...
3: প্রাণের উৎসব
আমার উৎসব হৃদয়ের কাছাকাছি এসে
ফিরে যায় দ্রাঘিমা রেখায়
শতাধিক ভাবনায়
শিশুমুখ আসে সারি সারি
ছেঁড়া পুতুলের
এলোমেলো চুল
অনাহারে
ফুটপাতে বিকৃত আদর
আমার শাসন চোখে চোখ রেখে
সে মুহূর্তে রেহাই শিশুর
অনেক আতুর কেন আসে
আমার আনন্দ পথে
পথরোধ করে
আনন্দের ভোজে আয়োজন তুচ্ছ হয় মনে হয়
সব ছেড়ে চলে যায়
উপবাসী দেশে...
পরমান্ন চাই না কখনো
পরান্নভোজীরা থাকো
শুষে নাও মজ্জারস
বেঁচে থাকো অর্কিডের মতো...
আমি চাই জীবনের আলো
সুস্থ বায়ু
প্রাণের স্পন্দন ...
4: সাঁকো
আমরা আজকাল সকালে আর একসাথে চা খাই না
অবসর নেই আজ কারো আর বিকেলে কফি বা একসাথে নৈশাহার
কতোদিন কোনো সিনেমা দেখি নি একসাথে
দরকারি কথা ছাড়া বলি না
কোনো অযাচিত কথা
খাপছাড়া উত্তর
দিই অথবা বিরক্তি
তবু একসাথে আছি...
একটা হেতু আছে...
একটা সেতু ...
আত্মজ
5: নৈশভোজের আসর
একটা নৈশভোজের আসরে
সবাই একসাথে জীবনের খোঁজে এসেছে
টেবিলে বসেছে অথচ খাচ্ছে না
খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে
কারণ খাওয়ার জন্যই আসেনি কেউই
এমনি করেই আজকাল উদ্দেশ্য
বিধেয় র মধ্যে থাকতে অস্বস্তি বোধ করে
কখনো বা হারিয়ে যায় সে
আমাদের শৈশব আর লুকোচুরি খেলা
আরো কতো নিজস্ব গন্ধ বিকেলে ফোটা লেবুফুলের গন্ধের মতো
আরো কতো কি...
তোমাকে হারাতে চাই না
আমার তো সঞ্জীবনী তুমি
তাই এত শব্দের মিছিল
তোমাকেই পেতে
চাইলে সত্যিই একটা
গোলটেবিল বৈঠক করে নেবো
কোনো নৈশভোজের আয়োজনে..
.
6 : নিঃশব্দে শব্দ ভাঙে
মাঝরাতে শব্দগুলো ভেঙে যায়
অস্থিমজ্জা শুষে নেয় কাব্যরস
শস্যহীন ন্যাড়া মাঠে কবিতার বীজ বোনে চাষী
স্বপ্ন সব এলোমেলো
মুক্তক ছন্দে নাকি ভরে যাবে
জীবনের সে কোনো খামার
পৃথিবীর অন্যপিঠে অন্য ছবি
কোনো কবি ভাঙা চাঁদ জুড়ে নিয়ে
লিখে চলে কাব্যগাথা
মধ্যবর্তী পথ খুঁজে চলা পরিচিত কিছু মুখ শব্দের মিছিলেহেঁটে যায়
মুক্ত করে দিই সব বাসনার পাখি
বৃষ্টিজলে ধুয়ে যায় কবিতার পাতা
পূবাকাশ রাঙা হয় নতুন কবিতা অনুরাগে
7 : নখাগ্রে রেখো কিছু বিষ
আগুনের পোশাকটা আবার পরবো ভাবছি
বহুদিন অব্যবহৃত ছিল
অনেক শৌখিন রূপটান তো হলো
গনগনে আঁচে সেঁকে নিই হাতের কঙ্কাল
দেহের খাঁজে ফরাসী সুগন্ধি আর নয়
প্রতিটি ভাঁজে নারীর গোপন অস্ত্র রাখা
ক্যাকটাস দিন এলে পাথর তো ছড়াতেই হবে
ভবিতব্যে
ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলা অভ্যাস ছিল না কোনোদিন
বার বার সুন্দর এসেছে প্রেমে
মেয়েবেলা কখনো বুঝি নি
অপরূপা না হয়েও সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছিল
মা কিছু গোপন কথা শিখিয়েছিল
ভুলে যাওয়া কোনো এক কিশোরী বিকেলে ...
চোখের আড়ালে থাক অযুত প্রপাত
নখাগ্রে রেখো কিছু বিষ
Comments
Post a Comment