চিরঞ্জিৎ বৈরাগীর কবিতা
জন্ম: ১৯৯১ সালের ১লা জুলাই, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার অন্তর্গত, যাদবপুর গ্ৰামের এক মধ্যবিত্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বাবা: শংকর বৈরাগী (পেশায় ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী)। মা: শান্তিলতা বৈরাগী(গৃহকর্মী)। দিদি: সোমা বৈরাগী(বিবাহিত)।
শিক্ষা: গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজ থেকে যথাক্রমে- বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক এম.এ (২০১৪) ও বি.এড (২০১৭) পাস। বর্তমানে বিভিন্ন (তপোবন,কাণ্ডারী,অঙ্কুর, প্রাঙ্গণ,কুসুম,নেট ফড়িং,ব্লাকহোল, মুক্তবীণা,বঙ্গময়ী,কবিগুরু,বিবর্তন, পোস্টম্যান,সূচনা ইত্যাদি) পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
আজ রইল কবির নানান ধরনের একগুচ্ছ কবিতা
১ : জীবনের চিলেকোঠা
জীবনের বহুরূপী পথ নদীর মতো বাঁক নেয় যখন-তখন,
হারানো সব স্মৃতি পথ আগলে বার বার তোলে গর্জন-
চতুর্বিধ হাহাকার আর মনুষ্যত্বহীনতার আয়োজন;
বর্বরতার হাতছানিতে পদে পদে বিপদের আহ্বান!
জরাজীর্ণ সমাজে, ঘন ঘন ছিঁচকাঁদুনে মনের বিচরণ,
অনাকাঙ্ক্ষিত চাওয়ার ছলনায় কাড়ছে বিবেক- জ্ঞান-
স্বার্থের কারণে দূর স্রোতে হারায় আপন-স্বজন,
চিরকালীন নিয়মে পড়ছে ভাটা, বাড়ছে দস্যু-দানবের পদচারণ;
সর্বসুখের চাহিদায় ফাইব-জি গতিতে বাড়ছে রিপুর গমন!
শেষসময় রাম-শ্যাম কেউ সাথে নয় করবে হরণ,
শতচেষ্টায় বাঁচিয়ে রাখ জীবন, হোক বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন-
শান্তির একটু ছোঁয়া তোমার ঐ চিলেকোঠা বড়োই আপন।
২ : এ শহরের নামকরা ধনী
ঠোঁটকাটা স্বভাব বিড়ালটি
মিছিলে হাঁটা তার বারন
চিকেন-মাটন কিংবা-
ওয়াইন সেবন ধর্মবিরোধী
পূর্ণাঙ্গ যৌবন একবার ইনোসেন্ট লাভে নাম লিখে ঠকেছে
ধরা পড়েছে কোমরে স্পন্ডলিসিস
সে এখন পেঁয়াজের ঢেঁকুর তোলে
ভাবে Identified আমিসখেকোর progeny
ব্লু ফিল্মে এক নম্বর কাস্টমার
পার্ক অথবা চিলেকোঠায় চলে নাম খোদাই
এ শহরের নামকরা
৩ : নেভার মিসটেক
গো গ্ৰাসে গেলা
রুই মাছের পেটি কিংবা খাসির চর্বি
বেশ পাকে পাকে ফ্যাটি অ্যাসিড
পনির চৌক চড়ল ভুঁড়ি
কাস্ট জেনারেল, এম. বি. বি.এস।
ফি, থাউজ্যান্ড। মেডিসিন, টু থাউজ্যন্ড। বডি রিলিফ!
ডেইলি রুটিং, নিয়ম সিরিয়াসলি
বেড রেস্ট তিন মাস..
নেভার মিসটেক।
৪ : ওয়েদার আপডেট
ইঞ্জিনভ্যান-
নালিকাটা মেশিন, হৃদপিন্ডকে কাটছে
এক একটি হাতির পা...
ভূমিকম্প-
সিসমোগ্ৰাফ চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে,
বুলবুল-
কাঁচের নলে ব্যারোমিটারের পারদ শূণ্য,
বৃষ্টি-
রেইনগজে মরচে পড়েছে,
ক্যাপসনে বাতিল এয়ার ইন্ডিয়া
বোয়িঙের বিভিন্ন সংখ্যা
ওয়েদার আপডেট!
৫: অপরাধ স্বীকার মায়ের
নতুন এসেছে পৃথিবীতে
পাঁচ-ছ'টি পেট
পৌষে জুবুথুবু
থাবা আঁকড়ে ধরে শুকনো নিপিলগুলোকে
ঘন ঘন জায়গার বদল
এক টুকরো রুটির দলা এগিয়ে আসে
ছোঁ মেরে তৃতীয় যুদ্ধ জয়
দেড়শোর অধিক লেগ স্পিড
বাচ্চাগুলি কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত
ভাগ্যের লেখায় অপরাধ স্বীকার মায়ের।
৬ : প্রমাণ পেয়েছি
ঠোঁটদুটি রা কাড়েনি
কত যুদ্ধ এসেছে দেশে
এখনও শেষ হয়নি
আমি শুধু পুরোনো হাড়গুলিকে...
জোড়া লাগাতে ব্যস্ত।
গাছের নরম শরীরে কান্নার পর কান্না
কোনো মতেই থামছে না
অনেক ভেবে একটি সবুজ পোশাক কিনেছি
আটকে রাখার হাজার চেষ্টা...
ব্যর্থ নয়...
প্রমাণ পেয়েছি।
৭: দেশপ্রেমিক?
আয়রনগুড়ো বাতাসে উড়ছে।
এলোমেলো লাশগুলি,
তাকে কেন্দ্র করে একশত পঁয়ত্রিশের ময়নাতদন্ত।
একদল পুলিশের সঙ্গে আর পি এফ,
বারো ঘন্টার রাত একপলকেই শেষ!
একঝাঁক চিল শকুনের মতো মানুষ
পূর্ব-পশ্চিমের স্থান নির্নয়ে ব্যস্ত।
উকিল অনেক আগেই কোর্টছাড়া
এখন বিচারসভা ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন বিচারক।
জনগনের প্রশ্নের সামনে দেশ...
দেশের ভালোবাসা...
দেশপ্রেমিক?
৮ : দুটি শালিক
শালিক দুটি, দুটি গাছে বসে আছে
হয়ত আমাকে ভালোবেসে-
উচ্চ রাগ কিংবা ঘরানার গান শোনাচ্ছে,
বিস্ময়ের কিনারা হারিয়ে গেছে!
হারমোনিয়ামের রাগগুলি রপ্ত করল কিভাবে?
তালগুলিও বা পেল কেমন ভাবে?
আবার বিপদের ভাষাও কিভাবে মুহূর্তে ভাসিয়ে দেয় সারা জগতে-
দিনে দিনে ওদের কেমন মানুষ মানুষ ঠেকছে!
সাংকেতিক ছেড়ে অন্য কোনো যান্ত্রিক ভাষা আবিষ্কার করলে কেমন হয়?
একটু সময় বই অসম্ভব তো নয়!
দেশে-সমাজে ওরা আর কত আত্মহত্যা করবে?
বিলুপ্তির খাতায় ওদের নাম লিখিও না সহজে!
ঠিক আমাদের মতো প্রজাতি, ওদের একটু বেশীই ভালোবাসি!
Comments
Post a Comment