অরণ্য রহমানের কবিতা


অরণ্য রহমান , জন্ম ১৯৭১ সালে মাণিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোলড়া গ্রামে ৷দৈনিক ইনকিলাবের নবাবগঞ্জস্থ মফস্বল সংবাদদাতা হিসাবে লেখালেখির জগতে পদার্পণ ৷ সাপ্তাহিক জীবনের আলো  সাপ্তাহিক সমতা , অনুক্ত সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার   সাহিত্য বিভাগে বহু সংখ্যক   গল্প কবিতা প্রকাশিত হয় ৷ রিয়াদ ডেইলির বাংলা বিভাগের সাহিত্যের পাতার নিয়মিত লেখক ৷৷প্রকাশিত হয় তিনটি উপন্যাস ৷ ১৯৯১ সালে জীবন জিবিকার জন্য প্রবাসী ৷বর্তমানে রিয়াদের একটি লিমিটেড কোম্পানির ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ।
আজ রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা

1: "কতো কি যে সয়ে যাই"


দুঃস্বপ্নের ধুঁয়াশায় রাতের কুহেলী ,
অনন্তে ডুবে থাকা থোকা  থোকা অগোছালো ইচ্ছে ৷
শেষ হয়েও অভুক্ত জেগে থাকে রাত ,
অলির গুঞ্জনে বিকশিত  হয়না কুঁড়ি ৷

এক সাগর কষ্টের  ঢেউ হঠাৎ আছড়ে পড়ে  মনের  অতলে ৷
জানালার গ্রিলে রাখা তোর নিঃসঙ্গ
আলিঙ্গনের হাত করে দেয়
একরাশ  উৎক্ষিপ্ত ভাবনা নেশাতুর ৷

 কতোবার তোকে মনে করি ,
কতোবার  বেঁধে নেই আলিঙ্গনে ৷
কতোবার মরে মরে বাঁচি ,
শুধু আমার কাঁধের  দুই ফেরেস্তা জানে ৷

তোর ফিরিয়ে দেয়া সোনার আংটি হারাবার যতো  ভয় ,
দুঃস্বপ্নে চমকে চমকে  উঠি ৷
সহস্রবার  সিক্ত হই চোখের জলে ,
দুর্ভাবনার বিষাক্ত ছোবলে স্বপ্ন ভাঙ্গে বিরান হয় পৃথিবী ৷

নিঃসঙ্গতা বাড়ে ফিকে হয় বিকেলের মুখ ,
কুয়াশার চাদরে মুড়ে  নিস্তব্ধ হয়  প্রকৃতি ৷
তোর কপোলের রক্তিম টিপ  স্পর্শের আকুলতা জড়ায় ৷
গভীর ভাবনায় একান্তে ,
নিষ্ঠুরের মতো কবরস্থ করি ভালোবাসার দিন ৷

সময়  ভেসে যায় নিথর মৌনতায় , নিয়ম ভাংগে প্রকৃতি ,
মেঘ করে , বৃষ্টি  হয় ৷
অথচ  দুঃখ গুলো কখনো অবাধ্য হয়না ৷
মিশে থাকে  স্নায়ুতন্ত্রীতে  শিরা উপশিরায় ,
প্রতিটি রক্ত কণায়৷

যখন নিজেকে আড়াল করিস ! খুঁজে ফিরি প্রেতাত্মা হয়ে
আলোয় , অন্ধকারে , নির্জনতায় ,
ফসলের  মাঠ কিংবা রোদ্রের বারান্দায় ৷
মৃত্যুর শোক নামে , ইর্ষার আগুন মিশে নিঃশ্বাসে ৷

ভালোবাসি বলে কতো কি যে সয়ে যাই
যেভাবে ভালোবেসে ফিরে যায় পাখি নরম ডানা মেলে
দূর অজানায় কোন ফেলে আসা বসন্তের দেশে


2 : যেভাবে স্বপ্ন দেখিছি


পলাশ ঝড়ার দিন ভুলে ভরা সময় ,
তোমার ফিরে দেখা একটি মাত্র পলক
ফেরারি সুখের মতো৷

আমি বৃষ্টি চেয়েছিলাম তুমি মেঘ হলে
বহু দূর আকাশে ৷
ক্লান্ত ধুসর গোধূলি
শুনশান, নিথর মৌনতায়  ৷

আকাশের নীল ছুঁয়ে উড়ে যায় পাখি
কুয়াশায় ভেজা মন,
বাতাসের বিষন্ন ঠোটে
অনন্ত কালের তৃষ্ণা ৷

তোমাকে একা চেয়েছি অনন্ত নির্জনে
কিশোরী আলোর আভায়
শতবছরের ঘুমন্ত পাহাড়ের পাদদেশে কুটিরে ৷

জীবনের একদিকে তুমি অন্য দিকে মরণ
মাঝখানে কিচ্ছু নেই ,
এ  ছিলো  দুগঢ় প্রত্যয় 
তুমি কখোনো ভুলেও ভাবনি ৷


3: "বিভ্রম ছুঁয়ে আছে"


আজকাল ভুল হয় খুব , ভুলে যাই  ফেরার পথ ,
নিজস্ব উঠোন  মাঠ তেপান্তর ৷
 আনমনে স্ট্রিট লাইটের আলো মেখে নিই
পুড়া দু'চোখে ৷
ইচ্ছেরা  বোবাবেদনায় ছটফট করে ৷
নির্ঘুমতা ছুঁয়ে থাকে দুঃস্বপ্নের মতো ৷
শঙ্খচিলের কন্নায় নিঃস্ব হয় মরা নদী ৷
ঘুমন্ত পিয়ালের বন হঠাৎ বাতাসে জেগে উঠে ৷
আকাশ বিশালতা ছড়িয়ে দেয় অস্পষ্ট ছায়াপথে ৷
হামাগুড়ি দিয়ে জোছনা নামে অরণ্যের ঠোঁটে ৷
 জীবনের অমোঘ ঘোর কাটলেই
এক পা দু পা করে তুমি নেমে আসো মনে ৷
আর তখনই ভুল ভেঙ্গে যায় ,
মনে হয় এখনো দিব্যি  বেঁচে আছি ৷


4 : অনুক্ত অনুরণন


ইচ্ছের সমুদ্রে নীল জোছনা ,
নিঃসঙ্গ চাঁদ ,
একাকী আমি শিয়রে নির্ঘুমতা ৷
রুপালী আলোর বিকিরণে
অস্পষ্ট ছায়াপথ ৷
তোমার জানালার পর্দা পুড়ে যায়
ইর্ষার দাবানলে ৷
তুমি ছুঁয়ে দিলে গভীর সুখ ,
শুভ্র পেলবতা
ইপ্সিত শিহরণ ৷
তাঁরার আলো নিভে গেলে
নেতিয়ে আসে জোনাকির চোখ ৷
আমার ঘুম কাতর মুখ
কি অসীম অদরে
আগলে রাখো বুকে ৷
সব আলো নিভে গেলে
অদৃশ্য আভায় উচ্ছল  অদিতি ৷

Comments

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা