সেখ নুরুল হুদার কবিতা


------------------------------------------------------

          কবি সেখ নুরুল হুদার জন্ম ১১ জুন ১৯৭০ স্কুল রেজিস্টার অনুযায়ী। পিতা মরহুম সেখ ইসলাম আলি।  মাতা রহিমা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া থানার শ্রীরামপুর গ্রামের পীরতলায়। এখানেই তিনি বসবাস করেন।
          কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন বাংলায় এম এ 
          কবি সেখ নুরুল হুদা এক সময় বলিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে যথেষ্ট সুপরিচিত ছিলেন। সেই সঙ্গে হাওড়া জেলা প্রেস ক্লাবের অ্যাসিস্টেন্ড সেক্রেটারিও ছিলেন। বহু সংস্থায় সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার কাজ করে বর্তমানে তিনি রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মচারী।
           সেই ১৯৮৮ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত কবিতা থেকে আজও অব্দি তিনি লিখে চলেছেন। কখনও কবিতা, কখনও রিপোর্টিং, কখনও প্রবন্ধ, কখনও অল্প-সল্প গল্প, কখনও উপন্যাস  তাঁর কবিতার এবং জীবনের মূল সূর 'ভালোবাসা'। সেইসঙ্গে মিলে-মিশে থাকার সম্প্রীতির আহ্বান।
           এছাড়া তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং বর্তমানেও সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।  এ কারণেই কবি সেখ নুরুল হুদা সাংবাদিকতা, সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবার জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ বহু প্রাতিষ্ঠানিক সংবর্ধনা ও সম্মাননা পেয়েছেন।
বর্তমান দেশ তথা আন্তর্জাতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে আজ কবি সেখ নুরুল হুদার চারটি বিভিন্ন স্বাদের কবিতা দেওয়া হলো যা সহজ সরল আবেগ এবং ভালোবাসার কথা বলে । 



১: আমি একজন ভারতবাসী

      
আমি একজন ভারতবাসী
তাই দেশকে ভালোবাসি
দেশের মানুষকে ভালোবাসি।

মানুষ, মানুষ হয় ভালোবাসায়
মানুষ, পশু হয় শুধু হিংসায়
মানুষ, দেবতা হয় সহনশীলতায়।

সব মানুষ, মানুষ হয় না
বনের পশু, মানুষ হয় না
স্বর্গের দেবতা, মানুষ হয় না।
মানুষকে নিয়ে দেশ হয়
দেশকে ভালোবাসতে চাইলে
দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হয়। 


২ :বউ কথা কও


আমার বুকের ভিতর ছবির খাতার পাতায় পাতায়
যে স্কেচে আমি তোমাকে তৈরি করেছি
সেখানে মজনুও মৃন্ময়।
তাই আমি আন্দাজে স্বপ্নগুলো  সেলাই করেছি
ফরহাদের মতো বুকের পাথর কাটি সারাক্ষণ।
তোমার অজানতে তোমার ভিতর আছে একজন
যাকে আমি চিনি, হৃদয় দিয়ে চিনি, টেলিফোনে চিনি
চোখে না দেখলেও হৃদয় দেখতে পায়
সেইখানেই তো তুমি,
তুমি হৃদয় জুড়ে বিরাজ কর
রক্ত মাংস দিয়ে গড়া শরীর।

রাতের খোলা জানালায় বিছানা জুড়ে চাঁদের হাটে
মনের সোহাগ কল্পনার মায়াবীতে
কতবার যে বিক্রি হয়েছি, কে তার হিসাব রাখে।
তবু আখেরী সমাধানে পহরের পর পহর প্রতীক্ষা
সুবহে-সাদেকের স্নিগ্ধ বাতাসে ফজরের আজানের অপেক্ষা

"আস-সালা-তূ খাইরুম মিনান-নাউম"।
রাত কাটে, ভোর হয়, গাছের ডালে ডালে
আমি যেন তোমার কাছ থেকে, ভালোবাসতে শিখি।


৩ :কাব্য ও কবিতায়

আমার নিজস্ব কবিতায় সাজাবো কাব্য বাগান
যেখানে মরমী গানের সুরে আসে বিপ্লব,
যেখানে পুঁজিবাদের দ্বারে ছুয়ে যায় সংগ্রাম
            আমৃত্যু কাল।

আমার প্রেম বাসরের স্বপ্ন, অভিমান
যেখানে জন্ম নিয়েছে কুশ আর লব;
যেখানে আদা শহুরের প্রতিটি গ্রাম
     জ্যোৎস্না-রাতের কাঙাল।

আমার সুসংহত কাব্য অভিযান
যেখানে তামিল সাহিত্য পেল "কুরাল" পল্লব;
যেখানে প্রাকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-নাম
      থাকবে অনন্ত কাল।
          


৪: এমনকি অমৃতও
    

।। অ ।।
তাকে নিয়ে লরি চলে গেল
নরম জোনাকির আলো  চিবিয়ে
লুণ্ঠনে নতজানু হবে সাবলীল,

হৃৎপিন্ড, তার মধ্যে আরও কিছু গোল
গোলাকার-আরও কোন নাম দিয়ে
হয়ে যাবে সমাজ সম্পত্তির দলিল।

।। আ ।।
দোয়েলের শিসে স্বপ্নের কুসুম
সব তলিয়ে গেল কত অনায়াসে
কত গভীরে কত গভীরতার অতলে,

কত জ্যোৎস্নার ফাগ কুমকুম
ক্রমশ ছড়িয়ে গেল মহাকাশে
যাওয়া যায় জলের আড়ালে।

।। ই ।।
ছুড়ে ফেলে দিল এই দেহ বধ্যভূমিতে
 ছিড়ে-খুঁড়ে খেলো শেয়াল-শকুন
কোমল কাননের ঝুমকোলতায়,

সব সাজিয়ে, কেন পা দিয়েছিলে মাটিতে
এখন সব স্বপ্নের সুরাসার শুধু আগুন
আগুনে পুড়ে ছাই, কেন এই অবেলায়?

।। ঈ ।।
জীবনের অধিক এমন জীবন
যেতে পারি কোন ভূল ঠিকানায়
খরতর ভালোবাসা, দোল-পূর্ণিমা,

বেঁচে থাকবো, এক আশ্চর্য খবর এমন
দিয়েছিল এক বিশ্বাসি কাব্য-কবিতায়
এমনকি অমৃতও, ওগো প্রিয়তমা।¤

Comments

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা