সুতনু হালদারের কবিতা
কবি পরিচিতি:-
সুতনু হালদার। কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত শান্তিপুর শহরে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে বর্তমানে ফুলিয়া বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদে কর্মরত। লেখালেখির সূত্রপাত শৈশব থেকে হলেও সচেতনভাবে লেখালেখি প্রথম দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। বর্তমানে 'দেশ', 'কবিতাপাক্ষিক', 'জিরো বাউন্ডারি', 'মধ্যবর্তী', 'বাক্', 'অন্যনিষাদ', 'যুগসাগ্নিক'সহ বাংলা কবিতার বিভিন্ন মুদ্রিত ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের পত্রিকায় তাঁর কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রে তাঁর লেখা বহু প্রবন্ধ পঠিত ও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। তিনি 'দহর' নামক একটি ওয়েবম্যাগ সম্পাদনা করেন।
প্রকাশিত বই:-
'চাকভাঙা চাঁদ' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮), 'আহ্নিকগতির কালশিটে রং' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮),
'অন্তঃসত্ত্বা কুয়াশারা' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির ছয়টি অনন্য কবিতা যেখানে অনুভূতি এবং শব্দের প্রক্ষেপ দারুণ ভাবে কাজ করেছে ।
১: ফসিল
আলাদাভাবে বলার কিছু ছিল না
প্রতিবার বৃষ্টি নামলেই জলপাথরের
নক্ষত্রযোগী রঙ ব্যাকুল
প্রতিটা রৌদ্রকণার সমীহ
ইতিহাসের ঊরুদ্বয়ে
ভয়াবহ অক্ষর সঙ্গম
দেওয়াল বরাবর এককোষী জিজীবিষা
জীবন আঁকার জন্য খোঁজে পদ্মযোনি
জিভের ভূমিকা সেখানে অনিবার্য
সভ্যতার দ্রবণে
গুঁড়ো গুঁড়ো যৌনতার ফসিল
আর
লেট রার্নিং স্নায়ুর প্রান্ত জুড়ে-
নিটোল ভারতবর্
২: অ্যাক্রোপলিস অটোজম
কয়েকটা প্রতিশব্দ কাক হয়ে উড়ে গেল...
গহ্বরের নিঃসৃত লালা
অন্তরায় মিশতে মিশতে
গল্পটা ঝাক্কাস রামধনু চুমুক...
পেয়ালার অন্তরীক্ষ জরিপ সম্মাননা পাবার
উপযুক্ত অন্ধকারের পাহাড় টপকালে-
নিজের বায়োডেটা ইকুয়ালটু কীটপতঙ্গ...
ঠিকরে ছুটে আসে একটা নিঃসঙ্গ নিঃশ্বাস
হৃৎপিণ্ড থেকে পাকস্থলীর সমস্ত আবেগ
অ্যাক্রোপলিস অটোজমের বর্ণচোরা টেলিপ্যাথি
৩: জেব্রা ক্রসিং
ফ্লুরোসেন্ট বিশ্বাসে নয়ছয় জানলার আঙ্গিক
হাতের বাহুল্য বোঝার চেষ্টায় ব্লেডের মৃগনাভি
বাইশ গজের সতৃষ্ণ আর্তনাদ!
ছুটন্ত অট্টহাসি ব্যস্তানুপাতে অশ্বমেধের ঘোড়া
শ্রাবণের ম্রিয়মাণ দাম্পত্যে প্লাজমার যোজ্যতা;
আড়ালে রাখা রহস্যের আগাপাছতলা বটগাছ!
অতএব, যে কোনো আশ্রয় নিভন্ত আলোর
সমকামিতায় লাল হয়ে যাওয়া ক্লিভেজে
একএকটি উচ্চাঙ্গ সংগীত;
চমৎকার ফোটোগ্রাফির ফুসফুসে
অবিকৃত জেব্রা ক্রসিং
৪: কস্তুরী
হারিয়ে যাওয়া শব্দরা ধীরে ধীরে ফিরে আসে
আপন খেয়ালে ভাবলেশহীন স্ফুরণ
চপলতার অন্তর্বাসে মৃদু হাই তোলে...
আরো জটিল অন্ধকার সমস্ত গ্লানিকে
নিরন্তর ডানায় মেখে-
রাত মোছে সকালের স্বরচিত আগুন...
রিপুর টংকারে মিশে থাকা নিষ্ফল দ্বৈরথ
অতিলৌকিক খড়মের গায়ে ছুঁইয়ে নেয়
অনাবিষ্কৃত জিয়নকাঠি
শব্দের প্রতিবিম্বে খোদিত হয়
অবিকল কস্তুরী
ওঁ স্বাহা
৫: ম্যাজিশিয়ান
উদ্দীপিত দিকচক্রবালের তীব্রতর
ভ্রূকুটি নিক্ষেপ,
দিনগুলো শাঁখের করাতে
ঘাস হয়ে রোদ শোঁকে
অধঃপতিত প্রতিটা ঠোঁট!
নিত্য দিনের তর্জনীতে উন্মুক্ত
পরাগিত সুধাংশু;
আগামীর কাঠামোয় অযথা মাংসের প্রলেপ!
পরিকল্পিত মাধুকরীর এলামেলে গলা গলা সন্ধে; ভাষান্তরে আক্ষেপ বিনিময় করতে করতে
পুরুষালী নক্ষত্রপথ সরীসৃপ হয়ে ওঠে...
উথালপাতাল শব্দহীন
জীবনের আলজিভে বেঁচে থাকে
আস্ত এক ম্যাজিশিয়ান
৬: বিষ
পাঁজরের মধ্যে এক মস্ত মরুভূমি
ডায়ালিসিসের বিনিদ্র কেন্দ্র
আস্তে আস্তে কপাল থেকে মস্তিষ্কে
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
স্তম্ভিত কিমার ডাইলিউটে-
বিন্দু বিন্দু ঘৃণা...পারস্পরিক আলাপন;
খিদের বহুমাত্রিক বিরাগে
অন্ধত্বকেই আপন মনে হয়
সুসভ্য হতাশার বদরক্ত
পলিথিনের গর্ভকোষের
বেওয়ারিশ আস্তানা
অসহিষ্ণু মেঘ আর-
নির্জীব গুল্ম সিরিজের এস্রাজে মিশে থাকে
পাষাণী অহল্যা
Comments
Post a Comment