ময়ূখ হালদারের কবিতা
কবি ময়ূখ হালদারের জন্ম জলঙ্গি গ্রামে
পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা রানাঘাট শহরে
স্কুল জীবনে যে দুটো বিষয় সবসময়ই এড়িয়ে চলতেন বর্তমানে সেই থিয়েটার আর লেখালেখিই জীবনের নিউক্লিয়াস
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: মহাশূন্যের ক্লাসরুম
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা যা পাঠককে আকৃষ্ট করবেই
১: ওভার বাউন্ডারি
যতবার গ্লাভস্ পাল্টে ঘাতক সময়ের
সামনে দাঁড়াই
ততবারই ধরা পড়ে যাই
অন্তহীন টেস্ট ম্যাচ
আরও একদিন টিকে থাকা
নিশ্চিত জানি যে কোনো মুহূর্তে
ছিটকে যাবে স্ট্যাম্প
তবু ব্যাট হাতে অপেক্ষা
দু একটা লুজ বল
মনটাকে উড়িয়ে দেবো গ্যালারিতে
যেখানে তুমি বসে আছো
মাঝখানে বিরানব্বই মিটার শূন্যতা
২: ছাদভাঙা বৃষ্টি
তারপর ছাদভাঙা বৃষ্টি
শিকল ছিঁড়তে চায় প্রতিবাদী সূর্য
ভাড়াটে মেঘেদের দল এলোমেলো ঘুম
এ শহর কাকভেজা নদী
জলের আগুন
তর্জনীতে লিখেছ তুঘলকের নাম
মুছে দাও অবৈধ কাঁটাতার নেই দাম
ভেঙে ফ্যালো
দেওয়ালে ফুটেছে দ্যাখো ফুল
বাগানে খরা
পাঁচিল টপকে উঠে এসো বন্ধু
হৃদয়ের ডাকহরকরা
সময় পেরিয়ে যায় বড়ো অসময়
শেষরাতে উঠে আসে চাঁদ এঁটো বিছানায়
চাঁদের ধর্ম কী আমি জানিনা
শরীর চেয়েছে মন
আর মন যে শরীর
আইনের হাতে আজ রামের গেলাস
দেশের ভিতর দেশ কত আঙিনা
৩: ইটভাটার বর্ণমালা
যদি আসতেই হয়
তাহলে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে এসো
চারপাশে কাব্যমেধ যজ্ঞ
ভেঙে দেবো কলঙ্কিত কৌলীন্য
যাবতীয় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ তুলে রাখো ফোস্কা পড়া হাত আমায় দাও
চাষার ঘামের গন্ধ রিকশাওয়ালার ছেঁড়া চটি
ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা বাদামি চুলের জট কিম্বা অসহায় রান্ডি
আঁষটে গলির মহাকাব্য
যেখানে মিনিটে মিনিটে কবিতার জন্ম হয়
কাঁধে জোয়াল আর নাকে দড়ি
বাংলার আলো আঁকাবাঁকা ধানখেত
আঁতেল পাঁজর ভেঙে আমি হেঁটে যাই
পড়ে থাকে রক্তের দাগ
ওদিকে ইটভাটায় তৈরি হয় বর্ণমালা
৪: বস্ত্রহরণ
পৃথিবীটা হেলে আছে সাড়ে ছেষট্টি ডিগ্রি
সাড়ে তেত্রিশ শতাংশের পায়ের কাছে নতজানু
দুরন্ত নদীস্রোত আমাকে ভেজাতে পারে না
আগুন জ্বালতেও অক্ষম
কবরের ভেতর ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি নিয়ে আমি জেগে থাকি সারারাত
শিরোনামে ভেসে ওঠে অপহৃত ভোরের ছবি
সংবাদপত্র থেকে চুইয়ে পড়া রক্ত জমিয়ে একটা স্নানাগার বানিয়েছি
উড়ে আসছে সময়ের তলোয়ার
আমাদের লুকোচুরি খেলার ঘরগুলো বন্ধ
জলের ভেতর উলঙ্গ আস্ফালন
অসংখ্য শামুকের খোল
নিরাপদ আশ্রয়
মারিজুয়ানার মতো খিদের জ্বালা আমাকে টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারে
মৃতদেহ আর কংকালের তৈরি সিংহাসনে বসে আছে স্বৈরাচারী হৃদয়
দুঃশাসনের মুখে চুইংগাম নীল বস্তি
নদীর গা থেকে খুলে যাচ্ছে কাপড়
এখানে কোনও ত্রাতা নেই
৫ : অশ্বারোহী রাত
রক্তিম বিকেল
গোধূলির আঁচল টেনে ধরেছে কুয়াশা
জলের পিণ্ডদান সেরে ফিরে আসছি আমরা
সারিবদ্ধ মাংসের দোকান
হলুদ ঝাউবন
খড়খড়ে জিভ শুষে নিচ্ছে সবুজ মোমবাতি
তারপর অন্ধকার
আমরা হেঁটেই চলেছি
অসংখ্য মরুঝড় তুষারক্ষত আর মাতাল সুনামি পেরিয়ে
দশকের পর দশক
শেষরাতে পেঁচার কান্নার মতো জড়িয়ে যাচ্ছে পা
নিরীহ পানিফলের শরীর
গজিয়ে উঠছে কাঁটা
সকলের হাতে নলখাগড়া
ছিন্নভিন্ন মানচিত্র
সূর্যের কাটা মুণ্ডু কাঁধে এগিয়ে আসছে অশ্বারোহী রাত
রক্তাক্ত চরাচর
মৃত জ্যোৎস্নায় ধুয়ে ফেলছি হাহাকার
Comments
Post a Comment