সুশান্ত সিংহের কবিতা


কবি সুশান্ত সিংহের কবিতা নিজস্ব ঘরানার । নানান স্বাদের কবিতার ডালি নিয়ে আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির নয়টি কবিতা । প্রাঞ্জল ভাষায় অভিজ্ঞতালব্ধ অনুভূতির ছোঁয়া ।কর্মসংস্থানহীন বাস্তব জীবনে কবিতা তাঁর বেঁচে থাকার রসদ । আশা করি অনুভূতিপ্রবণ পাঠকের  ভালো লাগবে ।


১: নবীন বরণ

তুমি
কাগজ কলম এগিয়ে দিয়ে বললে-
একটা কবিতা চাই
 *          *         *
ভোরের বাতাসে পাখির ঠোঁটে
একটা একটা খড়কুটো দিয়ে তৈরি হয় ভালবাসার কবিতা
 *          *         *
তারপর একদিন উড়ে যায়
নতুন ভোরে
নতুন কবিতার খোঁজে..


২ : ব্রততী

কতদিন আর, বছর খানেক হবে!
তুমি জড়িয়ে ধরেছ লতার মতো,- আষ্টেপৃষ্ঠে
বেঁধে নিয়েছ তোমার আপন নিয়মে
মননে অবচেতনে

তখন, তুমি ছিলে ক্ষুদ্র- অবুঝ
মেলছিলে সবে নতুন কচি পাতা- সবুজ। ভীত ত্রস্ত--
তোমার আকাশ দ্যাখার সুপ্ত বাসনায়
একটু একটু করে বেড়ে উঠলে তুমি
দুষ্প্রাপ্য সৌরভে ভরিয়ে দিলে সমস্ত বাগান
তোমার আবেশী নির্যাসে পেখম মেললো পাখি।

আলোর উৎস খুঁজতে খুঁজতে তুমি এখন ওপরে, অনেক ওপরে-
মেঘ ভেদ ক'রে আমাকে ছাপিয়ে ব্যাপৃত নীলাকাশে।

কত ব্যস্ত তুমি
তুমি বসন্ত বাতাস
তোমার পরতে পরতে স্বর্ণ আকর
চাতকের মতো চেয়ে থাকি তোমার সৃষ্টির দিকে
কখন তুমি ঝরাবে বৃষ্টি...       


৩:  বিচার চাই

দিগন্তভালে মৃত্যুর বিভীষিকা
অহং আমার ছেয়েছে আকাশ বিষাক্ত অহমিকায়
দম্ভ জ্বেলে শুদ্ধ হব এই বেলা ।
ভারী বাতাসে সংক্রামক ব্যাধি
খুড়োর কল নিয়ে দৌড়ানো আমি
যন্ত্রণা বিহীন যন্ত্র হ'তে চেয়েছি...

পশুর কাছে মানবতা ধার চেয়েছি
পিঁপড়ের কাছে সামাজিকতা
পাখির কাছে শ্রম চেয়েছি
লতার কাছে প্রেম
ভিসুভিয়াসের তপ্ত লাভায় নিটোল হতে চেয়েছি
মাঝে মাঝে ইতিহাসটাকে ফিরে পেতে চাই
ক্ষতি কি যদি স্বপ্ন দেখি নতুন করে গড়ার

জমাট গুহ্যদ্বার
ওরা ভয়ে কাতর
ইতিহাসের পাতা থেকেও সরব হয় কনিষ্ক
পতাকা প্রভেদে থালার প্রকারভেদ করে মস্তিষ্ক
বিচার চাই  বিচার চাই....
 

৪:   নদীর কাছে আগুন চেয়েছি

আমি
নদীর কাছে আগুন চেয়েছি এক পেয়ালা
যার এক চুমুকে পুড়বে কামুক হিংস্রতা
ছাই হয়ে যাক অসাম্মানিক আদিম খেলা...।
সমুখে শায়িত জাহ্নবী বিবসনা অথচ খরস্রোতা
শরীর জুড়ে সম্মিলিত ব্যবচ্ছেদের আস্ফালন
জমাট বরফ আগুন গড়িয়ে পড়ে হিমবাহ বেয়ে
খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখছি

আমি নদীর কাছে আগুন চেয়েছি

নদীর ঠোঁটে মৃদু হাসি, বলে-
আমি শতাব্দীর বহমান
গভীরে আমার সহস্রাব্দের পলল
চাপা পড়ে আছে কত অভিশাপ, অভিমান,
কত বেদনার ক্রন্দন রোল
ঘূর্ণি স্রোতে আগুন ভেসে চলে...
পলকহীন। ধরবে তাকে!

নদী হেসে বলে

ঐ দূরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ওঠে, মননের, মানবতার...
           

       ৫: বয়ে গেছে বেলা

বয়ে গেছে বেলা
এখন রূপালী প্রেমের স্বপ্ন দেখি

কখন যে চাঁদনী সরে গেছে স্বর্ণলতার আড়ালে, বুঝিনি
সাগরের উষ্ণতা বাতাসের ফেরে হিমশীতল- বরফ
চূর্ণীর জলে ওক গাছের ছায়া
সুদীর্ঘ-   একা

বয়ে গেছে বেলা
আড়াল হওয়া আধফালি বাঁকা চাঁদের আলোয়
এখন কেবল রূপালী প্রেমের হাতছানি


      ৬: আজ দশমী

ইতস্তত ছড়ানো বিল্বপত্র এখনো সবুজ
কিছুটা মলিন, একটু অবুঝ
অবনত মস্তকে মাঠের যত কাশফুল
 মনমড়া, আজ বড়ো ব্যাকুল

সকালের শিউলি একবুক শিশির নিয়ে
মুখ গোমড়া
গাছে গাছে ফুলে ফুলে শুধুই ঘুরে ফেরে
বিষন্ন ভোমরা

আজ দশমী, আনন্দ আজ রূপান্তরিত
খুশীর আঙিনায় এক চিলতে শূন্যতা -নির্লিপ্ত
আজ
আজ ঢাকের বোল স্তিমিত..... নিস্তব্ধ স্ফুরণ
আজ দশমী... নিরঞ্জন

আজ প্রতিমা বিদায়, হৃদয়ে মায়ের শয়ন
প্রতিমার বিসর্জন...


৭: ফল্গু ধারা

তুমি এখন বেশ নির্বিকার...
 পলি পড়া নদী...
স্তিমিত অস্ত রাগের নীরব অন্ধকার...
হারিয়েছ ছন্দ - প্রগল্ভতা,
অনাবিল আবেগ - উচ্ছ্বলতা...
- অঙ্গীকার... !!

তুমি এখন বেশ নির্বিকার...


৮:   প্রাক্ বর্ষা

সূর্যটাকে ঢেকে দিলো একফালি মেঘ,
প্রখর রশ্মিকে উপেক্ষা করে;-
হয়তো বা তীব্র আক্রোশে
নয়তো বা ঘৃণাহীন ভালবেসে
হয়তো বা নিতান্ত অবহেলে
নয়তো বা একান্ত তাচ্ছিল্যে
হয়তো বা সোহাগী মৈথুনে
নয়তো বা  আশাতীত ছলনে...

বিশ্বাসের পরাকাষ্ঠায় ধরিত্রী
নিশ্চিন্ত থাকার প্রবল প্রকরণে
আগলে রাখে প্রতিটি পল্লব, প্রতিটি প্রাণী
প্রতিক্ষিত সাময়িক অবগুন্ঠন


৯:  আকাশটা আর আকাশের মতো নেই

 আকাশটা আজ সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত-
হয়তো কোথাও বেলোয়ারী ঝড়
পরতে পরতে আঘাত হেনেছে
 হৃদয়ের  দেবালয়ে..,
অথবা কোথাও সাঙ্ঘাতিক বড়
চুরি হয়ে গেছে
বিশ্বাসের বটুয়াখানা
খোলা জানালা দিয়ে..

হয়তো সবাই ভাবছে গালে হাত
একবিংশের চরমতম আক্ষেপ-
মেঘ ভার করা আবর্জনার ঢেউ
আছড়ে পড়ে বিদগ্ধ মোহাবর্তে।

সমাজ সচেতনতা যাক্ না চুলোয় মিশে
প্রতিশোধটাই হোক্ না হয় খাঁটি!
দায়িত্ব থেকেই মর্যাদাবোধ আসে-
তোমার-আমার ফারাক তবে কি?

প্রতিবাদের নানান  ধরণ আছে
আকাশও রূপ পালটায়, রৌদ্র থেকে রুদ্র
আকাশও আজ ক্লান্ত পরিশ্রান্ত বিভ্রান্ত
তাই,  আকাশটা আজ আকাশের মতো নেই
আকাশটা আর আকাশের মতো নেই।।

                  -      -        -

লেখক পরিচিতি:

সুশান্ত সিংহ। মাধ্যমিক- চিত্তরঞ্জন ডি. ভি. বয়েজ স্কুল থেকে। পরবর্তীতে হুগলীর পাঁচবার গ্রামে। জনাই ট্রেনিং হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক।

 ভালবাসি পড়তে, লিখতে, খেলতে। শখের লেখা শুরু স্কুল জীবন থেকে।

শেখার অনেক বাকি

Show quoted text

Comments

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা