পারমিতা ভট্টাচার্যের কবিতা
কবি পরিচিতি: -
পারমিতা ভট্টাচার্য।কবি ও কথাসাহিত্যিক।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার চাঁদবাটি নামক গ্রামে 7ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন।ছোটো থেকেই প্রকৃতির কোল ঘেঁষে বড়ো হওয়ায় প্রকৃতির প্রতি একটা অদম্য টান।লেখার প্রতি ভালোবাসাও ছোটো থেকেই তাঁর। পারমিতা ভট্টাচার্য একজন গৃহবধূ , বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন ইতিহাসে এম এ ।কাজের ফাঁকে লেখাটাই তাঁর একমাত্র আবেগ ও ভালোবাসা।আলাপি মন,পদক্ষেপ,অবেক্ষণ ।
কলকাতার চিত্র,পারিজাত ও আরও অনেক পত্রিকাতে তিনি লেখালেখি করেন।এছাড়াও বিভিন্ন ব্লগজিনেও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।' স্বপ্ন ছুঁয়ে যাই ' নামক কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।এবারের বইমেলাতে ' কাব্য বত্রিশের মালা ' নামক একটি কাব্য গ্রন্থ তাঁর প্রকাশ পেয়েছে।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা ।
১: অবশ্যম্ভাবী
ভাবনার ঘরে ছিটকিনি তুলে দিলে
দেওয়াল ঘড়িটাও টিকটিক করা ভুলে যায়,
মস্তিষ্কে ঘোরাফেরা করে অসংখ্য ঘুণপোকা।
মাথার ভিতর কিলবিল করা দুঃস্বপ্নেরা
দল বেঁধে আসে ঘুমের ভিতর,
স্বপ্নের রাহাজানি করবে বলে।
রঙিন রাংতায় মোড়া শরীরী অবয়ব,
নিবন্ত আগুনে দেয় ফুঁ সহজাত ভঙ্গিতে,
আরও একটু প্রজ্জ্বলিত হবার আশায়।
একটা জাহাজ মাস্তুল উঁচিয়ে
ছুটে চলে ঘনীভূত কুয়াশা ভেদ করে।
তবুও ঢেউ এর বুক চিরে আসে মৃত্যু,
শুধু এটাই অমোঘ সত্য বলে ।
২: অনুসন্ধিৎসা
পায়ের কাছে লেপ্টে পরে থাকে
পোষা বেড়ালটা,পায়ে ঠেললেও
আবার পায়ের কাছেই এসে পড়ে।
খাঁচায় পোষা ময়না,যা শেখাই তাই শেখে,
শেখানো বুলি আওরে যায় নিখুঁত ভাবে।
সম্পর্কে পোষ মানলেই পায়ের কাছে
নেতিয়ে পড়ে থাকতে হয় বুঝি??
মেরুদন্ডে হাত দিতে ভয় হয় আজকাল,
পোষ মানতে মানতে যদি সে ও সংবেদ হারায়?
সম্পর্কের সুতো বড়ই অপলকা,
হ্যাঁচকা টান মরলেই ছিঁড়ে ঘুড়ি হয় ভোকাট্টা।
তাই সন্দেহ জাগে মনে,কোনটা সঠিক,
পোষ মানা জীবন?নাকি মেরুদন্ডের উত্তরণ?
৩: প্রস্তুতি
মাঝে মাঝে মন চায়
চলে যাই অনেক দূরে,
যেখানে মেঠো আলপথ মিশে গেছে
বাউলের একতারাটার সুরে।
যেখানে একলা পাগল গান গেয়ে যায়
আপন ভোলা মনে,
উড়ছে ধুলো পথের শেষে
দূরে পলাশ বনে।
যেখান থেকে শেষের শুরু
যেখানে সব অহংকার হয় চূর্ণ,
যেখানে সব চাওয়া - পাওয়া মিলেমিশে যায়
ভালোবাসায় সম্পৃক্ত হয়ে জীবন হয় পূর্ণ।
এমন একটা সকাল আসুক রোজ
যেদিন থাকবেনা কোনো পূতিগন্ধমাখা স্মরণ,
যবনিকা পড়ে যাওয়া মানে শেষ নয় সব
আবার নতুন করে বাঁচার প্রস্তুতি নেয় জীবন।
৪: হিসেব - নিকেশ
উঠোনে শুকোতে দেওয়া ধান
খুঁটে খায় একাকী শালিক।
ফুটে ওঠে ধূসর ক্যানভাসে
জীবনের সাদা - কালো ছবি।
দিন যাপনের ঐকান্তিক চেষ্টা
চালিয়ে যাই আমরাও প্রতিনিয়ত।
হিসেবি সময় মুখ টিপে হাসে,
খুঁটে খুঁটে সুখ রাখি তুলে বকেয়া খাতায়।
প্রতিদিনের হিসেব মেলানো আমরা
মাঝে মাঝে লাভ - ক্ষতির অঙ্কটাই ভুলে যাই,
কারণ ভুলে যেতেও হয় কিছু মাঝে মাঝে।
৫: জীবন্ত প্রতিবিম্ব
এক পাহাড় অভিমান বাসা বাঁধে
সুখের ঘরের চিলেকোঠায়।
সর্পিল আলপথে চলে জীবনের গতি।
আগুনে লাভা মিশে যায় আত্মায়,
মনে মনে ভাবি, ডুব দেব অতলান্তিকের
বরফ শীতল জলে,চির - প্রশান্তির লোভে।
একটা চিল, দূর আকাশে ওড়ে,
শূন্য দৃষ্টিতে চোখে পড়ে তার লক্ষ্যভেদ,
ভাঙ্গা আয়না জানান দেয়
সুখ ভাঙ্গার জীবন্ত প্রতিবিম্বের।
রঙ মেলানো খেলায় আমি হেরে যেতে যেতে
আজ আমি বর্ণহীন হয়ে পড়ি।
ঘটা করে বন্ধুত্ব পাতায় সভ্যতা,
আর একটা যুগ পেরিয়ে যাই অসম্ভবের ভেলায় চড়ে।
৬: প্রতীক্ষা
আমি শেষ ট্রেনের হুইসেল শুনি কান পেতে
কেউ যদি ভগ্ন দরজায় আরও একবার দেয় টোকা
ছুটে আসে ডাকনাম ধরে হাঁক দিতে দিতে
অনন্তকাল অপেক্ষায় থাকি বসে দুয়ার এঁটে একা।
সব লেনদেনা চুকে গেলে,পড়ে থাকে কাছিমের খোল
জং ধরা সম্পর্কে ছড়ায় বিবর্ণ কান্নার রোল
ছকে বাঁধা জীবনপঞ্জি জুড়ে হাহুতাশ বাঁধে বাসা
উদাসী হাওয়ায় ভাসে নিঃসঙ্গ একতারাটির বোল।
স্বপ্নে চকমকি পাথর ঠুকে জ্বালায় কারা আগুন
ক্লান্ত চক্ষু অর্ধ উন্মীলিত,সময় ফুরিয়ে আসে
প্রতিদিনই শেষ ট্রেন সময়ের যবনিকা টেনে চলে যায়
কেউ আসেনা,শুধু বাতাসে মনকেমনের গন্ধ ভাসে।
সবগুলোই সুন্দর ও স্বতন্ত্র
ReplyDelete