বিশ্বনাথ মিত্রর কবিতা

বিশ্বনাথ মিত্র


জন্ম: ১৫/৬/১৯৬৬
পেশা : বাংলা শিক্ষক, ইষ্টার্ন রেলওয়ে  হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল আসানসোল
৫১ বছর বয়সে সাহিত্য জীবন শুরু (২০১৭ ) মাত্র তিন বছর ৷
শুরুর প্রথম বছরে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ''কাশফুলের রণক্ষেত্র" প্রকাশিত ৷
২০১৮ তে প্রকাশিত ইতিহাসধর্মী প্রবন্ধ  "আসানসোল বইমেলার কথকতা" ৷
প্রখ্যাত লেখিকা বানী ঘোষ এই বইটি সম্বন্ধে বলেছেন, 'বইমেলা নিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম বই ৷' এটি "আনন্দবাজার" পত্রিকা দ্বারা প্রশংসিতও হয় ৷
এছাড়াও প্রকাশিত 'উর্বশী ও পুরুরবা' নামে অণু কাব্যগ্রন্থ ৷ "শিকলভাঙা অষ্টবসু " এবং "বাইশে শ্রাবণ" নামে যৌথ কাব্য সংকলন ৷
বর্তমানে সবচাইতে উল্লেখ্য, সদ্য পূর্ব রেলওয়ের প্রকাশনায় গান্ধীজির জন্মের সার্ধ শতবর্ষে প্রকাশিত ইংরেজীতে যৌথ  প্রবন্ধ FATHER OF THE NATION LIFELINE OF THE NATION এর অন্যতম লেখক ৷
লেখক সমাজের নিপীড়িত এবং অত্যাচারিত মহিলাদের জন্য কাজ করেন এবং মানুষের জন্য গভীর সহানুভূতি তার সাহিত্য রচনার অন্যতম প্রেরণা ৷

       আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির করোনা নিয়ে  দুটি দীর্ঘ কবিতা সহ আরো একাধিক কবিতা ।             
             
       
         
               ১:  কোয়ারেন্টিইন
                     

সাত সাতটা দিন পেরিয়ে গেল, তুমি একটা কথাও আমার সঙ্গে বলনি
অন্তত ফোনে একটা মেসেজ দিতে পারতে
মুহূর্তটুকুও কি সময় পাওনি ?
ডাক্তার বলেছে, এই চার দেওয়ালে মাসখানেক থাকতে হবে
তুমি হয়ত ভেবেছ এরই মধ্যে দেখা করতে বলব
কিংবা বিদেশ হতে আনা উপহারটা তোমার হাতে তুলে দেব
অথচ ফোনটা সারাক্ষণ বন্ধ করে রাখলে !
আমি প্রতিনিয়ত এক নিঃসঙ্গ, যুদ্ধক্ষেত্রে অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে
লড়াই করতে করতে মৃত নক্ষত্রের মত ক্লান্ত, বিবর্ণ
কাঁপা কাঁপা হাতে সাজাচ্ছি প্রতিটি অক্ষর, ধূসর গাত্রবর্ণে
আর তুমি সহজ ভাবনাগুলোকে সুতোয় গেঁথে বলেছ মনে মনে
এসব আঁকিবুঁকি পত্রপূট মাত্র, যেমন অাগে দিতাম দিনে অন্তত দুটো প্রেমপত্র
মনে আছে, কত শিহরণ জাগানো সেসময় ঝড় উঠত ?
গোপন স্পর্ধায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প পৃথিবীর হলদে বুকে

কী করে করি আর নগ্ন এ অপাপবিদ্ধ অবগাহন
কোন অছিলায় প্রেমিকাকে বেঁধে রাখি আঙুলে নিষিদ্ধ স্পর্শ ?
খানিক অাগে মেয়েটি সাদা আপ্রোনে এসেছিল, চোখে মুখে ছিল নিশ্ছিদ্র আবরণী
আলতো করে তপ্ত মাথায় রাখল হাতখানি
কঠিন দস্তানার নরম ছোঁয়া, নামিয়ে আনল থার্মোমিটার শূন্য অঙ্কে
প্রথম প্রথম সত্যি অত বুঝতে পারিনি
গলা শুনে বুঝলাম সে এক রহস্যময়ী নারী, বিরহ জাগিয়েছে অন্তরালে তন্বী
বিবশ হৃদয়ে যেন বিঁধে গেল অবিকল তুমি, ধরা দিলে কম্পিত স্বরে
মনে পড়ল, পলাশরাঙা বিকাল নামল যেদিন চোখের তারায়
বলেছিলে দুহাতে হাত রেখে, ডাক্তার হবার ভীষণ শখ তোমার
আচ্ছা, যদি ডাক্তার হতে, নিশ্চয় আসতে আজ আমার কাছে,
মাঝে মাঝে এও বলতে— ইচ্ছে দেদার, লুকিয়ে যাওয়া পাখির মত সবুজ ঘাসে
যেতাম যেথায় যেখানে খুশি আর ডানায়  হা রে রে আওয়াজ  —
হেই হা হো... হেই হা চল সওয়ারী...
হাসপাতালে জানলার ঠিক পাশে সাজান আছে ওষুধ আর ইনজেকশনের শিশি
ওপারে অনেক দূরে মিলে গেছে একরাশ মস্ত আকাশ—
আকাশের দুষ্টুমিটা কিন্তু ঠিক বুঝতে পারি, হাতছানি দিয়ে যেই না ডাকি
রোদ্দুর ছড়াবে বলে, বসে পড়ে আমার বিছানার'পর
কাল সকালেও নীল পাখিটা যেমন ছিল গাছের ডাল বরাবর
পাখি হলে নিশ্চয় কাছে আসতে, দুদণ্ড ছটপটিয়ে ঠোঁট জুড়াতে
রাক্ষুসে মরণ ভাইরাসগুলো ওদের ছুঁতে পায় না শুনলাম
বয়েই গেছে তাই মানতে বারণ, দিগন্ত ছুঁয়ে পাখিটাকে আদর করতাম
আমার পাঠানো মেসেজে কি ছিল সেরকম কিছু কথার কলি
সেই ভয়েই কি তুমি আমার লেখা পড়তে চাওনি ?
এখন একটিবার চোখে চোখ রেখে দেখ, বন্ধ ফোনের অবুঝ স্কিনে
ঢেউ উঠছে হৃদয়ে, ঝিনুক-ভাঙা ক্ষতচিহ্নে তবু আমি এঁকেই চলেছি
চতুর্দিক বাজছে দামামা, মুখোমুখি নামব এবার অসম লড়াই
এখন তো একা একা থাকার মহাপ্রলয়, প্রহরে তুলেছি অভ্যাসের দ্বার
শিকড় উপড়ে গভীরে যত গেছি, বৃক্ষতলে তোমায় আরও বেশি ভুলেছি
তাহলে কী করে বল এখন মোহে মগ্নতা জড়ায় ?
তুমি তো জান ছদ্মবেশী বড় এ বেহায়া মন, স্মৃতির কালশিটে ঘায়ে
অদম্য সৈনিকের মত আমিও অস্ত্র ফেলে দি রণক্ষেত্রে, হঠাৎ বিষন্নতায় !



               ২: পরিযায়ী শ্রমিক
     

  (করোনায় যাদের রুজি রোজগার কেড়েছে )


দমকা হাওয়ায় যেদিন বাগানের লাউমাচা ঘরের ছাদ গেল ভেঙে
তোমরা বললে—
ছন্দে লেগেছে খুশির দোলা বৈশাখী বাতাসে !
সামনে দেখছ যে ওই পাহাড় স্বর্গছোঁয়া, দেখতে দেখতে আমাদের বড় হয়ে যাওয়া
সবজে আকাশটা ওখান হতে নিত্য কুড়িয়ে আনতাম, ছিলোনি গাছের ছালে
উঠানে শীতলপাটি বিছিয়ে দিতাম
যৌবন-নেশায় মেতে উঠত ঝরণা মত্ত হড়কা বাণে , আঁচল ভিজে যেত বৃষ্টি-শ্রাবণে
চোখ রাঙালে সূর্য, গাছের ছায়ায় লুকিয়ে যেতাম
চাঁদের আলোয় জ্বলত প্রদীপবাতি আবছা তুলসীবনে
পাহাড় ঘিরে আবদারে মেতে উঠত যত স্বাদ আল্লাদ
—এভাবে চলছিল বেশ দুয়োরানীর সাজানো সংসার ;
সাতসমুন্দর পাড়ি দিয়ে তোমরা এলে যেদিন, হাতে মৃত্যু পরোয়ানা, হবে কারখানা
পিছন পিছন পালকি চড়ে মেমসাহেব চাকরেরা
যেন ক্ষেত উজাড় করে এলেন রাজা উজির মান্যিগণ্যি
লোকলস্কর, সেনা, পুলিশ, টাকার ঝুলি
পাহাড়ের শরীর ভেঙে নরম মাংস নখশুদ্ধ উপড়ে ফেললে
আর চিৎকার করে বললে—
এই জমি আজ হতে আমাদের, ত্রিসীমানায় যেন কাউকে না দেখি
পবিত্রতার অলংকারগুলো মাটিতে সমর্পিত করল সাঁওতাল রমণী
বুলডোজারের ফলায় বড় বড় পলাশ সেগুন অশ্বত্থ নিশ্চিহ্ন
মাটির কাছে না থেকেও উদ্বুদ্ধ তোমরা রাতারাতি ভূমিপূত্র,
মাঝে একটা ঝিল খেলত অবিরল, যেন রাক্ষুসীর ধুকধুক লুকানো হৃদয়
হাঁসুলিবাঁক আঁকা থাকত গভীর চুলে, বেণীতে ফুটত লহর
অনেকখানি ছেঁটে ফেলা হল তার, বড় বড় লোহার পাইপ বসল
জল্লাদের মত তাকে  আনা হল টেনে হিঁচড়ে
যেমন কচি ডাবকে স্ট্র দিয়ে সর্বশ্রান্ত করে
নরম এঁটেলমাটির শাঁস পুড়িয়ে খাঁক করে দেওয়া হল ;
সবাই চলে যেতে লাগল এভাবে অস্তিত্বের মহাপ্রস্থানে,
রয়ে গেল কেবল কয়েকটা শঙ্খচিল দোয়েল আর ফিঙে, শব্দের কলকাকলি
আশ্চর্য, এরা কেউ এক পা নড়েনি !
প্রতিবছর যে পাখিগুলো সাইবেরিয়া থেকে আসে, সংসার পাতে
তারপর স্ত্রী পুত্র মাথায় বোঝা নিয়ে রাজগরিমায়
চেনা ইতিহাসের পথে হাঁটা দেয় পুরনো ভিটায়
ওরা অপেক্ষা করছিল তাদেরই জন্যে,
নতুন এক বার্তা শুনবে বলে কান পেতে ছিল
যুদ্ধের সময় কীভাবে পথ চিনে নিতে হয়, পরিযায়ী পাখি হয়ে ৷


         ৩: এপ্রিলফুল

আর ভয় নাই, মরণের মুখোমুখী হয়েছে জয়ী
মানব সন্তান, বন্দি সে মারণ ব্যাধি
—আজ যদি কেউ বলত এইসব কথা

যদি বলত হাতের ওপর হাত দুখানি রাখা যাবে নির্ভয়ে
কিংবা মিলে যাবে কোমলগান্ধারে নির্মল হৃদয়
সব মিথ্যা মাথা পেতে নেব, রেখে দেব সকল বন্ধক
প্রেম ছড়িয়ে এই পৃথিবীর'পর মিলিয়ে দেব নির্মল হৃদয়
জ্যোৎস্নার গায়ে হানব না আঘাত, কোন বিষবাষ্পে
ঝরে যাবে না অসময়ের হলুদ ফসল জঠর-চৈত্রে
খুঁজে নেব শিশুটির মুখ ভীড়ের মাঝে, তাকে রাখব যতনে

যদি কর অঙ্গীকার এই মশাল-অগ্নি
—আগামীদিনে হবে নাকো আর কোন ভুল,
কিংবা বলই না হয়, ছলনায় রসিকতা নিঠুর
—এনেছি দেখ তোমার জন্য অবিরত বিশল্যকরণী
তখন মাথা পেতে নেব শর্তহীন, ঘেরাটোপে ক্রর এই এপ্রিলফুল ৷


        ৪: করো কিংবা করোনা
 
তোমার কাছে পৌঁছাতে পুরো এক ঘন্টা সময় লাগত
দূরত্ব কিন্তু নেহাত সামান্যই ছিল
চৌরাস্তা পেরিয়ে খানকয়েক অট্টালিকা
তারপর একটা বাজার, এই যা
রাস্তা ছিল অনেক চওড়া, ফুটপাত ছেড়ে
মানুষগুলো নেমে অাসত মাঝ বরাবর
থিকথিক করত যানজট রিক্সা আর ট্যাক্সি
তারই ভিতর ঘামের জ্বালায় একাকার
অল্পেতেই হোঁচট খেতাম অজস্রবার
ভেজা জামাটা ফেলে দিতে পারলে যেন বাঁচি
মোড়ের লাল সিগন্যাল পথটাকে আরও কুঁচকে দিত
বাস থেকে নেমে কখনো কখনো দিতাম দৌড়
তুমি ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে রাখতে কঠিন সময়
ভিড়ে নাজেহাল হতে হতে
হাতে ভুগোলের ম্যাপ আর গুগল সঙ্গে নিয়ে
যন্তরমন্তর স্টল পেরিয়ে যে সময় পৌঁছাতাম নন্দন চত্বর
অত ঝক্কিতেও দেখতাম কিছুই হয়নি বিশেষ ক্ষতি
'টুকি' বলে চোখদুটো পিছন থেকে ধরলে, বলে উঠতে— কে তুমি , জানি...
গত তিনটি বছর এইভাবে কেটেছে বেশ রসেবশে
সেইদিনও বেরিয়েছিলাম আগের মত তাড়াতাড়ি
এক্ষুনি যেতে না পারলে তো তুমি উড়নচন্ডী
নিলাম সময় হাতে অনেকক্ষণ
বাইরে বেরিয়ে দেখি, অবাক কান্ড চারদিক
ধুলো-বালি সব শুনশান
লোকে বলল— বেরিয়ো না, এসেছে করোনা ভাইরাস
ভাবলাম, বরাত বটে আমার পোড়া কপাল
চলছে না একটিও বাস বা সি এন জি অটো
অদৃশ্য হয়ে গেছে নিত্য কোলাহল লোকজন
ল্যাম্পপোস্টের নিচে নেই খুনসুঁটি প্রেমের যুগলবন্দি
মিনিটখানেক তো পথ, কেউ নেই যখন চারপাশ
যানবাহন সব বন্ধ, ঈঙ্গিত বেশ মঙ্গলময়
পৌঁছে গেলাম চটজলদি, যেন অল্প রাত পোহালে, দুয়ারে ভোর
মনে হল, বসে অাছ চেনা কৃষ্ণচূড়ার ঘণ ছায়ায়
কাছে যেতে দেখি দিনদুপুরে আস্ত মরীচিকা
ছুঁলাম বটে, কিন্তু কোনোখানে নেইকো তুমি
একেই কি বলে লকডাউনের ঠ্যালা !
কাছের মানুষ চলে যায় অনেক দূরে
শিখতে যদি না পার অনুশাসনের লিপি ৷



      ৫: লকডাউন

আর তো মাত্র কয়েকটা দিন
তারপরই খুব কাছে আসব তোমার
জমে আছে এতদিন যা— নেব এক বুক নিঃশ্বাস
আগের মত সেই নদীতট, পা ডুবিয়ে নেব আলতো জলে
ঠৌঁটের নাগাল মুছে কথা কইব
না না আর কাছে এস না দুনয়নে, নদীটিকে দেখ
অপেক্ষায় সেও অন্তরালে, লক্ষ বছর আমাদের জন্য
সব ছেড়ে কেমন দেখ আজও অাছে মাটির কাছাকাছি
সূর্যের অঢেল সহবাস, পারত না কি ছুঁতে ওই মেঘপুঞ্জরাশি ?
তবু আপন কলতানে ঢেউ বায় তির তির দিবারাত্রি
আমরাও না হয় রয়ে যাই মুহুর্তকাল নিভৃতে ঘরবন্দি
আর তো মাত্র কয়েকটা দিন...



      ৬: ভ্যাটিকানের যীশু

( ইতালিতে করোনায় মৃতদের শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে )
                 

বিষন্ন তেপান্তর, যীশু কাঁদছে শূন্য একাকী
ক্ষতের তপ্ত যন্ত্রণামৌন আনত স্থবির
বিকেলের রৌদ্রের মত হারিয়ে গেছে যেন ক্রশের ফলকখানি !
হে প্রভু, মারিয়মের পবিত্র জঠর মিলে গেল যেদিন
বেথেলহাম নক্ষত্র মাঝারে, আবির্ভূত হলে এই ধরাধামে
শোনালে এই বিশ্বের বুকে প্রথম সাম্যের  দেববাণী
স্নেহের পরশে মুক্ত সেদিন কত মুমুর্ষু কত পাপী,
তুমি তো ছিলে না এক মানব সামান্য, ছিলে বুঝি ঈশ্বর আরও বেশি ;
দগদগে লৌহশলাকায় বিদ্ধ করেছিলে যেদিন দেহ-মন
অবাক বিস্ময়ে স্তব্ধ বুঝি আস্থার নিগূঢ় অবয়ব
শান্ত হল উথলিত ঝরণা, নেমে এল করুণায় তোমার দু নয়ন
সময়ের ঘূর্ণাবতে কখনো হয়েছ শ্রীকৃষ্ণ কখনো নির্বোধ হারকিউলিক্স
নিদান পেয়েছে ময়দানব, সাজাতে দগ্ধ বন আশ্চর্য ইন্দ্রপুরী
সভ্যতায় মিলে গেলে, শক্ত পেশী পাথরভাঙা কৃষক শ্রমিক,
নির্বিকার প্রশস্তি চাহনিতে
হিংস্র কাষ্ঠশলাকায় বিদ্ধ হয়েছে বক্ষ অবিরত স্বেচ্ছায়
হে মহামানব, শিবের জটা হতে নেমে এসে আজ
আরও একবার এই দুষিত ব্যাধি এই কালগ্রহে
হাসিমুখে গ্রাস করে নাও প্রতিরোধের ক্রশকল্পনায় ৷


       ৭ :করোনা— একটি প্রতিরোধের গল্প

            ( বিশ্বকবিতা দিবসে উপলক্ষ্যে )
       
মৃত্যু সাধনায় মগ্ন কাপালিক
খাবলে নিচ্ছে শব হতে ত্বক কেশ নিথর মাংসপিণ্ড
দাউ দাউ পোড়াগন্ধ, শিখর ভাঙে হোমাগ্নি ধূম্র
ছড়িয়ে পড়ছে অশরীরি বিদেহী, শরীর হতে অন্য শরীর চতুর্দিক
পুতিগন্ধময় শয়তানী আরাধ্য অট্টহাসি
মলিন হয়েছে মন্ত্রধ্বণি, মন্দির মসজিদে দেবতা নির্বাসনে
নৈবিদ্য কাকে দেব পদতলে, নাকি  ক্ষুধানিবৃত্তি আরও লাশে ?
তোমার মরণে দ্বার চূর্ণ, প্রহর গোনে লক্ষ শবদাহ
আর যদি স্পন্দন জাগাও প্রাণে, ডালা উপচায় অঙ্কুরিত ফসলে
জীবনের যাপিত গল্পে পূর্ণ হয় সভ্যতার গর্ভগৃহ
সত্যভাষ্যে বাঁচে বিক্রমাদিত্য, বেঁচে যাবে বন্দি বেতাল নিজেও !



       ৮:  আবহমান

( নারীদিবস উপলক্ষ্যে )

কালকেও তো দিনটা ছিল তোমার
কালকেও তো রঙিন আবির ছিল নীলগগনে
কালকেও ছুঁয়েছিলাম বাড়িয়ে, এই রাখলাম হাত
গেঁথে গেল রাশি রাশি মন সাতকাহনে
আজকে যদি এই ভাবনা এই অনুরাগ তোমার সবই হয়
কিছুটা রেখ, কাল যা ছিল ভরা মুঠোয় মুঠোয়
সবটুকু নিয়ে, সবের মাঝে
এই তো যেমন রাত-পোহালে, দেখব আবার সেই সূর্য কেমন উদয় হয় ৷



          ৯:  পালাবদল
                     

এতদিন যে নগ্নতা লুকিয়ে রাখতাম পোষাকের আড়ালে
যে নগ্নতার আঁশটে গন্ধে গা ঘিনঘিন করে উঠত
সে আজ আশ্চর্য দেবতা হল, আকাশছোঁয়া মন্দিরে
তিলকচিহ্ন বসল কপালের ওপর
অন্তর্বাস হতে বেরলো ক্ষুধার্ত এক তরবারী
যোনিরসের কার্নিশে যে নগ্নতা রৌদ্রে ঝুলে পড়ত
দু'হাত আদরে স্পর্শ ছড়িয়ে যেত বিছানায়
গোপন অভিসারে জড়ো হত ঋতুমতী
নগ্নতা চুরি করে দেবতা হল নিলজ্জ,
যারা নমাজ পড়ছিল, উদাত্তস্বরে মন্ত্র উচ্চারণ করছিল
ভয়ার্ত শিশুরা দেখল, পুড়ে যায় মন্দির ঘরবাড়ি
তারা ছুটে গেল দেবতার কাছে
নগ্নতাকে ঢেকে দেওয়া যায় যদি ;
নেত্রপল্লবে অর্ঘ্য সাজালো, পদ্মপাতা জুড়ে হৃদয়ে নৈবিদ্য
কচি দেহ ছিন্ন করল নিজ ত্বক, ফুটল ফুলপল্লব
দানবস্ত্রে দেবতা সেজে উঠল, সভ্য হল
কিন্তু শিশুটি নিঃস্ব হয়ে যেতে লাগল হিংস্র নগ্নতায়
আগ্রাসী দেবতার হাতে জন্ম হল সেদিন এক উগ্রপন্থার !






Comments

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা