কাজী রুনা লায়লার কবিতা



আলিপুরদুয়ার জেলার অরণ্যঘেরা একটি গ্রাম জন্মদেশ ।একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষিকার দায়িত্বে। পড়াশোনা এম. এ.(বাংলা)  বি.এড. উত্তরবঙ্গ বিদ্যালয় থেকে। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি লেখেন হৃদয়ের স্পর্শকাতর অনুভূতিময় কবিতা  , অথচ প্রকাশ ভঙ্গি অত্যন্ত ঝরঝরে  যা জিরো বাউন্ডারি গোত্রের ।

আজ  একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির ভালোবাসা সিরিজের একগুচ্ছ  কবিতা

 1: 'ভালোবাসা বৃক্ষ হয়ে ওঠো '

কিছুই পারিনি জানো তো,
 যে কথারা জমে আছে বহুকাল
 বুকের ভেতর
বলা হয়ে ওঠেনি সেভাবে...
দুহাতে ছুঁয়েছি এই মাটি,
দুপায়ে হেঁটেছি এই পথ
 ধানীমাঠ,চা বাগিচা,  অরণ্যের বুকের ভিতর
কেবলই হেঁটেছি আমি আজন্মকাল
মাধুকরী করে জমিয়েছি শব্দের খুদকুড়ো।

যে মানুষ পেতে রাখে সহজ প্রত্যয়।
যে মানুষ ভালোবাসে,ফসল ফলায়
যে মানুষ অজস্র ভাঙন বুকে চেপে
জীবনের কাছে আসে, ঘন হয়ে বসে
তার কথা বলিনি কখনো

যাদের ঘরকন্নায় লেগে থাকে
অভাবের স্যাঁতাপড়া দাগ,
হাভাতে গন্ধ নিরন্ন হাঁড়িতে
 তাদের কথা সেভাবে বলা হলো না।

সেইসব মানুষের কথা
যারা ছড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো স্বপ্নের বীজ,
 শব্দের বীজ,আলোর বীজ...

ভালোবাসা বৃক্ষ হয়ে ওঠো।

2: 'ভালোবাসা সাঁকোটির কাছে'

কোন কোন মানুষের মনের ভেতর একটা আলোছায়া উঠোন থাকে,
একটা নিজস্ব গন্ধে ভরে থাকে মায়াময় বিকেল,শঙ্খমুখর সন্ধ্যাকাল।
আর চোখের পাতায় সাজানো থাকে একটা মরমিয়া ঝুলবারান্দা।
সেখানে ভালোবাসা রঙের রোদ্দুর আঁচল বিছিয়ে রাখে বারোমাস।
মনখারাপের ঘুমোট ঘরে দমবন্ধ হয়ে এলে,
ভীড়ের মাঝে ভীষণরকম একলা হলে
যেখানে এসে দুদন্ড বসা যায় নিজের মুখোমুখি

শহরের ভীড় ঠেলে,হাজারো ব্যস্ততার জেব্রাক্রশিং পেরিয়ে
দূরত্ব শব্দটাকে আমরা যেদিন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম।
সেদিনই আমি আবিষ্কার করলাম সেই আশ্চর্য ভূখন্ড!

 তুমি সাবলীল পেরিয়ে যাচ্ছো জন্মদিন নামাঙ্কিত একটা মেধাবী সাঁকো।
জ্বলন্ত মোম আর ফুলের পাশে আমি চুপি চুপি রেখে আসছি কয়েকটুকরো যাপন।

ভালোবাসা শব্দটির ভাগ্যিস কোন বিকল্প হয়না

3: ভালোবাসা প্রসারিত করো '

চলো ঘুমোতে যাবার আগে
স্পর্শের পারদে মেপে নিই
কে কতোটা ছুঁয়ে আছি কাকে
  কতোখানি লীন হয়ে আছি
       একে অপরের অতলান্ত বুকে।

 অনিবার্য ঘুমের সময় এখন
আমরা বরং ব্যক্তিগত শোকের পোষাক খুলে ফেলি

বরং আনন্দ সাজিয়ে রাখি
             প্রেমিকের বিশ্বস্ত চোখে
সরল শিশুটির অপাপবিদ্ধ হাসিতে
বৃদ্ধ প্রপিতামহের মিহিন সাদা চুলে
সবুজ লন্ঠন জ্বেলে শুশ্রুষার মায়াময় শব্দ
ঠোঁটে করে বয়ে এনেছে যে দূরচারী নাবিক পাখিটি
গাঢ়স্বরে শিস দিতে দিতে  বলে গেলো ''ভালোবাসা প্রসারিত করো"!
অবশ্যম্ভাবী ঘাতকের বেশে
ঘুম এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব সীমায়।
ভালোবাসা প্রসারিত করা ছাড়া
 আমরা তো আসলে অনন্যোপায়!
আমাদের ঘুমের বিনিময়ে
হয়তো নিলাম হবে এইসব সুদীর্ঘ দিন দীর্ঘতর রাত
নিজস্ব নিয়মে

ঘুমঘোর কেটে যাবে শ্রান্ত পৃথিবীর
পাখির ভোরাই গানে জেগে উঠবে আমাদের সন্ততিরা
আবার নতুন করে এ পৃথিবী হয়ে উঠবে পবিত্র সুন্দর!
বিকেলের নরম রোদ গায়ে মেখে
শান্ত পায়ে হেঁটে যাবে অমর্ত্যযুগল।
সন্ধের দুয়ার খুলে প্রতিঘরে অপেক্ষা করবেন আমাদের শ্রীময়ী মা।
একে একে মুছে যাবে সমস্ত সীমানা প্রাচীর
ধর্ম আর রাজনীতির স্থবির শিকড় সটান উপড়ে ফেলে
বৃক্ষবন্দনায় ব্রতী হবে উত্তরপুরুষের দ্যুতিময় হাত।

হালকর্ষণের সহজ মুদ্রা ফুটে  থাকবে
আমাদের সন্তানের হাতের রেখায়
এ কোন স্বপ্ন নয়,এ আমার নিগূঢ় প্রত্যয়।
এসো ঘুমোতে যাবার আগে
আমরা বরং
খুলে ফেলি ব্যক্তিগত শোকের পোশাক
এসো 'ভালোবাসা' প্রসারিত করি আরো একবার।

 4: ভালোবাসার শহর

 কারা আজ প্রকাশ্য আলোয়
এঁকে রাখে সুনিপূণ হত্যার ছক
  জ্বলন্ত চিতার পাশে কার ইশারায়
 একে একে ভরে ওঠে নিরন্ধ্র কবর?
রক্তে ভেজে মানচিত্র বধ্যভূমি আজ এই দেশ
হত্যাদৃশ্যে ভরে ওঠে আমাদের সুরম্য শহর!

 সমস্ত ভাঙন ও ক্ষয় নিঃশেষে মুছে
মানুষ তবুও ফেরে মানুষের কাছে
হাত রাখে প্রগাঢ় বিশ্বাসে
জানে সমস্ত ক্ষতের নিরাময়
মানুষের বুকের গহীনে রাখা আছে।

 ঘৃণা নয় মানুষের স্বধর্ম আসলে ভালোবাসা।
ভালোবাসা বেঁধে বেঁধে রাখে
সম্পর্কের শিকড়ে দেয় অনিবার্য টান
 হত্যা আর ধ্বংসের শেষে
একমাত্র ভালোবাসাই গাইতে পারে
 অমৃতস্য জীবনের গান...

5:  ভালোবাসা রঙের রোদ্দুর

কোন কোন মানুষের মনের ভেতর একটা আলোছায়া উঠোন থাকে,
একটা নিজস্ব গন্ধে ভরে থাকে মায়াময় বিকেল,শঙ্খমুখর সন্ধ্যাকাল।
আর চোখের পাতায় সাজানো থাকে একটা মরমিয়া ঝুলবারান্দা।
সেখানে ভালোবাসা রঙের রোদ্দুর আঁচল বিছিয়ে রাখে বারোমাস।
মনখারাপের ঘুমোট ঘরে দমবন্ধ হয়ে এলে,
ভীড়ের মাঝে ভীষণরকম একলা হলে
যেখানে এসে দুদন্ড বসা যায় নিজের মুখোমুখি

শহরের ভীড় ঠেলে,হাজারো ব্যস্ততার জেব্রাক্রশিং পেরিয়ে
দূরত্ব শব্দটাকে আমরা যেদিন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম।
সেদিনই আমি আবিস্কার করলাম সেই আশ্চর্য ভূখন্ড!

 তুমি সাবলীল পেরিয়ে যাচ্ছো জন্মদিন নামাঙ্কিত একটা মেধাবী সাঁকো।
জ্বলন্ত মোম আর ফুলের পাশে আমি চুপি চুপি রেখে আসছি কয়েকটুকরো যাপন।

ভালোবাসা শব্দটির ভাগ্যিস কোন বিকল্প হয়না।

6: ভালোবাসা ঈশ্বরের সমনাম

'পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে '
আমাদের আবার দেখা হবে কোন এক ব্যস্ত শহরে।
দেখা হবে সূর্যাস্তমাখা নদীটির তীরে
প্রিয় মানুষের চোখে দূরতমা নারীটি খুঁজে পাবে নিজস্ব বসত
পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমাদের সন্ততির পায়ে পায়ে লেখা হবে ব্যারিকেডহীন উড়ানের গল্প

 পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমাদের সন্তানের চোখে আঁকা হবে এক জিরো বাউন্ডারী মানচিত্র।ভুবনগাঁয়ের।

সমস্ত দেবতাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে সুন্দরের আরাধনায় বসবে পদবীবিহীন প্রতিটি মানুষ।

মানুষের হাতের মুঠোয় ধরে থাকা মানুষের অলৌকিক আঙুল হতে চুঁয়ে পড়বে ভালোবাসার অক্ষয় আলোক।
 শিশিরের আখরে বসন্তের সবুজ পাতায় ভোর লিখবেন বসুমতী।
আর এইসব দৃশ্যের পাশে চুপিসাড়ে একশো আট নীলপদ্ম রেখে যাবেন স্বয়ং ঈশ্বর!

Comments

  1. কবি ,মাননীয়া রুনা লায়লার ছ'টি কবিতা ভালোবাসার বৃক্ষ নয় ,মহীরুহ l বৃক্ষ গান জানে কিনা জানিনা ,তবে এ বৃক্ষ গান গেয়েছে l পৃথিবীর অসুখ সারিয়ে আগামী একশ বছর মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার পারিজাত গান l ভালো থাকুন কবি l ভালো থাকুক জিরো বাউন্ডারি ...l

    ReplyDelete
  2. ভালোবাসলাম ভীষণ ভালোবাসলাম আপনার ভালোবাসার কবিতার বৃক্ষরাজি।মন ছুঁয়ে গেলো ভালোবাসার অপার আনন্দে। শুভেচ্ছা রইলো।

    ReplyDelete
  3. কবিতায় মুগ্ধ হয়ে ছিলাম।
    শুভেচ্ছা কবি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা