আমিনুল ইসলামের কবিতা
আমিনুল ইসলাম (কবি ও টেক্সট রাইটার) থাকেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে । তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কবিতা চর্চা করে চলেছেন । কবিতা পাক্ষিক, সমিধ সহ একাধিক পত্রিকায় লিখে চলেছেন । ভুবনডাঙা - নামে একটি web magazine সম্পাদনা করেন ।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির ছয়টি কবিতা ।
১) অনিকেত বর্ণনা
ওইদিকে কিছুটা পথ বেলাগাম
অনতিবিলম্বে পাথরে সূর্য গড়িয়ে এলে
ডানামেলে লাল সাইকেল
সহসা গোড়ালীর ঘাম শুঁকে ফিরছে ঈগল
একটাও সাদাবক বয়ে আনেনি পিয়ন
তবুও তাল একপায়ে এখনো দাঁড়িয়ে মন্থর অপেক্ষায় স্থবির তারা হয়ে জ্বলে
পায়ে পা রেখে পাথরে খোদাই করা প্রাণ
সত্যান্বেষণ থেকে উড়ছে কাকের পালক
আলোর স্নানঘর থেকে কয়েক ডেসিবল দূরত্ব চেঁটে বসে আছে দাঁড়ি, কমা, বিষ্ময় ইত্যাদি সাবালক বিরাম চিহ্নের জমায়েত
এসব উপেক্ষা করেও সবুজ ভেলভেটে ছুটছে খরগোশ
ভিজে বেড়ালের চামড়ায় অনুশোচনাহীন গাছপালার শাখামূল ক্রমহ্রাসমান সততার আলোয় ধোঁয়া অক্ষরের কন্ঠস্বরে সত্যতার জ্বর
জড় ও সজীব ধর্মপ্রাণ পদার্থের ভেতর তড়িৎ গতিতে বহমান বেমালুম অস্বীকার
এখন অনেক বাক্য ক্ষয়ের মাত্রায় পৌঁছে যাবে দুটি ধাতব ঠোঁট এবং স্তনের বৃন্তে ফুটে উঠবে ঢেউয়ের আবদার আর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতির তেলচিত্র...
২) ইঁদুরের বোধবুদ্ধি
গ্রাফিক্সে মেরুদণ্ড ফুটে উঠলে উপস্থিত বন্ধুগন
পাশাপাশি ফুল খুঁজবেন না কারণ এ বর্ষায় মেঘ বড়োই কৃপণ
বিলাসী বাগিচায় প্রাণভ্রমর গুণগুণ ভাসিয়ে দিলে তুমি সেল্ফিস্টিক বাড়িয়ে দাও!
আকাশে অপরাহ্ন সেজে উঠলে কার কী এসে যায়! তোমার উদাসীন অভয়নগর, একটা তিল তাল হয়ে ওঠার সোস্যাল অন্ধকারে হারিয়ে যায় ঘোমটার ভীড়
আজন্ম বীজ অঙ্কুরিত হতে হতে- অঙ্কুর অজান্তেই বীজ মন্ত্র বপন করে বুকে-
বুঝে ওঠার সময় অন্তর্বাসের সন্ধ্যায় ডুবে যায় এই মহানগর ভীড়ের মরশুমে রজনীগন্ধা বড়োই লাজুক হাসির নোটিফিকেশন জারি করলে মহামান্য আদালত নজরান্দাজ করেন আলোকিত সূর্যের ফসল
মান্যবর! এসবের হিসাব রাখতে অক্ষম তাঁতঘরে তাঁতীর কী দায় বলুন?
মুঠোর প্রতিটি ক্লিক সাজিয়ে রাখছে প্রিয়তম
অন্ধকার আর ফ্লাশের আলোয় সদ্য স্নান সেরে নেয় রুফটপের সুইমিংপুল...
৩) অস্তরাগ
ডাকমাসুলসাটাজিভে তুমি ইচ্ছেখুশি অক্ষর খুবলে নিতে পারো, যখন যাখুশি ফুটিয়ে তুলতে পারো
এখন তোমার ইচ্ছাধীন খাঁকি পোশাকের বোতামে লুকোচুরি করছিল গান্ধীবাদী কিছু ভ্রমর
উড়ে উড়ে যারা শুধুই মধু আনে ...
নিমফুলের গন্ধজুড়ে সোনালী রোদ্দুর দুপুরময় ক্ষয়ে ফেলে তার রং
নিয়মবহির্ভূত বলে যে শব্দ ছিল নিরর্থক হয়েছে কথা বলা তাই গাছের পাতায় ঝরছে হলুদ বর্ণান্ধ্যতা
সেখান থেকেই দ্বিপান্তর! মৃত্যুর দিনগোনে কয়েদির অবশিষ্ট হাতের আঙুল, যে আঙ্গুল বন্দুকের স্টিগার ছেপেছে বুকের উপর সেও ঝুলেছে ন্যায়ের স্কেলে- নিরপেক্ষ স্তম্ভথেকে আজ খসে পড়ে পায়রার পালক আর ডিমগুলো শস্য দানায় ছড়িয়ে দেয় সূর্যাস্তের প্রোটিন....
৪) কাম, ভালবাসা ও পাপ
বালির হৃৎপিণ্ড যখন শিথিল হয়ে পড়ছে
পা দুটো এগিয়ে যাচ্ছে ম্যারিনার আঞ্চলিক উরুতে
ধীরে ধীরে নিতম্বের নিষিদ্ধ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রুক্ষ বাতাস-
কতশত প্রেম পতঙ্গ ডানায় এঁকে চলে স্রোতের মর্মান্তিক মৃত্যু শোক!
শব্দ ভেঙে, এসময় সব দৈনতাদের মুক্তি দিলাম।
ব্রাউজারে, মুঠো ভর্তি বালির উড়ন্ত পাখায় সোনালী রংয়ের ব্লাউজ-
আমি তো কাম ছাড়া অন্য কোথাও যেতে চাইনা,
যেহেতু- নির্দ্বিধায় শরীর বিলিয়ে দিতে তুমি আকন্ঠ মদ্যপান থেকে সিগারেটের উড়ন্ত ব্যাপ্তি জুড়ে মায়াবী আদ্রতার নেটওয়ার্ক।
আর, অনন্ত ছেলেবেলা ছুটছে ডান বাম উত্তর ও দক্ষিণের আলোয়।
পাতাগুলো বন্দি নোটবুক থেকে মুক্তি পাওয়ার অসম্ভব উত্তেজনায় বিদ্ধস্ত করতে চায় আমাকে-
নিঃস্ব, দুহাত উপরে তুলি তোমার মহিমায়-
এসময়, তথাকথিত ভালবাসা ও পাপ সমার্থক হয়ে পড়ছে আমার কাছে...
৫) পোকা জন্ম
ঝিঁঝিঁ পোকার অন্ধকারে টাঙিয়ে দিলাম জোনাকি গৃহপালিত মাকড়সার সংসার জলের মেরুদণ্ডে ঘুমিয়ে থাকে নিরবিচ্ছিন্ন বর্ষাকাল
পোকা জন্ম থেকে মুক্তির অপেক্ষায় অন্ধকারের শ্রুতিমধুর উপন্যাসে বাউল হলাম কই! শুধু বাবলার আঠা হয়ে বন পিঁপড়ের কামড়ে স্বাস্থ্য সচেতন গোবর গণেশ মার্কা আপেল হয়ে খুঁজছি ব্যয়বহুল তীর্থস্থল
শাওয়ার জেলের আড়মোড়া ভেঙে একটি বৃষ্টিদিন গান শোনায় আর তোমার রুফটপ-সুইমিংপুলে পূর্ণিমার শরীরে গলে পড়ছে তরল জোনাকি সেখানেই সুপ্ত হয়ে ওঠে আলোর অন্তরঙ্গতার ফসিল যা এখনো পিরামিডের গোপন উসখুস হয়ে ভাসে সবুজ পাতার মতোই কানেকানে কথা আঁকে বকফুল
গোলাপের পাপড়িতে আমিষের শিখা জ্বাললে সব নিরামিষ প্রেমিক-প্রেমিকা ভুলে যান প্রেম
মুল্যবোধের তো বিনিময় ঘটেনা! তার বিনিয়োগে কখনই গড়ে ওঠেনি শিল্পের ছাই মনের আনন্দে শিশুর মুখে নিপিল হাত পা ছুড়ে খেলার অভ্যাস
আমি পিঠ, মাথা চুলকায় চুলকাতে চুলকাতে ছিড়ে ফেলি পুরোনো যা কিছু কথার ভিড় ঠেলে যে দরজা জানালা হাট করে খোলা হয়েছে সেদিকেই তাকিয়ে থাকুন- যারা বেড়িয়ে যাচ্ছে, তারাও নাগরিক শুধু পোকাদের ব্যাথা বেদনায় কোনো ঢেউ ভেসে ওঠে না ওদের জলাশয়ে!!
৬) সর্বনামহীন ক্রিয়াপদ
যাদের স্থায়ী ঠিকানা নেই তারাই পরিযায়ী
অস্থায়ী পায়ে ভিন্ন মাটির ছাপ
চেনা ও অচেনার মাঝে কোন সিক্রেট দেয়াল নেই
ভেতরের ছট্ফট্ থেকে উড়ে যাওয়া তার স্বভাবসিদ্ধ
বলেই ভাবনা স্থবির নয় অতএব ধূপ জ্বেলে অপেক্ষা করছি নামগন্ধহীন এক ফিরিওয়ালার
পথের বাঁকেই কিছু গন্তব্য চিত্ হয়ে সাঁতরে যায়
নিরালা ফুলের গন্ধে মিশে যায় তার ক্রিয়াপদ
সর্বনামহীন শরীর থেকে বেড়িয়ে আসে ডাকপিয়ন
একটা ধূসর চিঠি ও নদীর গল্পে জল অনেক দূরে বয়ে যায়...
আর এযাবৎ ঢেউয়ের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত বলেই কিছু ক্রিয়াপদ লিখে ফেলে বাতাস ও জলের অস্থির সময়!
Comments
Post a Comment