সাহিন আক্তার কারিকরের কবিতা


সাহিন আক্তার কারিকর , পিতা মোস্তাফা কারিকর , মাতা জাহিরা বিবি । টাকি গভঃ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।  উত্তর 24 পরগণার হিঙ্গলগঞ্জ থানায় বাড়ি।  মূলত জিরো বাউন্ডারি WhatsApp group থেকেই কবিতা লেখার উত্থান।  সহজ সরল ভাষায় অনুভূতি প্রবণ কবিতা হৃদয়ের অন্দরমহলে তৈরি করে আবেগ । এই হল সাহিনের কবিতা।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে তরুণ এই কবির একগুচ্ছ কবিতা



১ : অসুখি শহর লজ্জাবতী হয়ে উঠছে


হোমযজ্ঞ করে সবল করা হল ৯:৩০...
                                                   বেলা আর অবেলাকে নিয়ে জানা নম্বরের ব্যস্তনুবাদ, উনুন জ্বলচ্ছে তো...?

হিসাব হল চাল- গম - আটা - তেল - আলু- পেঁয়াজ ঝলকে ঝলকে ঝলসে উঠছে মোবাইল ফ্লাস।

            ... ভোটের স্লিপ প্রতিটি ঘরে ময়নাতদন্তের জন্য প্রস্তুত, শুধু ত্রাণ এল না!
                                    নরম পা
                                               রাজপথে
                                                             হাঁটছে...

চিৎকার করে লকডাউন,
মানতেই হবে না মানলে সামাজিক হওয়ার যোগ্যতা নেই।

ঠিক মত গনিত, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস জানা নেই
ব-কলমের হিসাবে কতটা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফেরার ইচ্ছা নিয়ে রাস্তায় মৃত্যু হয়।

ব্যাঙ্কের সাথে অশোকস্তম্ভের স্বাক্ষর জনমজুরের নেই
               এমনকি থাকার কথা ও না
               শুধুই খাওয়ার প্রয়োজন।
স্বৈরাচারী শাসন আর শোষনের মাত্রা কত ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে, হাঁড়ির জল গরম হবে...

ইশ্বর জানে, আমার মৃত্যুর ভয় নেই, ক্ষুধার ভয় করি
মৃত্যু চির সত্য
তাকে কি করে উপেক্ষা করি।

এই স্বপ্নে আমি রাস্তায় বেরিয়ে সবুজ পৃথিবী দেখি।


২ : প্রহর গুনছে পেঁচা

আকাশে ফানুস হয়ে জ্বলছে ফসফরাস তারকাদের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ছায়া পথহীন পুর্নিমার চাঁদ ।

                    কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছে
                    গরিব মানুষের জন্য...

পাস্তা আর পনিরের ভক্তিতে ইশ্বর নাচছে, পশুবলির এক চার চার তিলক লাগিয়ে মানুষ পেটালে
ধর্ম বাঁচে।

                     চিংড়ি মাছ ধর্মনিরপেক্ষ
                     ইশ্বরের কাছে বিচার..

মাথায় হাত রেখে আমাকে বোঝালেই স্বপ্ন বুনতে বুনতে জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ হাতকরির শব্দ ।

মানুষ হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে মান আর হুস হারিয়ে মানবিক হয়ে উঠছি,পাওয়া জিনিসের প্রতি আধ্যাত্মিক সংকল্প

                     ... অধিকার বুঝে নেব।


৩ : বিজ্ঞাপন

আমার বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র
তুমি চাই...
বিজ্ঞাপনে সবুজ পৃথিবী।

হন্যে হয়ে পাখি আকাশে খুঁজছে
                 মাছ জলে খুঁজছে
                 প্রজাপতি ফুলে খুঁজছে
                 বন্যপ্রাণী বিশুদ্ধ মাটি খুঁজছে...

           মানুষ পৃথিবীতে খুঁজছে সুখ।

মেঘ, রামধনু, বাতাস, বৃষ্টি, বজ্রের সমাবেশ হল পরশু
পৃথিবীর খোঁজে দিশেহারা হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে।

ভীষণ গরম দূগন্ধ ঘাম
একমাত্র তুমি চাই,
বলে চিৎকার করে কারখানা খুলছি আধুনিকতার।

পৃথিবী আধুনিক
আজন্ম তার পরিবর্তনের পরিধি।

যুক্তি অসাড় গরীবের কাছে
তারা ও ছুটছে লোকালয় থেকে শূন্য নগর

          পৃথিবী ঘুরছে পেটের জ্বলায়।

ঠিক প্রেমিকার মত
যে নিজের থেকে নিজেই নিখোঁজ হয়
কেউ খুঁজে পায়না তাকে...


৪ : অসমাপ্ত গল্প

আমি না পাওয়ার গল্প করি না
পেয়ে যাকে হারিয়েছি তার কথা বলি...

কলঙ্ককে ঘৃণা করার উপপাদ্য বাদ থাক
ঠিক যেমন -
বিয়ের পরে সংসার চালানোর জন্য সময়ের ঘাটতি ঘটে।

ঠোঁটের ওপরে যে আলপনা এঁকেছি রাত জেগে
সেই চিত্র ভোলা আমার সম্ভব না।
তুমি বীজগনিত সমাধান এ এক্স ওয়াই ধরে হিসাব মিলিয়ে যাও...

সমস্ত শরীর স্পর্শ অভিমান ভাঙার শব্দ শুনি
বিশ্বাস,
           বাড়তে থাকে কেন্দ্রের গভীরতা।

সূর্য-চাঁদ-নদীর যেমন সম্পর্ক নিঃশব্দে বেড়ে চলে
আমি সেই ভালোবাসার কথা বলি।

সময়ের কাছে নয়, সত্যের কাছে
গলা উঁচু করে ভালোবাসার গল্প করি...

দু'জন =মাইনাস টু
তুমি গৃহিনী আর আমি সন্ন্যাস।


৫ : আমাকেও বদলাতে হবে প্রিয়।

অনেক দিন আমাদের আর কথা হয় না
পৃথিবী অচল, আমি বলছি না...

আগন্তুকদের কিছু ভীড় থেমে থেমে চিৎকার করছে
          আমাকে ছুটি দাও প্রিয়।
অমল কান্তি নেই, রানার নেই
দরজা আর কত কাল খোলা রাখব বলতে পার?

ভালোবাসতে বাসতে আজন্ম সন্ন্যাস হয়ে পথ হাঁটি
লালনের দেখা নেই,
সংসার মায়ার যোজন দূরত্বে আমার ঘর।

          শুধুই ভালোবাসা আছে...

প্রখর সূর্য তাপ
আমার একটা ছাতার প্রয়োজন
তার জন্য পয়সা...

     বেকার প্রেমিক পছন্দ, বেকার স্বামী কখনই না।



আমি চড়ুই পাখির ঠোঁট থেকে ক্ষুদ্র
শষ্য ফিরিয়ে আনতে পারি...
তোমাকে পারব না।

        তোমার হৃদয় আকাশ
        আমি মাটির ভালোবাসি।


৬ : জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে বেদনাদায়ক তুমি...

জ্যামিতিক জ্ঞানের রূপকথায় প্রতিদিন গাছ ভাঙা দূরত্বে ত্রিকোণমিতির সূত্র ভুল করে উদিত সূর্য হব আমি...

মানবতার আস্থা হারিয়ে বাস্তবতায় মিশে যাবে প্রেম
শূন্য রোমান্সের অধ্যায়
স্বর্গের হূর ডালিম হলে খুশি , এ নামে
মোনালিসা কাঁদবে না...
     
                দ্বিমাত্রিক বৃত্তের কেন্দ্রভূমি তুমি।

সমস্ত জড়তা মুক্তি দিই খোলা আকাশ ঠিকানায় ,
কালো ধোঁয়া  মিশে যায় রামধনুর দেশে
শত বঞ্চিত মানুষের অভিমান।
... অবশেষে ক্রমশ  মাটি হয়ে আসছে শরীর।

জেনে গেছি ব্যর্থতা মৃত্যু নয়- সাফল্যেই সব জয়  নয়
যা দীর্ঘস্থায়ী তাই স্মৃতি...

স্মৃতি সবসময়ই বেদনাদায়ক
শিক্ষানবিশ আবেগি না হলে
এই চিত্রের বাস্তব ছোঁয়া তোমার অসম্ভব।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা