মন্দিরা ঘোষের কবিতা
কবি পরিচিতিঃ মন্দিরা ঘোষ
জন্ম বর্ধমান জেলায় এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে।শৈশব থেকেই যৌথপরিবার ও সাহিত্য আবহে বেড়ে ওঠা।প্রকৃতির সাথে নিবিড় যোগাযোগ ও কবিতার লালন তখন থেকেই।পড়াশোনা বোলপুর ও পরে বর্ধমানে। বর্তমানে বিবাহসূত্রে হাওড়ার শিবপুরে বসবাস।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, লিটিল ম্যাগাজিনে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে পরিচিত মুখ।
তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও দুটি সংকলন রয়েছে।
কাব্যগ্রন্থ গুলি হলঃজ্যোৎস্নাশরীরের ছবি,মিশুক শব্দের মলাট ও অম্বালিকার কিশোরীগন্ধ।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা
১ : লকডাউনের পাতা থেকেঃ
ছবি
রোদ আর ছায়ার মাঝের ফাঁক থেকে
উঠে আসছে
হতাশ সকালের মুখ
টুকরো টুকরো মানুষ
হাঁটু মুড়ে আছে ছায়ার অন্ধকারে
নৌকোঘরে কোনো ভোর আঁকা নেই
গাছের অনুভূমিক ডালপালা
ডুবে যাচ্ছে গ্রীষ্মের আগুন নাভিতে
ফুলের শরীরে
সংগীত নেই আর
অদূরে নতজানু পৃথিবী
ভুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ ও কুকুর
আঙুলে ক্ষমার চিহ্ন মুছে
সরে যাচ্ছেন ঈশ্বর এবং পাখি
ধ্বংস
কুণ্ঠা কুড়িয়ে নিচ্ছে মেঘ
দোমড়ানো মানুষের কান্না
বয়ে নিয়ে যাচ্ছে শোকসন্তপ্ত বাতাস
পৃথিবীর দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসে
দুলে উঠছে জল
গির্জার ভাঙা পাঁচিলে ঝুলে আছে
অসমাপ্ত বিকেলের ঘন্টাধ্বনি
শিল্পীর দুহাতে ধ্বংসের মাটিগাছ
কাদামাখা জল থেকে হাত তুলছে
ভয়ে নীল হতে থাকা
শিশুর ছোট্ট জিজ্ঞাসা
'এই কি পৃথিবীর শেষ, বাবা?'
প্রচণ্ড ঝড়ে দুহাতের তালুর আড়ালে
কাঁপছে মোমবাতি
কান্না ভেঙে ভেঙে ক্রমশ
নীলাভ হচ্ছে পৃথিবী
২ : ভোরের সাক্ষাৎকার
"Somos nuestra memoria"
"আমরা হলাম আমাদের স্মৃতির সমষ্টি"
ভোর ছড়িয়ে দিয়েছে উপদেশ মরা অতীতকে জাগিয়ে ভবিষ্যতের নাট্যরূপে।সংলাপে জড়িয়ে আছে ভয়ের কাগজ, সাদা আর উদ্দেশ্যহীন।
দিন তার শাড়িতে মেলে দেবে এবার মনখারাপের হলুদজ্যোৎস্না।
কলমের দীর্ঘশ্বাসে ভরে যাবে আকাশ।
পৃথিবীর বুকে হারিয়ে যাওয়া নদীটির নাম ফিরে আসবে আবার।
নিঃসঙ্গতার ঝড় অলিগলি খুঁজে চেপে বসবে একলা কোনো বুকের ভূগোলে।
ঘুমহীনতার জীবানুরা দখল নেবে তোমার চোখ।স্মৃতি সরে যাবে।
সমষ্টিগত স্মৃতির যোগফলে যে আমি,মুছে যাবে সেই আমি সর্বনাম।
হাতের ওপর হাত রাখা নিমেষে শূন্যতার গিঁট। খুলতে খুলতে পেরিয়ে যাবো প্রিয় কবরের গান। জড় মনের তালুকে দখল নেবে আগাছার মত সমাধির স্বপ্নরা।সব অকপট জানলা খুঁজে নেবে স্বার্থের গোপন সিড়ি।
সব ধুলোঝড় তোমার একার। জড়তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে জারি রাখো
তোমার সন্ন্যাসীভোরের সাক্ষাৎকার।
৩: ওরা
এই প্রস্তাবনার কথা লেখা হোক।ঘুম ভাঙুক সেই সব অজানা গুপ্তপর্বের,
যারা এখনো ভাতের মোহ থেকে মুছে ফেলতে পারেনি লালা,দূরত্বকে গুটিয়ে নিয়েছে বুড়ো আঙুলের ডগায়,পায়ের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে এবড়োখেবড়ো পাথরের সংক্রমণ
,চোখে তবু জেগে আছে বিন্দুর মত টিপ,ছাপা শাড়ির নোন্তা ঘামের আড়ালে
সংগমের ভ্যাপসা স্বাদ,টোকো আমানির মতো পাকস্থলীর করুণায় গেঁজে যাওয়া মদের মাতলামি,নরম আর কচি পাতার মতো রোদমাখা মুখগুলির মায়া।
এসব ভুলিয়ে রাখছে তোমার পেশির অসুখ,খুন করছ খিদের হা হা চিৎকার,ছুটছ তুমি, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া তোমার শরীর থেকেআলাদা করছ একে একে তোমার সঞ্চয়।
চলতে চলতে খুলে ফেলছ তোমার মুখ নাক, বুক,পেট,যৌনাঙ্গ।ব্যথায় ককিয়ে উঠছে তোমার অবসাদ তবু চোখ তোমার এখনো সক্রিয়, বাঘের রক্ত দিয়ে কৌমের যে ইতিহাস লিখেছ,সেই ভূমিকার বাতাস মেখে দাঁড়িয়ে আছে এই মাটি, গাছ, পাথর।
দ্যাখো যন্ত্রণায় তাদেরও নীল হয়ে যাচ্ছে শরীর। তাদের অক্ষম ভাঙাচোরা অসহায় মুখ তোমাকে স্পর্ধী করুক, তুমি ঈশ্বর হয়ে ওঠার রাস্তায় তোমার রক্ত লালা আর বীর্যের বীজ পুঁতে রাখো।
একদিন সব শান্ত হলে আমরা মনে রাখব এই নিবিড় যুদ্ধে শত শত শ্রমিকের আত্মোৎসর্গের ইতিহাস।
জন্ম বর্ধমান জেলায় এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে।শৈশব থেকেই যৌথপরিবার ও সাহিত্য আবহে বেড়ে ওঠা।প্রকৃতির সাথে নিবিড় যোগাযোগ ও কবিতার লালন তখন থেকেই।পড়াশোনা বোলপুর ও পরে বর্ধমানে। বর্তমানে বিবাহসূত্রে হাওড়ার শিবপুরে বসবাস।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, লিটিল ম্যাগাজিনে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে পরিচিত মুখ।
তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও দুটি সংকলন রয়েছে।
কাব্যগ্রন্থ গুলি হলঃজ্যোৎস্নাশরীরের ছবি,মিশুক শব্দের মলাট ও অম্বালিকার কিশোরীগন্ধ।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা
১ : লকডাউনের পাতা থেকেঃ
ছবি
রোদ আর ছায়ার মাঝের ফাঁক থেকে
উঠে আসছে
হতাশ সকালের মুখ
টুকরো টুকরো মানুষ
হাঁটু মুড়ে আছে ছায়ার অন্ধকারে
নৌকোঘরে কোনো ভোর আঁকা নেই
গাছের অনুভূমিক ডালপালা
ডুবে যাচ্ছে গ্রীষ্মের আগুন নাভিতে
ফুলের শরীরে
সংগীত নেই আর
অদূরে নতজানু পৃথিবী
ভুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ ও কুকুর
আঙুলে ক্ষমার চিহ্ন মুছে
সরে যাচ্ছেন ঈশ্বর এবং পাখি
ধ্বংস
কুণ্ঠা কুড়িয়ে নিচ্ছে মেঘ
দোমড়ানো মানুষের কান্না
বয়ে নিয়ে যাচ্ছে শোকসন্তপ্ত বাতাস
পৃথিবীর দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসে
দুলে উঠছে জল
গির্জার ভাঙা পাঁচিলে ঝুলে আছে
অসমাপ্ত বিকেলের ঘন্টাধ্বনি
শিল্পীর দুহাতে ধ্বংসের মাটিগাছ
কাদামাখা জল থেকে হাত তুলছে
ভয়ে নীল হতে থাকা
শিশুর ছোট্ট জিজ্ঞাসা
'এই কি পৃথিবীর শেষ, বাবা?'
প্রচণ্ড ঝড়ে দুহাতের তালুর আড়ালে
কাঁপছে মোমবাতি
কান্না ভেঙে ভেঙে ক্রমশ
নীলাভ হচ্ছে পৃথিবী
২ : ভোরের সাক্ষাৎকার
"Somos nuestra memoria"
"আমরা হলাম আমাদের স্মৃতির সমষ্টি"
ভোর ছড়িয়ে দিয়েছে উপদেশ মরা অতীতকে জাগিয়ে ভবিষ্যতের নাট্যরূপে।সংলাপে জড়িয়ে আছে ভয়ের কাগজ, সাদা আর উদ্দেশ্যহীন।
দিন তার শাড়িতে মেলে দেবে এবার মনখারাপের হলুদজ্যোৎস্না।
কলমের দীর্ঘশ্বাসে ভরে যাবে আকাশ।
পৃথিবীর বুকে হারিয়ে যাওয়া নদীটির নাম ফিরে আসবে আবার।
নিঃসঙ্গতার ঝড় অলিগলি খুঁজে চেপে বসবে একলা কোনো বুকের ভূগোলে।
ঘুমহীনতার জীবানুরা দখল নেবে তোমার চোখ।স্মৃতি সরে যাবে।
সমষ্টিগত স্মৃতির যোগফলে যে আমি,মুছে যাবে সেই আমি সর্বনাম।
হাতের ওপর হাত রাখা নিমেষে শূন্যতার গিঁট। খুলতে খুলতে পেরিয়ে যাবো প্রিয় কবরের গান। জড় মনের তালুকে দখল নেবে আগাছার মত সমাধির স্বপ্নরা।সব অকপট জানলা খুঁজে নেবে স্বার্থের গোপন সিড়ি।
সব ধুলোঝড় তোমার একার। জড়তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে জারি রাখো
তোমার সন্ন্যাসীভোরের সাক্ষাৎকার।
৩: ওরা
এই প্রস্তাবনার কথা লেখা হোক।ঘুম ভাঙুক সেই সব অজানা গুপ্তপর্বের,
যারা এখনো ভাতের মোহ থেকে মুছে ফেলতে পারেনি লালা,দূরত্বকে গুটিয়ে নিয়েছে বুড়ো আঙুলের ডগায়,পায়ের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে এবড়োখেবড়ো পাথরের সংক্রমণ
,চোখে তবু জেগে আছে বিন্দুর মত টিপ,ছাপা শাড়ির নোন্তা ঘামের আড়ালে
সংগমের ভ্যাপসা স্বাদ,টোকো আমানির মতো পাকস্থলীর করুণায় গেঁজে যাওয়া মদের মাতলামি,নরম আর কচি পাতার মতো রোদমাখা মুখগুলির মায়া।
এসব ভুলিয়ে রাখছে তোমার পেশির অসুখ,খুন করছ খিদের হা হা চিৎকার,ছুটছ তুমি, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া তোমার শরীর থেকেআলাদা করছ একে একে তোমার সঞ্চয়।
চলতে চলতে খুলে ফেলছ তোমার মুখ নাক, বুক,পেট,যৌনাঙ্গ।ব্যথায় ককিয়ে উঠছে তোমার অবসাদ তবু চোখ তোমার এখনো সক্রিয়, বাঘের রক্ত দিয়ে কৌমের যে ইতিহাস লিখেছ,সেই ভূমিকার বাতাস মেখে দাঁড়িয়ে আছে এই মাটি, গাছ, পাথর।
দ্যাখো যন্ত্রণায় তাদেরও নীল হয়ে যাচ্ছে শরীর। তাদের অক্ষম ভাঙাচোরা অসহায় মুখ তোমাকে স্পর্ধী করুক, তুমি ঈশ্বর হয়ে ওঠার রাস্তায় তোমার রক্ত লালা আর বীর্যের বীজ পুঁতে রাখো।
একদিন সব শান্ত হলে আমরা মনে রাখব এই নিবিড় যুদ্ধে শত শত শ্রমিকের আত্মোৎসর্গের ইতিহাস।
খুব সুন্দর মোলায়েম পরশ রেখে গেল।
ReplyDeleteনৌকো ঘরে ভোরের গান কবি-কেই গাইতে হয় !
ReplyDeleteসব কবিতাগুলিই খুব ভালো লাগল।
ReplyDeleteআর শেষ কবিতাটি দুর্দান্ত।