সুলগ্না রায়ের কবিতা


লেখক পরিচিতি-কবি সুলগ্না রায়ের জন্ম ১৯৯২ সালে ভারতের কলকাতা মহানগরীর নিকটবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়,কাঁটাতারের বিভেদ অতিক্রম করে  একুশের রক্তকমল বাংলাদেশের সাথে সখ্যতা স্থাপনের ইচ্ছে বহুদিনের,লেখিকার প্রথম প্রকাশিত যৌথ কাব্যগ্রন্থ "হৃদয়ের ক্যানভাস" একুশের বইমেলা,সাল ২০১৭;এছাড়া ও দীর্ঘদিন তিনি প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন,বর্তমানে লেখিকা নিজ জেলায় একটি ইংরিজী মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে কর্মরত আছেন৷
আজকের  একক উদযাপনে থাকছে  সুলগ্না  রায়ের  একগুচ্ছ কবিতা ৷


১: আমার শহর

এখন শহরের বিকেলে আর গোলাপী রোদ পড়েনা,
জীবনানন্দ চলে গিয়েছে আজ প্রায় বহুকাল
নলবন,ভিক্টোরিয়ার বেঞ্চ ছেড়েছে প্রেম প্রেম খেলা,
হুগলি সেতুর আলোকমালা ডুবেছে গঙ্গার অন্তঃজলে
নন্দন,স্ব ভূমির আড়ালে আঁতেল আর কেউ থাকেনা,
উঁচু উঁচু সব বাড়ির থেকে আলোর রেশ মুছে যায়
এককদিন এককরাতের মহোৎসবে,
আর অন্যদিকে শহর জুড়ে কেবল ফেস্টুন সমাহার
দাদাদেরও আর দেখিনা কাঁধে কিট নিয়ে মাঠে যেতে,
এখন আর শহরে আসেনা কাশ্মীরি ফেরিওয়ালাদের দল
রাঙা বেলুন আর ট্রাম লাইনগুলো এখনো বাসা বাঁধেনি,
শহরের দেওয়ালে লেখা হয়না ইনক্লাব জিন্দাবাদ,
সাম্রাজ্যবাদ,দূর্নীতি নিপাত যাক
তবু শহরটা আমার,আগের মতোই আমার
এ শহরে আমি ঘুমোইনি বহুদিন,বহুরাত
মেকি রোদচশমার আড়ালে ঘুমোইনি বহুদিন,বহুরাত
প্রেমিক,তোমার প্রতীক্ষায় ঘুমোইনি,
বহুদিন,বহুরাত।


২: কবিতা তোমার জন্য

বসন্তের ওপারে,রঙিন আবিরের শেষটুকু
ছোঁয়া মনের কিনারে
জ্যোৎস্না,নদীস্রোত বাকিটুকু,
কুহুতান গহীন অরণ্য আঁধার;
বসন্তে আসে ফিরে ফাগুনেরই সুখ
সখা রাঙাবো তোমায় প্রেম অন্তর
শুধু মনে রেখো,আবির রঙ ছিলো শুধু
আমি রইবো অপেক্ষায় জন্ম জন্মান্তর।


৩: বিবর্ণ ইথার অথচ

নিঃসঙ্গ জ্যোৎস্নায় সাপিনীর অন্ধকার
আমাকে বেষ্টন করার মূহুর্তে জেগে উঠি
নশ্বর,ভঙ্গুর,রিক্ত চেতনায় রাতপাখি হাহাকার
সম্মুখের পথ জুড়ে শায়িত,এক মৃত বৎসর
এই পাথর হৃদয়ের একরাশ ছাইরঙা বিরহ
মর্মভেদী এক আর্তনাদ,
কেউ কি পড়তে পারো,এই শহরের শিলালিপি
আধভেজা শার্সির পাশে একলা আমি
বেশ কিছুটা দূরে গির্জার ঘন্টার শব্দে তন্দ্রা ভাঙে
নিভু নিভু মোমশিখা
টেবিলের কোনে জমা হওয়ার হলদেটে কাগজ,আর নিথর বিরহ
অরণ্য ,আজ বড্ড একলা আমি
এই শহর যেন প্রাণ হারিয়েছে বিস্মৃতির অতলে
নিস্তব্ধ,নির্বিকার
কাছে এসো একবার
হারিয়ে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো
হাতে হাত রেখো
আমার ছেঁড়াপাতা স্বপ্নগুলো ফিরিয়ে দিও অরণ্য,
বুকভরা ভালোবাসা দিও
তোমায় ছাড়া যে বড়ো একা আমি
সত্যিই বড়ো একা ৷


৪: মালাউন

রুক্ষ হাওয়ার তোড়ে অতীত স্মৃতির অন্তমিল
এক একটা পালক খসে পড়ে সময়ের গা বেয়ে
ফায়ারপ্লেসের খিদে মেটায় নিরুদ্দিষ্ট অতীত কুয়াশা,
অবুঝ শব্দের কালো ছায়াদের হারিয়ে দিয়ে
আবার ও এসো বর্তমানের আগুন পোহাই,
স্বীকৃতি পাক রাত্রির বর্তমান দাবি
অভিমানের কালো ছায়াদের আর দীর্ঘ হতে দিও না,
ভাঙনের যে খেলায় মেতেছো তাতে আগুনের ছোঁয়া নাও
মৃত্যুতেও আমার হাতদুটো খোলাই থাকবে
আমাকে আচমকা ঘিরে ধরবে বেইমান হায়না,
মালাউন নামের গন্ডি পেরিয়ে
গুলিতে ঝাঁঝরা আমার দেহ থেকে হৃদপিণ্ড বেরিয়ে আসবে,
মাথার ঘিলু,বুকের রক্ত,কাঁটাতারের মাটিকে করে তুলবে পরিশ্রুত,
শাহবাগের রাস্তায় আজ ও পড়ে আছে যুবক
কিছু গুলি কেবল তার শব্দ কাড়িয়ে নেয় প্রতিনিয়ত
নির্বাক দেশপ্রেম কেবল প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে যায়।

--------------+++++++++++----------------

Comments

  1. বাহ্ !
    শব্দ-বিষয়-ভাব এর বহমানতা মন কেড়ে নিলো।
    শুভেচ্ছা কবি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা