মাহামুদাল হাসানের কবিতা


পরিচিতি:-
মাহামুদাল হাসান, বাড়ি  লালবাগ,মুর্শিদাবাদ , পেশায় শিক্ষকতা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিগত ৫-ই সেপ্টেম্বর ২০১৯  পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত  "শিক্ষারত্ন" সম্মাননায় ভূষিত হন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা অব্যাহত রয়েছে।এখন অব্দি যৌথ কবিতা সংকলন গুলির মধ্যে –
কাব্যমঞ্জরী,যখন একলা আকাশ, কালবেলার প্রতিচ্ছবি,আবেগের ঠোঁট,কাচের জানালা,আমার আকাশ তোমার নীলাভ আবরণে,মহুলের নেশা উল্লেখযোগ্য।কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ  কবিতা


১: অস্থিরতার কথামালায়

পূর্বজ সমাধির কালো মুখগুলো মর্গে
কান্না শুনছে একতরফাভাবে
এক রেওয়াজি একতারার তার কাটা সুর
অবিন্যস্তভাবে তরঙ্গের অববাহিকায় ধুঁকছে
নিদাঘ পৌরুষত্ব শুধু এক অনিশ্চিত শূন্যতা
ভর করে উপুড় হওয়া কালো ঘামের ব্যথা
খাঁ খাঁ করা ভাবনার দল ছুটছে
আগুনের মোক্ষলাভ চরাচরে অনিয়ন্ত্রিত
শুধু ধর্মীয় আফিমের চাষ মানবতার বন্ধ্যা ভূমিতে
সংস্কারের অন্তরালে গলিত সমাজকে তামাশা বানায়
আফিমের নেশায় ক্লান্ত পাহাড় আর সমুদ্র দেখে না
তারই ফাঁকে অবিশ্রান্ত উইপোকার পাহাড় জয়
সমুদ্রের বিছানায় মিশে যাচ্ছে শুধু ভস্ম
একটা সমান্তরাল অস্থিরতা।


 ২: গতিপথ


অস্পষ্ট সময়ের ডাকে সাড়া দিতে
বিধ্বস্ত ক্ষণিকেরা আছড়ে মাখে কাদা
হয়ে ওঠে পর্ণমোচী
সম্ভাবনাগুলো ডানা ঝাপটায় পাগলা গারদে
একাকী রাত শুয়ে থাকে শ্মশানে
প্রহর গোনে অসীম শূণ্যের।
নীল বিষে ভরা ভাঙা পাড় ধরে
বুকে হেঁটে খেলা করে ডিম্বজরা
বেঁচে থাকা সময় ব্যথা অনুভব করে
হার্টবিট বেড়ে যাওয়া দিনগুলি কাটে
পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে,
কোলাকুলি ক'রে ব্যস্ত অস্পষ্ট কায়া
প্রণত বটঝুরি মাটির আঁচলে মুখ লুকায়
নিঃসঙ্কোচে জীবন খোঁজে
বিভোর শীত মৌসুমে কোমর ধরে
শরীর দেখায় হাড়কিপ্টে তরুলতা
 নগ্নতার বৈধতা চায় আয়ত চোখ
এবার আড়চোখে সময়ের গতিপথ বদলে
রাতের দেহে প্রবেশ করে ।


৩: শেষ প্রহরের কাউন্ট ডাউন


হাতঘড়িটা রাস্তার এক মুসাফিরকে বললো
'তোমার শেষের শুরু হয়েছে
এখন উঠোন নিকিয়ে অপেক্ষা করো'
কালো বেড়ালটা রাস্তা কাটলো অনিয়মে
তখনি গাছের ছায়া ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে
রাস্তার দুপাশের বাড়িগুলো মুখ তাকাতাকি করছে
আসন্ন শকুনের অপেক্ষায় শ্বাস ফেলছে
আকাশ কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে
নেমে আসতে চাইছে দিগন্ত বিলাপে সাক্ষী হতে
সিঁড়ি বেয়ে নিঃস্বতা ঢাকে রুপোলি মেঘ
চোখের কোণে পিচুটি নিয়ে বাঁশের খুঁটি ধরে
আগুন পেটে বিড়বিড় করে চলা মেয়েটি
খোলস ত্যাগ করা সাপের সাথে একাত্ম হয়
হাত রাখে নিস্পৃহ মাটির ছাদে
সাথে কালো বাতাস হেঁটে চলে বিজনে
হাতঘড়িটা মুসাফিরকে বলেই চলেছে
'তোমার শেষের শুরু হয়েছে
এখন উঠোন নিকিয়ে অপেক্ষা করো'।


৪: নির্বাকে বাঁচার পথ


নিঝুম দুপুরের
গায়ে লেগে থাকা আঁশগুলো
বটি দিয়ে কাটছিল অশরীরী দাওয়ায় বসে
প্যারাম্বুলেটারে চেপে নীরবে আরাম বিক্রি করছিল
হিংসে দোলায় ক্ষয়ে যাওয়া পথের বাঁক
হঠাৎ বাতাস দৌঁড়ে জায়গা দখল করে
নারকেল পাতার উপর গিয়ে বসে
যেন দোল খাচ্ছে আর গান শোনাচ্ছে
শুষ্ক ত্বকের বিকৃতি দেখা যায়
অসুস্থ আতাগাছটায়
সূর্যের কামাতুর দৃষ্টি যেন ঝিলিক মারে
ভালোবেসে জাপটে ধরে
শুয়ে থাকা অপুষ্টির মেঘমালাকে
ঘুম ভাঙতেই আহ্লাদী সুরে চেটে দেয়
পৃথিবীর চোখে আটকে রাখা সরোবরকে
এবার এক ঘাটে বাসা বাঁধে
ভালোবাসা ও হিংসা।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা