তাপসী লাহার কবিতা
তাপসী লাহা জন্ম ১৯৮৬,উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর শহর রায়গঞ্জে। প্রথম কবিতা লেখা শুরু ছ বছর বয়সে। গল্প লেখা শখে। প্রকাশিত বই, কুলিক থেকে অজয়।
পেশায় শিক্ষিকা।শখ বই পড়া,ঘোরা, সিনেমা দেখা।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গল্প, কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। সম্পাদনার সাথে যুক্ত।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবি তাপসী লাহার ছয় পর্বের একটি সিরিজ কবিতা
জলের সিম্ফনি সিরিজ
১)
ধৈর্যের প্রবোধ কাকে দিই,
আমার মতই অগোচরের ব্যুহে
আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন কলমের
ওষুধে সেরে ওঠা ব্যাধি।
চাঁদের মূক আলো পড়ে
খেরোর খাতায়,
আঁক কষে যাই।
কর গুণে নির্বিরাম
উপলব্ধির থেকে পাওয়া
হিসেবটি লিখি, দ্বিধা থাকে অনেক,
ঘুড়ি ওড়ালে জট জ্বলে ওঠে
পাঁকে ভারী মন,
চোখ নামাই
পতনের ঠিক আগেই।
সেদ্ধ চালের শুদ্ধ স্নানে ভুড়ভুড়ি কেটে দিলেও কণামাত্র কণিকার টিকিটি ফোঁটেনা।
এতকাল এবং এর পরেও জেগে থাকে যারা প্রদীপের মুখে
শিসের আদলে,আগুনের মত উজ্জ্বল, অভ্রান্ত.... যেসব।
পড়েছি বহুবার,
মানিনি তবু,
জেদ আর
জেদ... এটুকু সম্বল নিয়ে কবর দিয়েছি সত্যের অমোঘ ভুল।
শুয়োপোকার মত কুঁড়ে খাবে আমায়।
হয়তো পারতাম ভালবাসতে কোন একদিন, একদিন..... হয়তো
শিখে নিতাম উড়ানের বানানবিধি,নির্মাণের পথ
অরণ্য ভেসে উঠতো চোখের তারায়
খুঁজে নিতাম খড়ে মিশে থাকা সূঁচটিকে।
২)বেঁচে থাকছি ছবির মত
স্থবির শিল্পের সৃজনে যেটুকু কাঁচামাল লাগে
ডানাবিহীন হাতের মধ্যস্থতা খুঁজি রোজ
মেদুরস্বভাবের আলো দিয়ে বুনে যাবো ফেলে আসা কাফতানের গন্ধটা।
পাঁজরের পাশ দিয়ে বয়ে যাও রোজ,
এক চিলতে নালায় বাঁধা সংসারের
বারোমাস্যা
আগুন পোড়ায় রোজ,
ক্ষতের বাসায় নতুন অতিথি আসে
বৃষ্টির কামড়ে একাকার,মিশে যাই কাদামাটির গানে।
একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কাকভেজা
হয়ে থাকা
রক্ত ঝরে পড়ে অবিরাম,
ফ্যাকাশে বিদ্যুতগুলো
ঝাপটা দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনে মৃত চামড়ার গান।
ঠিক আবার,
বাঁচার ভান করতে শিখতে হয়।
৩)
পর্দার আড়াল থেকে ছবি আঁকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলাম,
হৃদয় আঁকছো নাকি,, বেশ তো, তবু কেন মন নেই,
ক্যানভাসের পরণে শুধু এক টুকরো রেখাপথের গান।
বর্ষা নামার আগে, লাল পিপড়ের সারি,সাদা খাবারের মত কত কিছু
আশ্চর্য দেখি, সূর্যরেখার তলে হেটে ফেরে গোধূলির বউ,
ঢেউ খেলেছে জলের চিক্কণ, শিরশিরিয়ে ওঠা
মৃদু কামড়গুলো আজ আর নেই।
আলোড়নের তরল চিকচিক করে রুপোর কান্নায়,
অঙ্গে জাগে সৌন্দরের নাদ,
তর সয় না,
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ভীষণ ,
কাতরতায় আক্রান্ত হয়ে শেষে বলেই ফেলি;
হৃদয় আঁকছো, আরো আঁকো, এঁকে যাও চিরটাকাল।
তুলির গানে জেগে থাকে মহল্লাগুলো
তবু এক অভাবের কেমন,
কেমন এক মন নেই,
প্রাণের আদলে পৃথিবীর মুখ নেই।
৪)
আগুনের ধর্ম,ক্ষরণের বর্ণনায়
বিস্ময়ের স্নান,
জানালার পারে পৃথিবীর মুখ
আহতের সুখ
বিচনের ভুলে
শস্য ছুঁলোনা রোদ,
নিভু সন্ধ্যায়
আরাধ্যের মন্দিরটুকু
কীর্তনের বিষাদ
লালনের অপরাধ, ছুঁয়ে দেখি বার বার
এত বিবর্ণতার মাঝে একখানি মানুষ।
৫)
নিজের ভাবিনা তাকে আর
ছলের ওড়নায় তার অসহায় মুখ
জীবনের অনন্ত প্রশ্নের কাছে দুঃখ দুঃখ খেলায়
মগ্ন বিলাসী যুবতীদের কামুক ধর্ষকের থেকেও
বিষেলা মনে হয়।
জরৎকারুর টেলিফোনে ঘুম ভাঙে রোজ
তাকে বোঝাই,মনসা কত নিষ্পাপ
বিষেলা যুবতীর ছেনাল হাওয়ায় মহামারি গজিয়ে উঠেছে চাঁদের স্বর্ণপুরীতে।
তাকে বোঝাই বারবার,মনসা শুধু পূজা চেয়েছিল,ও সতী,পুণ্যবতী
আর বিষেলা যুবতীরা !
শশ্মানের সুখ,আগুনের চুরুট।
৬)
এক দূরতম গাঁয়ের কপর্দক সন্ধ্যায় হেঁটে ফেরে
নির্মোহী শ্যাম
অচঞ্চলা রাত্রির কম্পমান আভাটুকু জ্বলে ওঠে।
কোমলাঙ্গীর দৃপ্ত চোখে ও চিবুকে
চকোরবৃত্তের রাগ,
গহনতর পথ অতিক্রান্ত, ফিরে এসেছে এক প্রেমান্ধ শরীর, তৃষাতুর হৃদয়
সে তো ফেরে নাই ঘর।
অনতিদুর থেকে ময়ুরের ডাক,
কুড়ি ভাঙে সন্ধ্যাফুলের ঘ্রাণ।
কালার বাঁশিতে আড়মোড়া ভাঙে স্বপ্নিল রাত,
এক পিপাসাময় চাঁদের অশ্লীল ঈঙ্গিতে
চরাচর ভেসে যায়।
Comments
Post a Comment