ছাব্বির আহমেদের কবিতা



নদীয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কাঁঠালিয়ায় জন্ম। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির ইচ্ছে , কিন্তু সুযোগের অভাবে হয়নি, পরে এক তরুণ কবি , আমিনা তাবাসসুম এর  সান্নিধ্যে  লেখালেখি শুরু। লেখার পাশাপাশি পুরোনো দিনের গান শুনতে ভালোবাসে , করেছে বাংলাতে মাস্টারস । 

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে ছাব্বিরের একগুচ্ছ কবিতা 


 ১: সে ফিরে আসার অপেক্ষা

সে ফিরে আসার অপেক্ষায়
জীবন অতিবাহিত হয়ে গেলো, বন্ধুর পথ ধরে।
তবুও জানি, 
একটা চোরা আশায় ছাতি চওড়া হয়।
বরফের আগুনে, 
হিমমিশ্র জ্বালা জোড়ায় বেখেয়ালে।
ঘড়ির কাটায় পুড়তে পুড়তে সময়ের ছাই, 
মিশে যায় সারা শরীরে।

সে ফিরে আসার অপেক্ষায়।
দিগন্তরেখায় চেনা সূর্য ঢলে পড়ে।
সাদা রক্ত ফুরোতে থাকে চক্ষু সাগরে।
যেখানে নেই কোনো সসীমতা, 
নেই কোনো মেশিন।
তবুও সাদারক্তের যেনো শেষ হয়না, অফুরন্ত।
জীবন-যৌবন রেখা গৌধুলির দিকে ছুটে চললো,
সে ফিরে আসার অপেক্ষায়।


২: চেতনা

আমার ভাবনায় জড়িয়েছি,
তোমার দেহ খানি।
সভ্যতার মায়াজালে, দেহ ভিজিয়েছি,
সাঁতার জানিনা নেমেছি রূপ সাগরে।
ডুবু ডুবু রবে ছেয়ে গেছে, সাদা পাহাড়ের চূড়ো।
তিল তিল করে গড়ে তোলা  ভালবাসার গৃহ,
আজ তাসের ঘর।
মনি-মুক্তা গুঞ্জার মালা যতনে রাখি তুলি,
দুঃখ-কষ্ট বেদনার মালা পরেছি গলায়।
কলকল রবে স্মৃতিগুলো আজ ঝর্ণা হয়ে পড়ে।
বিরহের নদী বয়ে চলে আকাশে কালো মেঘ হয়ে।
মাঝ নদীতে বাঁধিব ঘর, প্রেমের পরশে।

তুমি ঘাস নিয়ে এসো, আমি পুকুর হবো।
বুকে আগলে রাখবো হিমালয়।
মাঝরাতে উঠে চাঁদের আলোয় দেব তোমায় 
রঙের ঝিকিমিকি।
আমার দেহের চেতনায় তোমার নীল ছবি আঁকবো,
তুমি মিলিয়ে যাবে।


৩:  স্বর্গ থেকে

তুমি কি চাও?
আমার তো কোনো চিঠি আসার কথা নই।
মায়া ত্যাগ করে,
আমি তো কবেই পৃথিবী ছেড়ে চলে এসেছি।
তুমি ভুল করে এসেছ।
বট গাছের মাথার উপর তাকিয়ে দেখো,
কালো কালো হরিণী খেলা করছে।
তুমি এসেছ ফুল তুলতে?

নদীর ধারে জামরুল ডালে বসে আমি পা দোলায়।
তুমি জামরুল খাও,
তবুও ফিরে যাও।
বড়ো কঠিন পথ ধরেছো তুমি,
আমি আনন্দে গাছে গাছে দিন কাটাচ্ছি।

পোস্ট অফিসের ধারে আমবাগানে চলে গোলাগুলি,
হিংসার বারুদ পোড়ে।
মহামারি, হিংসার রক্তে মাখা চিঠি আমার জন্যে নহে।
আমি বিরাজ করি আনন্দ নগরে।
তুমি ফিরে যাও আমার কোনো চিঠি আসার কথা নয়,
তুমি ভুল করে এসেছো।


৪: শুকনো পাপড়ি

নিটোল পাপড়ি মেলে
পুরানো দীঘিতে প'ড়ে যৌবন ফিরে পায়।
সাঁতার জানেনা, তবে মৃত্যুর পর দেহ ভাসে.....!
লাল ঠোঁট, সবুজ জামা, 
কুরে কুরে খায় মানবতার শুয়োপোকা।
ধংস হতে হতে গড়ে ওঠে হিমালয়,
বরফের আস্তরনে চাপা পড়ে প্রলোভন.!

বট গাছের ঝুরিতে বেঁচে থাকে শৈশব,
শুরু হয় শব্দের বুকে হাটা।
ধ্বনি ব্যঞ্জনায় মেলায় সমানুপাতের অংক;
বিয়োগের দুঃখ পোড়ে বারুদের গন্ধে,
নিভে যায় হ্যারিকেন।
ধীরে ধীরে হতাশা খসে পড়ে, 
ধরণীর বুকে।
পিঁপড়ের শীতকাল কাটে আনন্দে,
মেতে ওঠে উই পোকা।
পাপড়ি গুলো ডানা মেলে,
পাড়ি দেয় গগন রেখায়.......।


৫: জীবন আলোর আশীর্বাদ


নয়নের চেনা গন্ধে, 
পেয়েছি অমূল্য রতন....
শিউলি ফুলের ভান্ডার।
ভোর হতেই ঝরে পাপড়ি গুলো,
শব্দের ফুলকি হয়ে।
প্রতিটি পাতায় পাতায় প্রজাপতি...
রঙ ছড়ায় আঙুলের ডগায়।
সে আঙুল ধরে শুরু মোর পথ চলা...!

কাঁচা হাতে দোয়াতের হিজিবিজি কেটে...!
সকাল-বিকেল কাটিয়েছি অবকাশে।
কবিতার পাতাতে  আশীর্বাদ ফুল......
উড়ে এসেছিল।
সেই ফুল মোর সাহিত্যের পাতায় 
একটা একটা করে বিলিয়ে চলেছি।

বাগানে ফুটিয়ে চলেছি তাকে,
যত পেয়েছি বাহবা সবই তব চরণে
সপিলাম।
আজীবন রাখিব হৃদয় বন্ধনে,
ফুলের আশীর্বাদ...!
গুরুভক্তি মেনে।

Comments

  1. গভীর অর্থযুক্ত কবিতাগুলি সত্যিই খুব হৃদয়স্পর্শী।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা