সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা



শূন্য দশকের কবি সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় । জন্ম ২০ ই সেপ্টেম্বর,  ১৯৮৪  চন্দননগরে ।  সেখানেই বড়ো হওয়া । বিবাহ সূত্রে বর্তমানে কলকাতায় বাস । ছোট থেকেই কবিতা লেখার প্রতি ঝোঁক।  তাঁর কবিতার ভাষায় নিজস্বতার ছাপ স্পষ্ট,  কবিতার ভাষা সহজ সরল হলেও কাব্যের মায়াবী আলো এবং রহস্যময়তা তাঁর কবিতাকে এক্কেবারে স্বতন্ত্র করে রাখে যা পাঠকের হৃদয়কে আবিষ্ট করতে পারে।  কবি গদ্য কবিতার পাশাপাশি ছন্দে লিখতেও সমান পারদর্শী  এবং নিজের ভালোবাসায় লিখে চলেছেন অনেক অনেক কবিতা।  ইতিমধ্যেই সিগনেট  প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ-চারদেওয়ালি চুপকথারা  ২০১৮ সালে । বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় , দৈনিক এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর কবিতা।  এছাড়াও প্রবন্ধ লেখেন বিভিন্ন বিষয়ে,  রয়েছে কিশোর সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ।  বাংলা কবিতায় সবর্ণা চট্যোপাধ্যায় হয়ে উঠেছে এক পরিচিত নাম।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে তরুণ এই কবির পাঁচটি কবিতা ।



১: বাঁচিয়ে রেখেছ বসন্ত হাওয়ার মতো



বাঁচিয়ে রেখেছ বসন্ত হাওয়ার মতো
পিঠের ওপর হেসে ওঠা চুল
তোমার আঙুলে জড়িয়ে দিচ্ছে ঘুমের অনুভূতি।
কল্পনার রাস্তা খুলে যায়
রোদে চকচক করে বালি
ভিজে চোখের দুপাড়ে সন্ধে নামে
লেখা হয় না পারাপার
যেভাবে শূন্যতা কাছে আনে মৃত্যুর
ছাদের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকি
হেসে ওঠো চারিদিক থেকে
গাছে গাছে জল পড়ে
পায়ের পাতায় বেড়ি
খসখস শব্দ করে উড়ে যায় কত পাতা
চেয়ে দেখি 
তাকিয়ে আছো মাইল ফলকের মতো
স্থির, বছরের পর বছর!



২: হাসপাতাল



সাদা পোশাকের কিছু পায়রা 
উড়ে এসেছে পুরোনো জানালার কাছে
ভাঙাচোরা কাচ
রক্ত চোখের গভীরে ঢাকা পড়েছে ক্ষত
ঢলে পড়া বিকেলের মতো ভাঙা আঙুল নিয়ে
লিখে চলেছে স্যালাইনের পাঠ।
পায়রাগুলো ব্যস্ত ভীষণ...
ওষুধের ট্রে
ইনজেকশন
ঠোঁট থেকে খসে পড়ছে দু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
ডেটলের গন্ধে কেমন ঝিম হয়ে আসে মাথা।
গুলিয়ে যায় অক্ষরের সিঁড়ি,
অন্ধ ঘরে যেন হাতড়ে বেড়ায় দেশলাই
বেডপ্যান নামিয়ে উড়ে যায় সাদা পাখি।
আবার নিঝুম কালসিটে
সন্ধে নেমে আসে হাসপাতালের লম্বা বারান্দায়!


৩: একটা ব্ল্যাঙ্ক মেসেজ



পরতে পরতে বুলিয়ে দিচ্ছো আশ্বাস
'তুমি আছো'....
রাতের কাছাকাছি, নক্ষত্র হয়ে মুছে দিচ্ছো জল।
নিস্তব্ধতায় জড়ো হওয়া
আত্মহত্যার হাতছানি
সাজিয়ে তোলে সিলভিয়া প্লাথ
কি ভীষণ যন্ত্রণা আর দুঃস্বপ্নের কালোরা
প্যানডেমিকের মতো উগরে দেয় বিষ,
তখন...
তোমার হাত ধরি।
উনুনের গনগনে আলোয় ঝসলে উঠে সুখ
হেঁটে যাই শেষ না হাওয়া পথ
পাথুরে রাস্তায় গড়িয়ে যায় মৃত্যু, দুদিকে
মাঝে শুধু হলুদ পাহাড়ি জ্যোৎস্না
দুজনে, পায়ে পায়ে সংসার পাতে
বাঁশি বাজায় ঝিঁঝিঁ
আমরা পেরিয়ে যাই সেসব বুনো অন্ধকার
যখন...
ইনবক্স ভরে ওঠে
দুটো সাদা মেসেজে! 


৪: পৃথিবী তোমার সঙ্গে


আচমকা জেগে উঠি
গলা চিরে বেড়িয়ে আসে শোক
চারদিক কালো 
তাড়া করে।
পরিচয় খুঁজি।
মাস্কের আড়াল ছিঁড়ে বের করে আনি নরম ঠোঁট
তাপ এসে লাগে
বাড়তে থাকা জ্বর ভালো লাগে।
যেভাবে পর হয়ে যায় সাধারণ স্পর্শটুকু 
ভয় হয়, যদি কেনদিন দেখা না হয় আর!
বন্ধুর মৃত্যুশোক চিনিয়ে দেয়, নিরাপদ নই কেউ।
ছায়া ছায়া বাদুড়, জড়ো হয় জানলায় 
যদি আবার কোনদিন মেলে ধরি ডানা
তুলতুলে নরম আলোয় ভরে ওঠে সকালের কফিমগ
হাসতে হাসতে বলব, বেঁচে আছি...
আমরা বাঁচতে চাই আরো
পৃথিবী, তোমার সঙ্গে!  



৫: জোয়ার


আগুনের চাপে গলে পড়ে মোম
উদ্বাস্তু হাওয়ায় ভাসে না বলা চিৎকার।
ভুলভুলাইয়ায় গুলিয়ে যাওয়া পথ
দুহাতে চেপে ধরে অনিদ্রার টুটি।
পাথুরে চোখে অন্ধ রাত্রি
তোমার সমস্ত দেনা, বড়ো নিজের,
যত্নে রাখি।
শরীরের টুকরো করে ছড়িয়ে দিই ভোগের থালায়
অনিচ্ছায় আটকে থাকো!
অথচ সে পথ তোমার চেনা...
দুপায়ে দুরন্ত হাওয়া
শেকড় ছিঁড়ে ছুটে আসার কি অদম্য চেষ্টা
আমি বুঝি।
তুমিও।
শুধু অন্ধকার না হলে বোঝা না জল
কি ভীষণ জোয়ার লেগেছে দুকূলে!

Comments

  1. ভালোলাগা। কবিতাগুলোর ভাষা এত সরল, প্রাণবন্ত অথচ ভাবের গভীরতা আকাশছোঁয়া।

    ReplyDelete
  2. ভালোলাগা। কবিতাগুলোর ভাষা এত সরল, প্রাণবন্ত অথচ ভাবের গভীরতা আকাশছোঁয়া।

    ReplyDelete
  3. ভালো লাগলো। একটা ব্ল্যাঙ্ক মেসেজ কবিতায় " বাঁশি বাজায় ঝিঁঝিঁ " কথাটি বেশ অন্যরকম লাগলো।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা