রুমা ঢ্যাং অধিকারীর কবিতা


রুমা ঢ্যাং অধিকারী এই সময়ের বাংলা কবিতার এক পরিচিত নাম।  থাকেন হাওড়ার শালকিয়ায়। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ,  লিখছেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।  জিরো বাউন্ডারির সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য।  

আজ একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ সিরিজ কবিতা  যা সত্যিই ভিন্ন মাত্রার। 


জন্মাবধি 


১/ 

প্রিয় হয়ে ওঠার সবকটা নির্বাচনী পালক

উড়িয়ে নিয়ে গেছে জন্মের আহ্লাদ। কথা বলছি বেঁচে থাকার স্রোতবাক্যে

সেখানে পালক এক বিচ্ছেদের নামান্তর। যাকে অনন্ত বিস্তারিত ভেবে 

চোখ থেকে সরিয়ে রেখেছি শালুকদুহিতা


২/ 

আমি ঋজুকায় ঘাস, বিদুরের তণ্ডুলকণা হাতে

ছুটে চলেছি জড়পিণ্ড হাতে


দেবতাদের হৃৎপিণ্ডে বেঁধে রাখছি ঢিল


৩/ 

স্থবির এই দিন এলে

কলরবহীন শোকের মতো পরিবাহিত সংযম


সমাপ্তির কাছে একদিন চক্কর টানা শেষ হলে মানুষের কাছে এসে দাঁড়াব 

কিংবা মেঘের কাছাকাছি...


৪/ 

সরলরেখার পিঠের ওপর শুয়ে থেকে

মৃগতৃষ্ণায় ভেসে যায় রঙিন উৎসবের ঘোড়া ও

                পালনীয় জীবনের অনুসঙ্গ


প্রত্যেকবার উচ্ছ্বাসের পাশে

দাঁড়িয়ে থাকে একটি তালগাছ 


কে কবে জেনেছে মনের কাছাকাছি ফুঁ দিতে দিতে

চিৎকার থেকে জন্ম নিয়েছে 

দূরের প্রার্থনা সভা 


৫/ 

হাঁড়ির জন্য হাত বাড়িয়ে ঢুকে পড়েছি যেসব ব্যুহ্যে

মৃণ্ময়ীরূপে দণ্ডায়মান অশ্বত্থছায়া

পাশাপাশি থাকা কৃষ্ণবর্ণ হ্রদ...


একটি পরিণয়সূত্রে মৃত্যুভয় 

অভিমন্যুর কাছে বসে বিশ্রাম তুলে ধরছে করপুটে 


মনপাখি

হিমগিরি

আর ঊনত্রিশ কোটি তির


জীবিত হার্ডডিস্কে এক্সটার্নাল হয়ে

প্রকৃতপক্ষে বেঁচে আছি... এখনও


৬/ 

অবতরণের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছি বুক টেনে 

স্বপ্নেও মথিত অন্তরীক্ষ 


উন্মুক্ত সূর্যালোকে এমন ঋদ্ধ হতে হতে

দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একটি পতঙ্গের বৃত্ত


অনুশীলন শেষ হলে 

গোপনের দরজা জনমতের দ্বারা সংবর্ধিত হবে


৭/ 

জন্মাবধি যতগুলো জন্মে ভেসে থাকা

বাঁধানো পরিচ্ছেদের ওপর বসে পড়েছে বেলতলার ন্যাড়াছাদ


নতুন প্রজাতির কাছে তাই আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে

হত্যার লালচে হাত


তাদের স্ফটিক মুহূর্তকে কলুষিত করে 

আলোচিত হওয়া দ্যুলোকের সংশয়


৮/

দর্শনীয় স্থানের নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে 

অস্তিত্ব পেয়েছে যাবতীয় ফুটোকড়ি


আর বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপে 

পৌঁছে যাওয়া যমসাধনার দক্ষিণদিক


বরফ ভাঙতে ভাঙতে এখন আমি ক্লান্ত 

কীভাবে বলব অনির্বচনীয় মণিমুক্তোর স্নিগ্ধ বুকের কথা?  


এসো মাটির কলসি, তোমাকে ভেঙে 

লিখে রাখি মাথার শিঞ্জন


৯/

অন্ন ও বস্ত্র, তোমাকে শরীরজাত করে

বুঝি পরিপুষ্টে সাজিয়ে রাখা ভগবৎ


ভক্ষণ করছে রুহুকে

তাকে সৈনিকবৃত্তি দিয়ে এই দ্যাখো-- 

তুমিই শরৎশশী। জন্ম দিয়েছ ডুগডুগি


আমি এমনই এক ছিন্ন পাতার অলক্ষিত আয়ুকাল


১০/


এখন জন্মের আধোঘুম থেকে

দেহ ছুঁতে দেখি মাছিদের ভ্যানভ্যান। পড়ে থাকা সাপের খোলস ডিঙিয়ে

সুনিমিত্তের সামনে রেখে আসি খিদে


যেমনই ভাবো। তবুও কী মমতায় রেখেছি 

দুখের আড়াই পা শব্দ


ভূমিষ্ঠ হওয়ার এইটুকুই তো স্মৃতি...

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা