মতিউল ইসলামের কবিতা
পরিচিতি -মতিউল ইসলাম,জন্ম মুর্শিদাবাদের খাঁড়েরা গ্রামে,পিতা নুরুল ইসলাম মা বেগম নসিবা ইসলাম,পেশা শিক্ষকতা,প্রকাশিত কাব্য একমুঠো রোদ্দুর, বাউলের একতারা,কিংবা ঝুমবৃষ্টি,এবং মরিচিকা বা স্বপ্ন।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে মতিউল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা।
১.অরাজনৈতিক
ভোর জাগলেই স্বপ্ন গুলো ফুল হয়ে যায়,লাল,নীল,বেগুনী।
কিছু সাদা ফুলও থাকে শহীদবেদী আলোকিত করার জন্য।
আলো আর অন্ধকারের মাঝে কিছু সমঝোতা লেনদেন মিটিয়ে ফেলা যায় কিছু দুঃস্বপ্ন মুছে ফেলার জন্য,
স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মাঝে ভাঙ্গাসেতুর মতো দোল খায় কিছু মায়াবী বিকেল,
তারা স্বপ্ন না ফুল হতে চায় নিজেই বোঝে না।
তারপর হঠাৎই লকডাউনে সব বন্ধ
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ফুলওয়ালি মুখে মাস্ক দিয়ে নামতা পড়ে,
কিন্তু মজাটা হলো একের ঘরই আওড়ে যেতে হয় যাতে সংখ্যা গুলো একই থাকে।
চাল আর ডাল অর্থাৎ শুধু খিচুড়ি,
অভিধান থেকে আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে বেশ কিছু শব্দ।
২.মরাহাতি
এখন মেঘ আসলেই বজ্রপাত হয় ঝলসানো মাংসের মতো পড়ে থাকে নীথর শরীর মাঠে ময়দানে যেন মৃত্যুর মড়ক যেন ভোজ বাড়ির এঁটোপাতা শুধু বুভুক্কু কুকুরের বদলে কিছু মৃত কাক তাদের ছবি আঁকেন না কাকশিল্পী তিনি ব্যস্ত বাঘিনীর ছবি আঁকতে
বাঘের সাথে কাকের বন্ধুত্ব বা শত্রুতা বিষয়ক কোন থিয়োরী এখনো আবিস্কার হয়নি যেমনটি এখনো প্রমান হয়নি বজ্রপাত কেন কৃষকদের একার।
বজ্রপাতে মৃত্যু মহার্ঘ করে তোলে শবদেহকে যার অপাদমস্তক ঋণে বিকানো সে নিমিষেই ইউরোনিয়ামের আকর এটা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত এতএব আমরা এক সিদ্ধান্তে উপনিত হতেই পারি মরা হাতি কোটি টাকা।
৩.পথ
জন্মভূমি থেকে দুটি রাস্তা দুদিকে চলে গেছে,একটা মেঠো আলপথ
সে পথ দিয়ে গেলে একটা পুকুর পাওয়া যায়,বৃত্তের মতো, যেখানে পদ্ম চাষ হয় নীল পদ্ম যা কবিতার মতো সুগন্ধি,কবিতা আছে তাই কিছু কবিরও দেখা পাওয়া অসম্ভব নয়।
মাঠ জুড়ে রুপকথার চাষ হয় গোলা ভরে ওঠে সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠিতে,একটা রাজপুত্তুর পাহারা দেয় লাঠি হাতে।
দ্বিতীয় পথটির কথা ভুলে গেলে চলবে না,সে পথ সোজা স্বর্গে মানে শহরে,যেখানে নিয়নবাতির আলো, অপ্সরা,টাকার পাহাড় আর জন্মভূমিকে ভুলে যাবার হাজার বাহানা ভাইরাসের মতো কিলবিল করে।
সেখানে গ্রামের সরল যুবক বন্দুক হাতে প্রহরীর কাজ করে।
দুটোপথ, দুটো পা, মগজ আর মনের লড়াই অবিরত,
পৃথিবী জুড়ে তাই যুদ্ধের দামামা!
৪.বিশ্লেষণের গোপন কথা
দিনের কিছু পাপ জমা আছে
সন্ধ্যায় কাছে,
যেমন আমার কিছু পাপ মিশে গেছে
তোর অস্থিসন্ধিতে।
আমার কোন দায়ভার নেই সুপর্না
তোকে ভুলে গেছি কেটে ফেলা
অবাঞ্ছিত টিউমারের মতো।
তবু নিলজ্জ সেলায়ের দাগের মতো
প্রখর তোর উপস্থিতি,
নেই তবু আছিস চিহ্ন হয়ে।
আমি আর সে আমি নয় কখনোই,
তবু পরিক্ষাগারে পাগল বিজ্ঞানী
জল বিশ্লেষণ করে তোকে আমাকে
হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন প্রমান করতে চাই।
৫.ভাঙনের গান
পাড় ভাঙ্গছে খসে পড়ছে মাটি
ভেসে যাচ্ছে মুখোশ,
পাড় ভাঙ্গছে রাক্ষসী খিদে নিয়ে।
ভেঙ্গে পড়ছে বসতবাড়ি
ভেসে যাচ্ছে খোকার খেলনা,
সম্পর্ক ,সংবিধান।
পাড় ভাঙ্গছে ভীষণ দ্রুতগতিতে
মাতাল ঢেউ এগিয়ে আসছে,
তলিয়ে যাবার আগে
দেশের মাটিতে শেষ সেজদা করতে চাই।
Comments
Post a Comment