দীপঙ্কর বেরার কবিতা




দীপঙ্কর বেরা স্বাস্থ্য দপ্তরে কর্মরত এবং কলকাতায় থাকেন। কবিতা লিখছেন দীর্ঘদিন হল ।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক তাঁর একগুচ্ছ কবিতা। 

১: পেট ভর্তি নৃত্য


যতটুকু আমি বুঝি নি

ততটুকুই তোমাকে বোঝাতে শব্দের হাত ধরি, 

আর খেলা করি জগাখিচুড়ি।

তুমিও বাহবা দিয়ে

ধারালো স্তব বাক্যে হয়ে যাও

যত রকমের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের একনিষ্ঠ।

বোকা কেউ নয়

তবু ভাতের টান পড়লে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া

হয়ে যায় বোধ বুদ্ধিহীন

ঘোর লাগা অলৌকিক কোন জীবন।

সে তখন যা কিছু করতে পারে

তুমিও তখন তাকে নিয়ে যা কিছু করাতে পারো,

ফলত সৃষ্টি হওয়া যুগ বিশৃঙ্খলায়

কেউ আর সাধু পুরুষ থাকে না।

পুরোটাই পেট ভর্তি ভাতের নৃত্য

সংসারের লাগোয়া তুমি আমি

একা একজন

হয়তো বা অনেকজন কিংবা আমরা সবাই।


২: সময়কাল 


লোটা কম্বল গোটাতে জানে ভজহরি

মাসের শেষ হতে ঢের বাকি

তবু জপ কৃষ্ণ দানার খোঁজে

এক একটা মুরগীর ঠোঁট,

নতুন শব্দ লক ডাউনে

তাও ঠনঠন গোপাল।

সরকার আছে বলে

জনগণের প্রতি উপুড় করে

আমরা আজও আন্তর্জাতিক।

তুমি হেঁটেছো বলে এত তর্কবিতর্ক

ভুলে যাচ্ছ সময় আসলেই পেন্ডামিক

প্রাণ কেড়ে নেওয়া কোন দুর্বোধ্য নয়।

এসো, কম্বল টানাটানি করে বাঁচি

মরে যাওয়া হোক তুরুপের তাস,

হাতে রইল তিন

ওই যে নাচে ভজহরি তা ধিন 


৩: খুঁটে খাওয়া বারান্দা 


 ভালোবাসার বারান্দায় 

খুঁটে খুঁটে খাওয়া পানকৌড়ি 

শুধু মানুষ গোনে। 

কতদিন ওদের ভাত নেই

পেটের মধ্যে চিঁহি ডাক শুনতে শুনতে

যে ভারতবর্ষ ঘুমিয়ে পড়ে

ক'জন আর চেনে সেইসব কারিগরদের। 

নির্মাণ আসলে এক ডুব সাঁতারে

সীমান্তের ওপারে পৌঁছে যাওয়া সত্যিকারের নাবিক, 

কখনও সে সব গল্প কেউ করে না 

কেউ শুনতেও চায় না। 

এ রকম আরো কত কি আমাদের বারান্দায়। 

স্বপ্নের জলছবি আঁকে, 

সংস্কারের ঘণ্টি বাজিয়ে মরণোত্তর হয়ে যায়। 

আর আমি শুধু পথিকের পরিচ্ছদ। 

বড় অসহায় লাগে

বারান্দায় গিয়ে বসি

দেখি আমি কিংবা আমরা কেউ নেই,

বারান্দায় আছে শুধু অগুনতি শুঁয়োপোকা।


৪: আমার শেষ 


রূপকল্পের ক্ষণস্থায়ী অভিরাতের তীরে

ভুল আমি-সংস্কার নৈঃশব্দ নক্ষত্রটিরে

মৃত্যুর মধ্যস্থতায় স্পর্শ গুণন করেছি

আঁধারের আবছা গল্পে অতল ছুঁয়েছি।

অনিন্দ্যের অযাচিত বাস্তবতার শ্লোক

তাড়িয়ে বেড়ায় রাতহীন অস্বর্গীয়লোক,

প্রেমহীন যাপন চিত্রের জাগরণ লেখা

আগ্রাসী জীবনবাদী আমি আমি দেখা,

ভাঙতে ভাঙতে ছুঁতে চায় অতলস্পর্শ

কেটে যাওয়া অভিজ্ঞানে আমি অপকর্ষ।

এবার অসীমের মীড়হীন ঋজু অনুপমে

আমার শেষ আমি লিখুক শুদ্ধ সোহমে।

Comments

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা