দেবানন্দ ভট্টাচার্যের কবিতা

 


দেবানন্দ ভট্টাচার্য। জন্ম কলকাতায়। উনিশশো তিপ্পান্ন

সালে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি একজন আঁকিয়ে।'নির্বাচিত কবিতা' সহ মুদ্রিত বই তিনটি।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবি দেবানন্দ ভট্টাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা। 



১: নদীকান্না


কাল সারারাত

একটা কুকুর

বুকভাঙা আর্তনাদে

অন্ধকারে ডুবে ছিল।

বিমর্ষ চাঁদের ঘোলাটে

জোছনার জল

ছড়ানো চারদিকে।

আমার প্রথম দ্যাখা 

বরুণা-নদীটি হয়তো

এখন ভিন্ন গ্রহবাসী।

কুকুরের হাহাকারে

অস্পষ্ট সে-ও এসেছিল

জলমগ্ন অবয়বে।

কুয়াশাধূসর এই ছবি

গা-ভাসালো নদীকান্না হয়ে।


           

২: একক শালুক


খানিক অবকাশে কখনোসখনো

ব্যতিক্রমী সন্ধ্যাও জুটে যায়। ভিন্ন

অর্থবহ পরিবেশ কতো কি ভাবায়

সবটা তো বলে দেওয়া যায় না।

সম্পর্কের গভীরে কৃষ্ণবর্ণ জল

তেচোখা মাছ শ্যাওলা শামুক

জলে গোল্লাকাটা আলপনা

বিপ্রতীপে একক শালুক.......


ফুটে আছে।সেই ঘন কৃষ্ণবর্ণ জলে

ডুবে যাই।শহরতলীর অলিগলিতে

বিবর্ণ জোছনা নয়ানজলির ছবি

হয়ে পড়ে আছে। খানিক অবকাশে

সে এক দুর্লভ প্রাপ্তি!


                                    

৩: অবন-পাখা


ফুলের কোণে ছোট্ট এক

প্রজাপতি।  রঙিন পাখা।

কে এঁকেছেন

কে এঁকেছেন

অবন ঠাকুর?


        হ্যাঁ----তাঁরই আঁকা।

           ০০০০ ০

দিনের রোদে এলিয়ে আছে

তটভূমি

আকাশ নীল  সাগরও  নীল

                        নীরব তুমি।

         

             

৪: প্রাচীন ধুলো


বাহির-ঘরে কড়া নেড়ে

দিন চলে যায়

ভিতর-ঘরে কড়া নেড়ে

রাত্রি গত

যাত্রাপথের হদিশ দেয়

প্রাচীন ধুলো

যেতেই হবে  যেতেই হবে

ঘড়ির কাঁটা........


বাহির-ঘরে কড়া নড়ে।

ভিতর-ঘরে কড়া নড়ে।


               

৫:  একমুঠো বিপন্ন 


দূরের আকাশ

যতো দূরেই থাক

হাতে এসে ধরা দেয়

অপরাজিতার মতো

একমুঠো নীল শূন্যতা


এই কি শান্ত উপত্যকা?

প্রশ্ন থেকে যায়।

       

           

৬: শব্দডিঙি


কাগজে-কলমে 

শুয়ে আছি

ডেকো না।

ভালো না লাগলে 

থেকো না।


খেয়াঘাটে

যদি রাত কাটে

হাতুড়ি পিটিয়ে জড়তা

ভীরুতা ভাঙি


রাত্রি দাপিয়ে ভেসে যায় 

একা---শব্দডিঙি।   

     

      

৭: যে বাউলের গান লোনালেন 


কেউ-ই তার কংকাল

ভাবতে চায় না। ভয় পায়।

যদিও মানুষ ও কংকাল

সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, ঘনত্ব

রক্ত-মাংসে, যেহেতু কাঠামো।

তারপরে তো খড় মাটি

ইত্যাদি প্রভৃতি।


ব্রহ্মাণ্ড সে এক স্বয়ম্ভু

মহাযজ্ঞভূমি.....দেহতত্ত্বের গান

শোনালেন গ্রামীণ যে বাউল

তাঁর গানে এই জেনেছি যে----


ইতি ও নেতির ফুলে ফুলে

নানারঙের প্রজাপতিও ওড়ে।


                     

৮: পিছনে পাথুরে 


পিঠ ঠেকেছে পাথুরে দেয়ালে

পিছন বলতে আর কিছু রইলো না

পড়ে আছে প্রকাশ্যে

শুধু সামনেটাই।

ধ্বস্ত শরীর। রক্তাক্ত পা।

এখনও অপেক্ষা! তবে কি আমরা

ঝাঁপাবো না?


        



Comments

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা