আমিনা তাবাসসুমের কবিতা


এই সময়ে খুব দ্রুত উঠে আসা এক নাম আমিনা তাবাসসুম।  মুর্শিদাবাদ জেলায় নিবাস। পূর্বে সনেট প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন  ,  লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।  বর্তমানে জিরো বাউন্ডারি গ্রুপের সাথে যুক্ত  আছেন। তরুণ এই কবি কবিতার নানান ঘরানায় লিখতে অভ্যস্ত, ছন্দের পাশাপাশি  গদ্যরীতিতেও। রোমান্টিক এই কবি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন নিজস্ব ভাষা শৈলীর নিরিখে। 

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে আমিনা তাবাসসুমের চারটি রোমান্টিক প্রেমের কবিতা। 


১ : দু মুঠো চুমুর দিব্যি 


এই চোখের তারায় মৃত্যু বয়ে বেড়াচ্ছি হাজার বছর থেকে,

প্রেমিকের বুকের বালিয়াড়ি আর বরফের হিমবাহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছে অনায়াসে

তবু আটকে রাখিনি চিতার আগুন,

জ্বালিয়েছি গভীর রাত্রে সহবাসের সময় সঙ্গিনীর শরীর

আর মৃত্যুতে প্রেমের বীজ রোপন করেছি কাঠামো জুড়ে।


বিশ্বাসের অনাহারে সম্পর্কের গভীর ক্ষত বিলাসে ক্যাকটাস গজিয়ে ওঠে

সেখানে জল দিয়ে বড়ো করি কাঁটার অবিন্যস্ত ষড়যন্ত্র।

না না, ভয় নেই তোমার

গজিয়ে ওঠা ফণা কিভাবে মাড়িয়ে যেতে হয় ঠোঁটের আদরে

সে আমি জানি।

বাসস্টপের স্রোতে গা ভাসিয়ে রোদ কুড়ানোর সময় আমার নেই।

তাই আকাশের অস্তিত্বে ভাঙন ধরছে রাত্রিদিন 

মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভীরু সিপাহির ফেলে আসা বস্তিতে।


চকমকিতে আলো ঠুকতে গিয়ে মিশিয়ে ফেলি তোমার শরীরের ভাঁজে দীর্ঘ নিশ্বাস

আবহাওয়া ঠান্ডার দিকেই চলছে গুটিগুটি পায়ে,

তাতে কি এসে যায়, সেই তো বিন্দু বিন্দু লোনা জলে কপাল ভিজছে।

দু মুঠো চুমুর দিব্যি দিয়ে বলছি,

প্রেমে আমার ছাড়পত্র কোনো শত্রুর ঘরের তরবারি থেকে আনিনি।


২ : এসো আছড়ে পড়ো


এই নিঝুম তারাদের ছাড়িয়ে তুমি এসো আমার বুকে

শরীরে প্রবল উত্তাপ এখন, যেন সমস্ত পৃথিবীর উষ্ণতা শুষে নিয়েছি।

তুমি ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ো আমার খোলা বুকে

আগুন! ভীষণ রকম আগুন জ্বলছে ভরপুর দেহে

ভাসিয়ে নাও আমায় তোমার সত্তার সঙ্গে

তোমার ঠোঁটের সব প্রেম আমি পান করতে চাই এক নিশ্বাসে

উফফ! কী উন্মাদনা তোমার ওই লোমশ বুকে,

আমাকে জড়িয়ে ধরো আরো গভীরে, যেমন করে জলের ভিতর মিশে থাকে তৃষ্ণা।

ভরিয়ে দাও পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার হৃদয়ে।

এত উত্তেজনা শরীরে! আরো কাছে এসো প্রিয়তম।

নিঃশেষ করো চুমুকে চুমুকে আমায়,

শরীরের গোপন গহ্বরে পুঁতে দাও তোমার আকাঙ্খার বীজ

চাঁদের রং ও আজ লাল দেখাচ্ছে কামাতুর শীৎকারে

পৃথিবী উচ্ছন্নে যাক, আর বিলম্ব করো না প্রিয়

যা কিছু বিমোহিত শ্লোক সব নিপাত যাক 

আমাদের আগুন দেওয়া দুটি শরীরের অভিসারে।


৩ : ভালোবাসার অদমনীয় ইচ্ছেঘুড়ি 


দিন দিন কেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছে নিজেকে আটকানো

কিছুতেই তোমার থেকে সরিয়ে রাখতে পারছি না এই মন

হঠাৎ করেই কখন ফুরুৎ করে উড়ে তোমার কাছে চলে যায়

আমি টেরও পায় না।

সারাদিন তোমার সঙ্গেই থাকি আজকাল

একটু সময় তুমি সরে গেলেই ভীষণ একা লাগে নিজেকে,

সারা বুকে শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ে অবিশ্রান্ত ভাবে।

তুমি আমার সামনে এলেই কেমন যেন

আমি চোখের তারায় রটিয়ে দিই আমার ভালোবাসার অদমনীয় ইচ্ছেঘুড়ি,

যার সুতো তোমার কাছে দিয়ে এসেছি কোনো এক যুগে জন্ম নেবার ফাঁকে।

যে পাথর হৃদয়ে তুমি বীজ পুঁতেছিলে নিত্যন্ত অবহেলায়

তার শাখা প্রশাখা এখন বিস্তার লাভ করেছে কোনো দূরের শহর পর্যন্ত।

এখন কোকিল ডাকে না আর, আসলে এটা বসন্ত কাল নয়

কিন্তু কোথা থেকে বসন্তের রঙের মত এক আকাশ প্রেম এসে পড়লো এই বুকে,

গলগল করে হিম হওয়া রক্ত উত্তেজনায় ছড়িয়ে পড়লো বিস্মৃত অক্ষরে।

জানি, উপায় নেই সামনে এগোনোর কোনো,

পেছনে ফেরার ও যে পথ বন্ধ!

এখন আমি এই পোড়া হৃদয় নিয়ে কোথায় দাঁড়ায়!



৪ : তোমার নামের দীর্ঘ আধিপত্য


গভীর প্রেমে পড়তে পড়তে পেরিয়ে এসেছি ছাপান্নটা দরজা

সবেতেই শুধু অঙ্কন ছিল তোমার নামের দীর্ঘ আধিপত্য।

গভীর অরণ্যের সবুজ পাতার গাঢ়ত্বে সাক্ষী ছিল তোমার ভালোবাসার চুম্বন

আমি সারারাত ছিন্ন হয়ে যাওয়া মন একসঙ্গে করে আঁচলে বেঁধেছি

শুধু তোমাকে দেবো বলে।


ওই দেখো ছায়াদের বনবাসে চকমকি আলো উঁকি দিচ্ছে বারবার,

আসলে তোমার সান্নিধ্য আমার ভীষণ প্রিয়।

তাই তো সূর্যকে দু ভাগ করে আমার গভীরে লুকিয়ে রাখি তোমার প্রতিচ্ছবি,

কালিতে কালিতে সর্বনাশ জাগে তুমুল প্রেমের,

একটা মানুষ! একটা মানুষ....

একটা মানুষ আমি চাইনা জীবন সঙ্গী রূপে

টলমল চোখের জলে ভাসিয়ে দেবো নাবিকের নাও

আমার কেবল একটা প্রেমিক চাই

যেখানে রাতের জোৎস্নার আদরে তার কোলে ঘুমিয়ে পড়তে পারি

এক জনম থেকে আরও বহু জনম পর্যন্ত..!!

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা