আবু তালেব মোল্লাহ্ র কবিতা

 

পরিচিতি:

নাম: আবু তালেব মোল্লাহ্

জন্ম: ১৯৬২ সাল। বাংলাদেশ। উত্তর বঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।

শিক্ষা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং এম এ। সাথে অনুসঙ্গ দর্শন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য।

কর্ম: শায়ত্বশাসিত সরকারী প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছাব্বিশ বছর কাজ করে স্বেচ্ছায় অবসর।

বসবাস: রাজশাহী শহর।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ একটি।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা।  


১: এনিমেশন


তার বুকের বালিয়াড়িতে ক'টা রাজহাঁস ছেড়ে আসি

আরেকটু অপেক্ষা করলে সঙ্গমের পূর্বরাগ দেখা যেত।

বিকেলে দু' চাকার গাড়ি চড়ে ফিরতে

রাস্তার ধারে আমবন,

কাঁচা আম কিনি ঠিকা দরে,

ক্ষেতমজুর কিসিম বাবার শিশুপুত্র শিশুকন্যা –

ঝোপ হাতড়ে ঝড়পড়া আম কুড়ায়,

গামছা পেতে রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করে।

শহরতলীর রাস্তায় লাইট পোস্টে তখন

সদ্য আমদানিকৃত এলইডি জ্বলে উঠছে,

এক কাপ আদা চা, আর একটা লাইট বেনসন - - -

মাথায় একটা পোকা নড়ে উঠে

ওরা রাজহাঁস নাকি বালিহাঁস ছিল।


২: লাল শোয়েটার


জনমের প্রেম পান করে নির্জনতা।

সম্মুখে বিস্তৃত আকাশ ও মাটি

দূরে জলধারা

তৃন অথবা দিগন্তের সবুজ বনানী

এবং কুয়াশার মসলিন চাদর,

কিন্তু ভোরের পাখিটি নেই।

কংক্রিটের পাড়ে

দুই পা ছড়িয়ে

একা বসে রোদ চিবায় লাল শোয়েটার,

প্রার্থিত মসৃনতা যখন বৃষ্টিহীন জমির ঢেলা।


৩: শরৎ রোদ


তুমি বলবে, মজার গল্প শোনাবো

বলবে, যে কোনো পাতায় লিখে রাখলেই হয়।

শেষ বলে কোনো কথা নেই।

ভোরে শরৎ রোদ ছাদের উঠানে হেঁটে বেড়ায়

ভিজা চুল শুকায়-

সৌষ্ঠবে রঙ ছড়িয়ে নিরুদ্বেগে কাঁপে;

কমলা বসনার শরীর ছুঁতে

কাঁপা পাখায় মাতাল মৌমাছি ঘুরে ফিরে আসে।

তখন জানালায় কাঠবিড়ালি

ফিক করে হেসে পালায়।


৪: আননোন নম্বর


শেষের দিকে তাকে খুব ভাবতাম,

একরামকে একদিন বলেছিলামও।

সে বলেছিল, বাদ দাও- এমন হয়ে থাকে।

আর কিছু বলিনি-

হানড্রেড সি সি লালহোন্ডা চড়ে জটাধারী

পিচের রাস্তায় সবেগে যাচ্ছিল,

চিৎকার করে তাকে কিছু বলতে চেয়ে

বিশ্বাস করিনা বলে থেমেছিলাম।

তারপর, উদায়স্ত বছর বছর ঘুরে

সেল ফোন বেজে উঠে ফিলিপনগরে,

স্ক্রীনে আননোন নম্বর -

সেই থেকে সব ভুলে থেকেছি।


৫: ব্যবচ্ছেদ


সকালের আলো ফুটে

প্রাতঃভ্রমনিরা কিছু বলতে বলতে হেঁটে যায়

জানালার পর্দা সরিয়ে এক পিপে আলোয়

ঘর ভরে রাখি।

ভেবে ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাতে -

রুমঝুম কি কারো প্রেমে পড়েছিল?

বলেনি?

বোকা মেয়ে, এতসব বলেছে এটা বলেনি!

অস্তাচলের নৌকা অন্যসবের মতো ব্যবচ্ছেদ ফিরায়।


৬: ব্যক্তিগত ভায়োলিন


ভায়োলিন একটা তুলকালাম কান্ড করে বসে।

অঝোর ধারায় বারিপাত হয়।

মানুষ সমাজবদ্ধ থাকতে চায়না,

ব্যক্তিগত ভায়োলিন সদা বাজে তন্ত্রীতে।

অবশেষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় নাক গলায়।

একান্ত পারিবারিক

কিংবা ব্যক্তিগত বলে আর কিছু থাকেনা।

সরকারি কোষাগার ও হিসাবের রেজিস্ট্রার

সার্বজনীন ঝরা পাতা হয়ে মার্চের আওলা হাওয়ায় উড়ে।


৭: বৃষ্টি


এখানে গুমোট বাতাস,

নীল নক্ষত্রের শরীর ঘেঁষে কালো মেঘ

কার্ণিশ ছুঁতে আসে।

বাঁকা চাঁদ চেয়ে আছে,

অন্তলীনা খোলা জানালায় ঘুমায়।

যদি বৃষ্টি না হয়

সূর্য গিলে খাবে তৃন।


৮: চাওয়া


খুব বেশি কিছু নয় – শুধু সকাল

শীতের উঠানে একটু খানি রোদ।

খুব বেশি কিছু কি-

কান পেতে শুনো বসন্তের অভিযোগ।

অত কিছু নয়, বিছানা পেতে রেখেছি

প্রতিশোধ নিয়ো-

সময়ের সাথে চুম্বন করোনা বিয়োগ।


৯: নীলাদ্রি


নীলাদ্রি একক বসনে আসে,

সাময়িকীর প্রচ্ছদ খুলে শোয়

বুকের ভেতরে তখন সোনাব্যাঙ লাফাতে শুরু করে।

পারফিউমের গন্ধে সোনাব্যাঙ ঘুমিয়ে পড়লে

শরীর জেগে উঠে।

রাতের গভীরে চিত্রিত রাত ভিডিও করে,

স্বর্ণা পরকীয়া পরে সোজা উঠে বসে বিবিধ মুদ্রায়।

রাত্রি আজ সারারাত তার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে।

তখন চোখের গরম জলে হৃদপিন্ড ভিজে যাচ্ছিল –

সে ভালবেসে ফেলেছে আকাশের তারাদের একটিকে,

তার নাকি নীলাদ্রিকে

ভীষণ নীল বলে মনে হয়েছিল।

নীলাদ্রি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে

নীলাদ্রি আর আসবেনা।

মধ্যরাতে সেলফোন বেজে উঠে

নীলাদ্রি পাশ ফিরে শোয়।


১০: সুতার টান


তোমার উদ্দেশে কবিতা লেখার ইচ্ছা সেদিনই বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কী এক আলো এসে যখন ছিনিয়ে নিলো আবছায়ার প্রেমালাপ। তবু নামোল্লেখ করে তোমার জন্য শেষ কবিতাটি লিখছি, হয়ত শুরুও।

আমরা কেউ-ই চাইনি আমাদের ডিসপোজেবল সুতার টান শুরুতে থেমে যাক। চেয়েছিলাম, দিন শেষের খানিকটা সময় নির্ঝঞ্জাট কেটে যাবে, সমস্ত ব্যাপারটা যখন কাকতালীয়।

বিব্রত তোমাকে তখনও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিলো। নিজস্ব আলো নিংড়ে তুমি সময়কে সামলালে দুঃসময়ের হাত থেকে।

কথা হবার কথা বলে চোরাবালিতে যখন পা ডুবিয়ে দিলে, তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল। তাই, আর আমি নিশ্চিত হচ্ছিলাম, ব্যাপারটা এখানেই শেষ হোক। কিন্তু সময় তাকেও অস্বীকার করেছে।


১১: নাম


তার নাম নিয়ে বডডো বিপাকে আছি

ঘুরে ফিরে তার নাম আসে মুখে

যখন তখন, কথায় কথায়

কি আছে তার নামে,

অনুমানে বুঝি শুধু মধু

অথবা কয় পেগ ওয়াইন

কোনো সময় হারিয়ে যাওয়া প্রেম

লোক জন কি করে কোনো সন্দেহ

নাকি নিজেকে নিজে করি-

পড়েছি প্রেমে।

সবকিছু বুঝে টুঝে

এই পাতা ওই পাতা উল্টে দেখি

তা-ই তো হয় প্রমাণ 

Comments

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা