বর্ণজিৎ বর্মনের কবিতা
পরিচিতি: বর্ণজিৎ বর্মন, জম্ম কোচবিহার জেলার বিনানই
গ্রামে । বর্তমানে মালদায় থাকেন । রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MPHIL চলছে অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের উপর ।
নিভৃত কবিতা যাপনে অভ্যস্ত তরুণ এই কবি কবিতা জীবনের শুরু থেকেই জিরো বাউন্ডারি গ্রুপের সাথে যুক্ত এবং সেখানেই বিশেষ ভাবে লালিত। তাঁর কবিতায় পাঠক পেয়ে যাবেন ভাব এবং মননের চুড়ান্ত সমন্বয়। ইদানীং অনেক অনেক কবিতা লিখে চলেছেন কবি এবং প্রকাশিত হচ্ছে নানান পত্রিকায়।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে তরুণ এই কবির বারোটি কবিতা।
১: অচল হৃদ
এইতো নীরবতা যেখানে
মুখরিত
স্মৃতি হারানোর বিজ্ঞাপন-
তুমি ছাড়া অচল হৃদয় ,
কে না জানে বলো কিছু কবি ?
পথ খুঁজছি নিরবধি ,
কে যেন কাঁদে স্ব্প্ন দেখার পর?
ও কি জানে সব সত্য ,সত্য নয়
সব অসত্য অসত্য নয়
এ কার বাণী?
গোপনে গোপনে নিজ চোখ খুলে
বন্ধ জানালার দিকে চেয়ে ,
চেয়ে দেখি শুধু স্তব্ধ আকাশ হয়ে ওঠে গেছে
চেতনার ঘরে ঘরে
২ : দৌড়
প্রিয় জম্মস্থান
একটি গ্রাম ,
শহর
দেশ , ছেড়ে
আমি দৌড়াচ্ছি ,
বুঝিনা জলের রং ,তাপের মাত্রা-
সময় এসেছে কার হাত ধরে?
কটা ফুল নীরবে ফোটে?
ঈশ্বরের বাগানে -
ঠিক, আকাশ ছোঁয়া একটিও
শব্দ পাইনি খুঁজে,
তোমার কানে মধুর ধ্বনি তুলবে ,
আলপনা আঁকা উঠোন এনে দেবে ভোরের সকালে ,
সুশান্ত নিদ্রা এনে দেবে যন্ত্রণাকাতর মনে ,
দাঁড়ানোর চেষ্টা কম করিনি ?
পাড়িনি তবু পাড়িনি
প্রত্যাশা ঘোড়াকে লাগাম টেনে আনতে ।
বুকে বহু আশা তাই স্রোতে ভেসে যাই
দৌড় একাই চলে
গন্তব্যের আনাচে কানাচে ঘেষে
৩ : সবদিক শূন্য
সব কিছু ভেঙে দিলে এই অসময়ে
পূর্ণিমা-চাঁদের সম্পর্ক,
সবদিক শূন্য শঙ্খ ধ্বনি-
যা কিছু অর্জন রেখে দিলে বোবাদের দরবারে
আমি চেয়ে থাকি-নীল সাদা ভাতের দিকে
শূন্যে উড়ে সহস্র ধুলো
চলে গেলেন অদ্বিতীয় কবি !
মেরুদন্ড সোজা,উচ্চ উচ্চারণ ধ্বনি
জলহীন পুকুরে হাঁসের বসবাস-
আকাশকে করতেন শাসন ।
দিনগুলি রাতগুলি দশ আঙ্গুলে নেড়েচেড়ে
কবিতার ঝুড়িতে ফেলে
অপেক্ষা নতুন সূর্যের দিকে তাকালেন -
আবার দেখা হবে,
আবার কি ফিরে দেখা হয় ?
৪ : সবদিক শূন্য
সব কিছু ভেঙে দিলে এই অসময়ে
পূর্ণিমা-চাঁদের সম্পর্ক,
সবদিক শূন্য শঙ্খ ধ্বনি-
যা কিছু অর্জন রেখে দিলে
বোবাদের দরবারে ?
আমি চেয়ে থাকি-নীল সাদা ভাতের দিকে
শূন্যে উড়ে সহস্র ধুলো
চলে গেলেন অদ্বিতীয় কবি !
"ভাবি তোমায় মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে"
মেরুদন্ড সোজা,উচ্চ উচ্চারণ ধ্বনি
জলহীন পুকুরে হাঁসের বসবাস-
আকাশকে করতেন শাসন ।
দিনগুলি রাতগুলি
দশ আঙ্গুলে নেড়েচেড়ে
কবিতা কালের স্রোতে ভেসে দিলেন ,
অপেক্ষা নতুন সূর্যের দিকে তাকালো
আবার দেখা হবে,
আবার কি ফিরে দেখা হয় ?
সব দিক শূণ্য - এ বুকের পাখি উড়ে গেছে
পোষা - প্রতিধ্বনি কলরব ফেরে
৫ : এবং মন
সমস্যাটা অন্য প্রান্তে
যেখানে কেউ পৌছাতে পারছে না
সব কষ্ট কি এমন ?
আলো বিস্তৃত শূণ্য দুপুর জুড়ে
মেঘ এলে বাতাস টেনে নেয় ঘরে
প্রতিটি মুহূর্তে জম্ম -গোপনীয় গলির মুখ
চেয়ে দেখি বিশুদ্ধ আকাশ
পাখি উড়ে যায় গাছ থেকে আপেল নিচে নেমে আসে
বিজ্ঞানির জম্ম হলো,
কি ভাবছ ? কবি হওয়া অত সহজ?
তোমরা বলছ তাই স্রোতে ভেসে এলাম সঙ্গে দুঃখের পদাবলী
নদী বয়ে চলেছে,
এক পা ,দুই পা -
একটি হাহাকার স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ
নদী ছিল মেয়ের প্রতীক
কতো একেবেঁকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়
এবং মন সব কিছু অর্জন চিহ্ন
বুকে আগলে রাখে
ক্রমাগত ব্যথা ফুল হয় যদি
৬ : এক কবির জম্ম
প্রতিদিন এক একটি জোনাকির জম্ম
ফুলকে মুগ্ধ করে
যেকোনো বাক্য রচনা পরীক্ষায়
ফুল কিংবা জোনাকি দিয়ে শেষ করে গাছের পাতা বসাই,
এক কবিতা লেখক
পত্রিকায় লেখা পাঠান
সম্পাদক কর্তৃক ছাপাও হয়
কবিতা কিন্তু মোটেই ভালো না
শুধু স্তব্ধ ভাঙা নৌকার ভগ্নাংশ,
কয়েক বছর কেটে গেছে
প্রতিটি পত্রিকায় মিনিমাম লেখার চাহিদা থাকে
সেই চাহিদার শেষ জোগানে
স্থান পায় কিছু অলেখা-
সেটা সবাই জানে ।
সব পত্রিকার আয়তন পূরণ করতে করতে
এক এক জন কবির জম্ম হয়
তোমার স্তব্ধ আলোর নিচে নিচে
৭ : স্মৃতি হারানো
বদলাতে বদলাতে তুমি
রুক্ষ মরুভূমি হলে ,
গাছ হতে পারলে না
এমন কি নদীও ,
ডাক নাম গুলি ক্ষয়ে ক্ষয়ে
পাললিক হয়ে ওঠে
তুমি কয়লা হলে বুকে জমালে আগুন-
বাবা , মায়ের ভালবাসার ছোঁয়া বইটিকে
অন্ধকার গ্রন্থাগারে পাঠিও না
বাবা -
৮ : যদি তাই সত্য
এরকম হয়, ওরকম হয়
ঘুমন্ত দুপুরেও ঘুমায় না কেউ কেউ কারণ জানতে চাইবেন না-
কেননা চাঁদকে আমি পৃথিবী বলি
পৃথিবীকে ছুটন্ত নীল ঘোড়া ।
রং গুলিয়ে চোখ হয়েছে অন্ধ
আমি যা বলব তাই খাওয়াব এখন
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে শূণ্য শরীর জুড়ে
তাই যদি সত্য হয়
গোপনীয়তার ব্লাউজ খুলে
ধুলোতে লুকিয়ে পরো ,দৈবাৎ
দেখা হলে সালাম বিনিময়
তাই যদি সত্যি হয়
গাছের বদলে পাতা পাতার বদলে শিকড় লিখি
লেখার বদলে ইশারা বোঝাই
তাহলে পাখির বদলে কি ?
নৌকার বদলে কি ?
তোমার বদলে কি লিখব ?
৯ : ঢেউ এসে
খ্যাতি তো নোনা জলের ঢেউ
অনেকেই শরীরে মেখে
উৎসব করে ,
স্নান সেরে উঠে ভুলে যায় সবকিছু
কল্পনায় থেকে যায় স্মৃতিটুকু
শূন্যে আর গভীর অন্ধকার বসে লেবুগাছের নিচে
যেন কালবৈশাখি মেঘ
সময়ে সময়ে জমে এবং নিমিশে তুচমাচার করে চলে যায়
ফেলে রেখে ভাঙাবসতির স্তূপ
মনে ঢেউ এসে গেলে নিসঙ্গ নিস্তব্ধ বসে থাকি একা
দিপালীর শেষ চিঠি বুকে জড়িয়ে
১০ : দৃশ্য-9
দুধে জল ঢেলে দিলেও রং বদলায় না -
তোমাকে আকাশ দেখালাম
চেতনায় চোখ খুলে দেখে
নীল সমস্ত মেঘ ।
এক একটা শব্দের এক এক রকম অপারবিস্ময় থাকে
উড়ে এসে জুড়ে বসে কালো মেঘ - বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা হবে
সব ভুলে , মেঠো পথে পা ফেলি
হাওয়া এখানে তুমুল সজনে ডাটা গাছে গাছে সোনার হারের মতো ঝুলছে
এই সব গ্রাম্য দৃশ্যের শুটিং
আমি তো স্বচ্ছতা বজায় রেখে কথা বলি, ধ্বনি সাজাই
এলোমেলো হয়ে যায় স্বর
১১ : পুতুল নাচ
সুতোই শুরু ও শেষ কথা বলে
কিছু নেই অর্জন
আমি ভেবেছি গোপাল সব দেবে
অসময়ে সব ভেঙে গেল ।
শীত যত ঘনিয়ে আসছে ততই শূণ্য এ বুকে জড়িয়েছে
একটি গাছের আত্মকাহিনী
মূল্যায়নের কতটা ঐকমত্য জানি না - বৃষ্টির কথা বলছি
একটি দেশের মেঘের আর্তকান্নার ছবি দেখছি
পুতুল নাচের ইতিকথা চিরঘুমের পথে
কাকু ছিল দক্ষ পুতুল খেলোয়াড়
রাষ্ট্র পরিবর্তন হয়, নীতিও
চলে আসে নতুন
সে আর টিকতে পারে না
ঘন ঘন বদল , এ ঘরের লোকের সাথে ওই ঘরের লোকের মিল নেই
নদী নেই , পাখি নেই এইখানে
১২ : শোক নামে ডাকি
সেইকাল থেকে উঠে আসে শব্দ
তোমার কিছু স্বপ্ন ছিল
কিছু কল্পনা ছিল
কিছু ছবি ছিল
কিছু রোদ ছিল
চিতাকাঠ ভেসে যাওয়া নদী ছিল
নিশ্চুপ কিছু পাখি ছিল
চোখ খুললে অন্ধকার আলোতে মিশে যায়
এই আলো সেই আলো নয়
আয়ু সামান্য উপমা বেশি
সময় ছোটে
বেড়ে যায় সমস্ত শোক
অসামান্য সব কবিতাগুলো। ❤
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteপ্রতিটি কবিতা অনবদ্য! আরও কবিতার অপেক্ষায়।
ReplyDeletechamatkr
ReplyDelete