হামিদুল ইসলামের কবিতা

 

হামিদুল ইসলাম। জন্ম 5 মার্চ 1955 সাল। গ্রাম  ভোঁওর। পোস্ট  কুমারগঞ্জ। জেলা  দক্ষিণ দিনাজপুর। শিক্ষা  উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর। উচ্চ মাধ্যমিক পাঠরত সময়ে স্কুলের একটি ম‍্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশ। কলেজ পিরিয়ডে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। লেখালেখির অভ‍্যেস ছোটোবেলা থেকেই। এ যাবৎ সাতটি একক কাব‍্যগ্রন্থ। ত্রিশটি যৌথ কাব‍্য সংকলন। প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা থেকে ' সাহিত‍্য রত্ন '  ' কবি সাগর ' সম্মাননায় সম্মানিত। লেখালেখি চলছে। এখন যবৎ বাঁচি তবৎ লিখি। 

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা 


                              (১)  স্বপ্ন বাসর 

                        
                  

সুবোধ বালক হাত চিঠি আঁকে 

অভিমানী দুপুরের কুমারী মুখ ছুঁয়ে যায়

কোঠাবাড়ি মন্থকূপ

জলের স্পর্শ মাপি

আঙ্গুলের ভাঁজে সূর্য নেমে আসে গভীর হতাশায়  ।।


নক্সাচরিত্রে ঘাম স্বপ্ন জেগে ওঠে 

অভিশপ্ত বহ্নিতে পুড়ে যায় শূন‍্য হৃদয় 

দুচোখে সময় ঘ্রাণ

নৈর্ঋতে ব‍্যাকুলতা

প্রতি মুহূর্তে নৈর্ব‍্যক্তিক শরীর জুড়ে বিলাস যাপন ।।


সুবোধ বালকের মাঝে ভাস্বর আমি 

আমার রঙ তুলিতে কৃষ্ণচূড়া প্রান্তিক মানুষ

শোষক শোষিতের যুদ্ধ

ব‍্যারিকেড। রক্ত 

শোষকের লালবাতি ঢেকে দিচ্ছে সংগ্রামী সূর্য  ।।


হাত চিঠিতে আছড়ে পড়ে কুমারী কান্না  স্বপ্ন বাসর ।।



                              ( ২) আশাবরি


হাতের চেটোতে রাখি 

ধৈর্য 

মেঘ ভাঙনের কিছু অনিয়ম কথাবার্তা  ।।


উচ্ছল স্বপ্ন ভাঙে 

বিষন্ন প্রান্তর

জল নৌকায় এখন দাঁড়ের শব্দ শুনি  ।।


ঈশ্বরও ভেসে যায় 

হরতনে 

মৃত লাশে হাজারো রক্তের মিছিল  ।।


বসন্ত আসে না আর

বাসমতি ছন্দে

ঘরের কিনারায় প্রতিদিন সূর্য পতন  ।।


অশ্বখুরে দলিত ঘ্রাণ

মৃত‍্যু স্বাদ 

অস্পষ্ট অক্ষরে লিখে রাখি আক্রোশ  ।।


জীবন ! তুচ্ছ জীবন 

আশাহত 

বিনিদ্র রজনীর বুকে কৃষ্ণ চরিত  ।।



                                  (৩) প্রত‍্যয়


পৃথিবীর পাঠশালা পেরিয়ে আসি

অরণ‍্যে ঢেকে যায় মুখ 

ছোটো ছোটো বৃক্ষ 

আজো হাত বাড়িয়ে দেয় আমাদের শরীর যুদ্ধে  ।।


ছোটো ছোটো আশা ভেঙে ভেঙে পড়ে 

অনন্ত নদী মোহনায় 

ডুব দিই জলে 

শামুকের খোলসে দেখি জীবনের সুপ্ত আশ্বাস  ।।


প্রতিদিন ভোরের মিছিল সাজাই 

হাতের সিঁড়িতে সূর্য 

নাভীপদ্মে বীজ 

জমিনে শেকড় পাড়ি দেয় প্রত‍্যয়ের বসতভূমি ।।



                              ( ৪)    জন্মদিন


শুস্মিতা বলেছিলো, আমার জন্মদিনে তোমার আসা চাই 

জন্মদিন এসেছিলো ওর 

ধীবর যাত্রায় দাঁড়িয়েছিলো চাঁদ

দুহাতে স্বপ্ন

নৌকো জীবন উৎসব

টেবিল ফুলে সেজে উঠেছিলো আবেগ আর উচ্ছ্বাস 

স্বপ্নসিঁড়ি আমি পৌঁছে যাই

নিষ্প্রভ বাড়ি

শুস্মিতা নেই। হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে আছে জীবন 

কিছু স্মৃতি 

ইতিহাস 

রাস্তায় কলেজ জীবন 

ট্রাম বাস ভ‍্যান রিক্সাগাড়ি

মুটে মজুর শীৎকার 

শুস্মিতা শুনছে সব 

আমি কেবল মর্মরে সাজাই জন্মদিন। দেয়াল 


                                ( ৫)    আদর


ফুল শয‍্যার রাত

তোমার খোঁপায় হারিয়ে যাচ্ছি আমি 

রাত্রির শরীরে জোনাক নির্যাস

তোমার বুকের শব্দ ভাঙছে আমার আমি ।।


আমিকে সামলাই 

তবু আমি ফিরে আসে তোমার স্বপ্ন ও ঘামে 

বকুল বেলায় ছন্দের সুর বাঁধি 

প্রতিদিন নীড়ে ফেরা পাখিদের ডানার ঘামে  ।।


খাটের বাজু ভাঙি

আমার নিঃশব্দ ছায়া মিশে যায় পলল শীলায় 

স্বপ্নের ঘোরে দাঁড়িয়ে থাকে জীবন 

স্বপ্ন ভেঙে দেখি আমিও পড়ে আছি পলল শীলায়  ।।


কালঘুমে ক্লান্ত দিন 

পায়ে পায়ে ছুটে আসে গ্রীষ্মের গরম আদর 

তোমার নিতম্বে দাঁড়ের শব্দ

আমার দুহাত ছুঁয়ে যায় তোমার নির্বাক আদর  ।।



                                (৬)  নোঙর 


এখনো পরিত্রাতার হাত ধরি 

নতজানু অনুভূতি

হৃদয়ে বেদনা

নাস্তিকতার শেকড় উপড়ে ফেলি  ।।


জগৎ বিন্দু বিন্দু ভাবনার আকর 

ভাবনাগুলো কুড়োই

স্মৃতিরা হারায়

ফিরে আসি আপন চিলেকোঠায়  ।।


জলে জন্ম পদ্মবীজ। ভাবনার জলে জীবন নোঙর করি  ।।



                               (৭)   বরণ


বিবেকের ভেতর এখনো হামাগুড়ি দেয় 

                 গভীর এক বোধ

দুচোখে সমুদ্র। জল ও জলে ভেজা মানুষ 

                 একবুক হাহাকার 

হাহাকারে ডুবে যায় মন ও হৃদয়ের অসুখ  ।।


বৃক্ষের নির্জন ছায়ায় দুহাত পাতি প্রতিদিন 

                   শেকড়ে বিশ্বাস

পোয়াতি দুঃখগুলো ফিরে আসে অরণ‍্যে 

                    জাগ্রত নাভীমুখ

ছায়ার ঘোমটায় রোজ নৈঃশব্দের মৃত‍্যু বরণ  ।।


হৃদয়ের ঘাটে এখনো হাতড়াই জীবন ও মরণ

                     অসহায় মানুষ 

বুভুক্ষার কাঁধে মাথা রেখে ডুবে যায় স্রোতে

                     হনন যজ্ঞ এখন

উলঙ্গ রাজা বিব্রত আজ ঘরে ও ঘরের বাইরে ।।

Comments

Popular posts from this blog

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল এর কবিতা

শ্যামল সরকারের কবিতা

শম্পা সামন্তর কবিতা