ভবেশ বসুর কবিতা
কবি সাহিত্যক তথা প্রাবন্ধিক , ভবেশ বসু এই সময়ের এক উল্লেখযোগ্য নাম । তাঁর সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার থাকে । আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির একগুচ্ছ কবিতা।
(১) জ্ঞান
জ্ঞানের বেশি কথা নেই-----যে জ্ঞানী সে বকুল ফুলের মতো অথবা কাঁচ পুতুল
জল-স্রোত বড় বেশি কাঁপে------সাঁতার কাটতে গিয়েও পাড় ভাঙে শব্দ করে
অস্তিত্ব নিজের মনে হলেই তখন আমার অবয়বে আমি হাসি
সন্তান সবসময় অচেনা ভূখণ্ড------খলবল করে-----হাততালি বাহবা নেয়-----মায়ের ভূ-ভূমি চেনা-----দুপুর গড়ালেও পাহাড় হয়ে আছে তার সময়
আয়নায় চোখ না রেখেও দেখা যায় কে কোথায় ঘুমায়।
কয়েক যোজন উঁচুতে উঠে----শব্দ না করেও তবু চিল দেখে নেয় তার আহার
নিঃশ্বাস ঠিক হয়ে নিয়ে আসে কোথায় অক্ষর এবং সকল শব্দের বাহার
আমি দেখেছি ডাক দিয়ে গেলেও অনেকেই আসে না-----আদেশ শোনায় বলে
আবার উর্বর শরীর খুলে না দিলেও খ্রীষ্ট প্রণাম সারে সবাই মৃগনাভি হয়ে।
আমাদের ছুঁয়ে আছে নীরব ঐশ্বর্য------তার অভিমান ঘৃণা নেই
শরীর অযথা পল্লভে পতপত করে---ঝড়ের মতো ছন্দ ছলনা
লজ্জিত হয়ে দেখ প্রেম কখনো চুল বাঁধে না।
(২) অনাদর
বড় কিচিরমিচির করে এতটা পথ এলাম-----কিছুই দেখা হল না শোনা যায়নি
কখনো পোশাক খুলে কখনো পোশাক পরে প্রলাপ বকেছি ভালোবাসার প্রলাপ-----গাছের নীচে দাঁড়িয়েও টুকরো টুকরো বিরহ এসেছে-----নদী ধারে এসেও সেই ভাসানে ভয়
পূজার উপকরণ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ-----প্রতিমার মুখ দেখা হয়নি
নিজেদের প্রবাহে নিজেরাই ভেসেছি------আবার দুজন দুজনে স্বতন্ত্র খরা,জলে জলপিণ্ড হইনি।
যখন ছোট ছিলাম------পাখির ছানার জন্য লোহার খাঁচার আবদার কান্না বারবার
যৌবন-মন্দিরে পৌঁছাতেই চলে যায় এক প্রহর অতৃপ্ত সংলাপ
সূর্যের তেজে গলে গেল বরফ------আর সূর্যমুখী না হয়ে জমে গেছে আমার ছিটানো সুখ
ভেঙেচুরে একই রাস্তায় বসবাস-----পিতা বা মাতা হয়ে মুখ-সুখে কেঁদেছি অঝোর।
শব্দের অক্ষর ভাঙতে ভাঙতে এতটা পথ এলাম----শব্দহীন হলাম
আমার ঘরের জন্য ঘর------অনাদর------তোমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
(৩) ফাঁস
একটা দড়িতে আমার ফাঁস লেগে গেল----দম আটকে যাচ্ছে------জিভ বেরিয়ে পড়েছে-----চোখে বারুদ থেকে জ্বলছে না
আমি কি আত্মহত্যা করছি----অথবা কেউ গলা টিপে জানতে চাইছে আমার শরীরের লোভ কত !
মহামান্য আদালত,লোভ কাকে বলে !
যে পাখি গান গায়,গানই তার সম্বল-----অথবা খনি থেকে যে মুখ উঠে আসে-----টাকা গুনে কড়কড়ে পাঁচশো----সে তো তারই কোনো ক্ষুধার্তের কাছে জমা হবে
আমি তাদের পিতা বা মাতা বা অন্য কেউ
ফাঁসির দড়ি ক্রয় করার অর্থও কাছে থাকে না।
একটা মোটা দড়িতে আমার ফাঁস লেগে গেছে
তোমরা সব রক্ত ও শোক একদিন ধুয়ে ফেলবে
কিন্তু বিপুল বৃষ্টিতেও যে রক্ত রয়ে যাবে----তারা যদি কোনোদিন দল বেঁধে আসে আপনার কাছে----কবির কাছে----পৃথিবীর সামনে ?
(৪) অনুভব
আমার যখন চৈত্র শেষ হয়,তোমার তখন বৈশাখ শুরু সুখে
আলো নিভে যখন জ্বালাতে পারি না,পাখি ধরেছে নতুন রাগ
তুমি তখন চনমনে আরো,হারানো দিন আঁতিপাতি করো
যেমন আষাঢ মেঘ জল ঢালা শুরু করে মাঠে।
কোনোদিন সমান যায় না পৃথিবী,অমসৃণ সব সময়
আমি হেমন্তের অনুভবে এলে,প্রকৃতি দিয়েছে তোমায় শ্রাবণ
আহা এরকম কত কি আছে
ধূসর হলে মন -----আকাঙ্খা করেছে শিশির বরণ।
চিরদিন নদী থাকে না নদী,ভাটার টানে ঘর বন্দী
বন্দীরা পলাতক,কেউ খুলে দিয়েছে লোহার আগড় সুখ গভীর
দূরে চলে যাই আবিষ্কারে ভেসে,নিকট ক্রমশ উজ্জ্বলতায় বাড়ে
আমি বাড়িমুখো হলে,তুমি ধরলে পাহাড়ী পথ আগুন বাতাস জলের ভিড়ে।
সবপথে জ্যোৎস্না নেই,সবপথে রোদ জলও নেই
অগণন বনের ভিতর সকাল সন্ধ্যা খেলা
সাধ হয় দুহাতে ধরি আমাদের সেই স্নানের বেলা।
(৫) আঁকা
খাতায় অনেক আঁকিবুকি-----খাতায় অনেক ষোলয় থাকা মেয়ের ছবি------কাঁটা গাছের জঙ্গলও পাতায় পাতায়
সূর্যাস্ত কিভাবে হয়,তাও আছে এক আকাশ।
ছেলে আঁকছে-----আঁকতে শিখেছে ছেলে
কালিতে কথা ভরছে-----তুলিতে কথা তুলছে
ছেলেটি অনেক হিজিবিজি-----বারবার নদী নালা-----পুকুর ডোবা সাগর ঢেউ
বৃষ্টি তো কম হয় নি-----বৃষ্টিও গভীর।
বৃষ্টি আঁকছো কেন ছেলে------সূর্যাস্ত কেন হল-----এত কাঁটা নালা ডোবা পুকুর -----পা রাখার জায়গা নেই।
এই দেখ,কি আঁকতে হয় প্রথম।
তার হাতে ছেলেটি আঁকা শিখছে-----একসাথে তিন রঙ প্রথম
প্রথম তুলিতে মা
দ্বিতীয় তুলিতে বাবা
তৃতীয় তুলি তার শরীরে লিখেছিল মানব সন্তান
Comments
Post a Comment