বিশ্বজিৎ সরকারের কবিতা
নদীয়া জেলার করিমপুর থানার অন্তর্গত নাজিরপুর গ্রামে বাড়ি। বি এড সহ বাংলায় এম এ। কবিতা লিখছে বেশ কয়েক বছর , কিন্তু জিরো বাউন্ডারি গ্রুপে এসে নতুন ভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছে । ইদানীং বেশ সুন্দর লিখছে ।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে এই তরুণের একগুচ্ছ কবিতা।
১: নিরুত্তর
এমন তো নাও হতে পারে
তুমি যা ভাবছো সম্পূর্ণ অর্থহীন
হতে পারে তীরের ফলায় রক্ত
বিষাদ নয়, আনন্দ-উল্লাসের!
গভীর রাতে যে মেয়েটি একা একা কাঁদত,
সেও শিখে গেছে কীভাবে ভালো থাকা যায়।
বুকের মাঝেতে যে জল জমে ছিল
হাড় ভাঙা শীতে তা পাথর,
বয়ে চলা ক্লান্ত বাতাসে
ঘুম ভাঙে শিশুটির।
অথচ শিশুর মুখে হাসি নেই
আছে শুধু করুণ আর্তি!
বহু দূর যখন উড়ে যায় পাখিটি
ভুলে গেছে পাখি তার বাসাটি।
অন্ধকার নেমে আসে
জানালার ফাঁক দিয়ে
সামনে ভেসে বেড়ায় নিরুত্তর ছবি!
২: অবকাশ
অন্তহীন আকাশ মেঘ-রোদ্দুর
এলোপাথাড়ি বৃষ্টি মুখ ছুঁয়ে যায়
তীরের বুকে ঘুমিয়ে থাকে জোনাকি!
পাহাড়ের দীর্ঘশ্বাসে মৌন হয় মন
শরীরের হাড়গুলো জড়ো হতে থাকে
কালো মেঘে মুখ ঢেকে যায়!
ঝড়ের তীব্রতা বাড়ে অবকাশে
অজান্তেই রাতের প্রহর কেটে যায়
শিরায়-উপশিরায় রক্তপ্রবাহ থেমে যায়।
সরতে সরতে দূরে সরে যায়
যতটা দূরে গেলে না ছোঁয়া যায়
ছুটতে থাকি ছুটতে থাকি..
৩ : জীবনের গতি পথ
জানালার কাঁচ বেয়ে
স্মৃতি গুলি ফিরে আসে
সাগরের ঢেউয়ে স্বপ্ন কাঁদে
মুছে যেতে থাকে চলার পথটি।
জীবনের গতি পথে
চলার পথটি ক্রমশ সরু হতে থাকে
দূরত্ব বাড়ে পরিচিত মানুষটির সাথে
ডুবে যেতে থাকি নোনা জলে।
ঘন কুয়াশায় মুখ ঢেকে যায়
বাদুড় ঝুলে থাকে বটগাছে
কাকের ডাকে ঘুম ভাঙে
ঘুরে বেড়াই যাযাবর হয়ে।
সামনে যেতে চাইলেও
ফিরে আসতে হয় পেছনে
অদম্য আবেগ- ভালোবাসা
আগুনে জ্বলে পুড়ে মরে!
৪: : বিবর্ণ বসন্ত
সু-সভ্যতার আলোকে পথ হয়েছে সুগম
রাতের ল্যাম্পপোস্টে অন্ধকার লুকিয়েছে
কাঠফাটা রোদে জলের হা-হা কার
কোকিলের ডাক থেমে গেছে চৈত্রের আঙিনায়
ফোটেনি ফুল বকুলের ডালে
বসন্ত আসেনি, এসেছে গুটিবসন্ত
আসবে বলেও আসেনি নৌকার মাঝি
মেলেনি দেখা কোনো ঘাটে
স্রোতের গতি থেমেও..
তীরের বুকে ঘুমিয়ে আছে
অসংখ্য ক্লান্তি জমছে নিজের অজান্তে
নলেন গুড়ের স্বাদ পাইনি আর
চাঁদের হাসি ভুলেছি জোনাকির আলোতে
শিমূল-পলাশে বসেনি মৌমাছির দল
৫ : হ্যালির ধূমকেতু
আমি তো আকাশ হতে চেয়েছিলাম
তুমি বৃষ্টি হয়ে নিচে নেমে এসেছিলে
সন্ধ্যে বেলায় যখন পাখিরা বাসায় ফেরে
তুমি আসো লাল গোধূলি শাড়ি পড়ে!
আমি দেখেছি ধ্রুবতারা
মেঘমুক্ত রাতের আকাশে,
এক ছায়াময় কল্পনায়
মনের গভীরে অলীক ছবি এঁকে যাই।
উড়ন্ত ছাইয়ের বাতাসে
স্রোতবিহীন রক্ত বিদ্রোহ করে!
আমাকে আগাম জানিয়ে দেয়
হ্যালির ধূমকেতু ৭৬ বছর পর পৃথিবীতে নামে।
৬ : এখনও প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি
জানিস তো এখনও
প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি
বদলে যেতে পারিনি অন্য কারোর মতন
নতুন কোনো সম্পর্কে যেতে ভয় হয়,
যদি তোমার প্রতি ভালবাসা কমে যায়
তাই এভাবেই ভালোবেসে যাই
নতুন করে নতুন ভাবে।
কিছু মানুষ হঠাৎ করেই চলে আসে
আর চলে যায়, কিছু না বলেই
মনের গভীরে যে ঘর বেঁধেছিলাম
আচমকাই ঝড়ে ভেঙে গেছে
চলে তো গেছে শুধু রেখে গেছে
এক মুঠো স্মৃতি....
৭: জীবনের অঙ্ক
পোড়া রুটি বাসি হলে
মুখে নেওয়া দায়
ভোরের স্বপ্ন সত্যি হলে
নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন যোগায়
হারানো সুর বেজে ওঠে
হৃদয়ের খামে
তুলির টানে আঁকতে বসি
পুরনো স্মৃতিগুলিকে
উপপাদ্য কিংবা সম্পাদ্যের
হিসেব আর নাই
দশমিকে ভুল হয়
পৌনঃপুনিকে থেমে যায়
৮ : অন্তরালে
কৃষ্ণ সাগরের বুকে
সিন্দুকে মুক্ত সু-রক্ষিত আছে
দাবানলে বন পুড়ে যায়
পুড়েনি শেষ সম্বল অস্থিটুকু
হেঁটে চলি কচ্ছপের মত
অজানার পথ ধরে
আবেগ গুলি নৌকায় ভাসিয়ে
যেতে চাই অচিনপুরে
ঘড়ির কাঁটা থেমে যায়
রথের চাকা উল্টো পথে ঘোরে
নোনা জলে ফেনা উঠে
পুড়ে যেতে থাকি
অসমাপ্ত গল্প হয়ে..
সুতোর তার ছিঁড়ে গেছে
বাসা ছেড়ে গেছে বাবুই পাখি
আসেনি ফিরে মাছরাঙ্গাটি
বুকের মাঝেতে আগুন জ্বলে
ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকি!
৯ : শত বছরের ভালোবাসা
পড়ন্ত বিকেলে উড়ন্ত ছাইয়ের গন্ধে
নিঃশ্বাসে বিষ মেশে
বাস্তবতা ঠোকর খায় চৌকাঠে।
হাজার কথাগুলি ভিড় করে
হৃদয়ের খামে..
স্মৃতিগুলি মিশে যেতে থাকে ভাঙা কাঁচে,
ছেড়ে গেছে মাঝি নৌকা তীরে
আসেনি বাবুই পাখিটি তার বাসায় ফিরে
মেঘের গর্জনে, মন বিচলিত হয়
জড়িয়ে ধরে শিশু তার মা'কে!
এ যেন শত বছরের ভালোবাসা
বেঁচে থাকুক আ-জীবন!
Comments
Post a Comment