সোমিনা ইয়াসমিনের কবিতা
সোমিনা ইয়াসমিন মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা । কবিতা লিখছে অনেক দিন হল । তবু মাঝে মাঝে বিরতি পড়ে লেখায়। এক সময় জিরো বাউন্ডারির সাথে যুক্ত ছিল । পুনরায় ফিরে এসেছে লেখায়। আজ একক উদযাপন বিভাগে থাকছে সোমিনার পাঁচটি কবিতা
(১) হিউম্যান রোবট
ডেথ সি'র ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্য যদি উপভোগ করতেই হয় তবে তার শান্ত ঢেউয়ে জীবন্ত ফসিলের তরিকায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই ভবিষ্যৎ।
যতখানি উত্তাপে ভেঙে যায় দেহের অনুপরিমান সংযম,ওলট-পালট হয় দেহস্থ প্লেট নগ্ন জীবন -চরিত্র অথবা কোনো প্রণয়ী মুখের মুখোশ।
বরং তারচেয়ে শ্রেষ্ঠ অতি-স্বল্পত্তাপে মনস্তাত্তিক সত্তাকে চুবিয়ে উঠে আসুক কিছু মন্থিত আবেগ।
আবিস্কৃত হোক কিছু অভেদ্য মানসিক স্তর,যার মনোনয়ন পত্র হবে সুগভীর অথচ স্বচ্ছ।
থাকবে স্বাচ্ছন্দবোধ,যা নিমেষেই পড়ে নিতে পারে অপ্রকাশিত প্রণয়ী ভাষা। স্থির অথচ আনুবিক্ষনিক দৃষ্টির প্রেক্ষাপটে মিলিয়ে নেবে জীবনের বত্রিশ আনা।
মাদকাসক্তের মতো অবলীলায় শুষে নেবে স্বর্গীয় নির্যাসটুকু। অন্তত সে মুহুর্তে যেন ঝরে যায় প্রাপ্তির সবটুকু অশ্রু।
(২) সীমানা
দীর্ঘদিনের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যখন আচমকাই বিস্ফোরণ ঘটাতে শুরু করে তখন তাকে থামানো দায়!
পুড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল অথচ তাকে এতকাল জেনেছি মৃত, উত্তাপবিহীন স্তূপ। ভাবিনি ---- এভাবেও ঘুম ভাঙানো যায়!
সে খুলে দিতে পারে দুঃসাধ্য আত্মসংযমের মুখোশ।
আবরণবিহীন নগ্ন সেই ভয়াবহ রুপ আমি কীভাবে দেখি! যাকে দেখেছি সেই চিরাচরিত লজ্জাবতীর নিজস্ব ব্যারিকেটে।
এ মুখের চেয়ে ঢের ছিলো ভালো; সে মুখোশ।
এতকালের উপেক্ষা- অহংকার গুঁড়িয়ে দিতে চায় নিমেষে।
অথচ তা আমি মাপিনি কখনো দৈহিক সীমানার স্কেলে।
(৩) অস্তিত্ব
পৃথিবীর বুকে সমুদ্র যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে তবে তা পাহাড়কে। কেননা, একমাত্র পাহাড় রাখে অতল সমুদ্রের মনের খোঁজ,গর্ভস্থ অনুপরিমান প্লেট স্থানান্তরের হদিস। সে প্রণয়ের গভীরতায় ডুবে যেতে পারে অনায়াসে। তুলে আনতে পারে আশ্চর্য প্রাণের স্পন্দন। তার বুকে প্রশান্তির ঝরনা। ঝরণাকে কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছে সবুজ অরন্য। অথচ সমুদ্রের সাথে তার নিবিড় সখ্যতা। জীবনের সূত্র আর বয়ে চলা সত্যিই অদ্ভুত। একে পরকীয়া বলে আখ্যায়িত করা যায় না। কারণ সমুদ্র -পাহাড়ের সম্পর্ক আদি কালের, সূচনা পর্বের, তার অস্তিত্বের। সে
ভালোবাসে তার কাঠিন্যের মধ্য দিয়ে, যার নেই কোনো রিপ্লেসমেন্ট। উজাড় করে দেওয়ায় তার প্রকৃত ধর্ম। তবে বলপূর্বক বলা যাবে না 'ইচ ফর আদার'। সে শুধুমাত্র সমুদ্রের জন্য সৃষ্ট নয়,বরং সৃষ্টি হয়েছে অদৃশ্যের রহস্য উন্মোচনের জন্য।
(৪) চিরকুট
অনেকের কাছে জন্মদিনটা শুভ হলেও প্রতিটা জন্মই শুভ নয়। কেউ -কেউ স্ব-মৃত্যু আহবান করে দেহের অথবা আত্মার। প্রতিটি জন্মের - জন্ম হয় কোটি অস্তিত্বের বিনাশ দিয়ে! সূচনাতেই যদি সমাপ্তির ঘোষণা করি ,তবে অসংখ্য সমাপ্তির সূচনা রোপিত হবার আগেই কালের গহবরে হারিয়ে যেতে পারে। যা যুদ্ধ দিয়ে শুরু, তা যুদ্ধের ময়দানেই শেষ।
(৫) শেষের চিঠি
বিচ্ছিন্নতার জোয়ারে কখনো- সখনো নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয় অন্যায় দাবি-দাওয়া থেকে,
বেহায়াপনার জারজ সভ্যতা থেকে,
আদিখ্যেতাময় কপট ভালোবাসায় ডুবে যাওয়ার চেয়ে,
কথার কথা'-র স্রোতে ভাসবার চেয়ে,
অমেরুদণ্ডীর মতো বহুগামিতার হাত ধরে তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে
অতিরিক্ত আবেগের বশ্যতা স্বীকার করার চেয়ে ঠিক আগের মুহূর্ত অব্দি আমি ভেবে নিই,
যা আমার রুচিতে বাধে ----
আমি সতর্ক থাকি ----
অনুভূতি যেন বেশ্যা আখ্যা না পায়,
আমার কলম যেন অপবিত্রতায় মেতে না ওঠে,
তার চেয়ে বরং দৃষ্টি অবনত রাখতেই পছন্দ করি।
Comments
Post a Comment