খুকু ভুঞ্যার কবিতা

 


জন্ম:১৯৮৪ সাল ২২শে অক্টোবর, পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক সংলগ্ন জঁহাট গ্ৰামে।মা: শ্রীমতী রাধারানী মাইতি বাবা:শ্রীযুত রবীন্দ্রনাথ মাইতি। শিক্ষা: মাধ্যমিক। পেশা: গৃহবধূ ।কাব্যগ্রন্থ তিনটি:১: লেপের আদর খোঁজে ফুটপাত ২: মাটিপাঠ ৩: চন্দনে সাজিয়ে দাও কান্না

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির পাঁচটি কবিতা 


১ : খরা প্রহর শূন্য নদী


অশ্রুই অনিবার্য ছিল, রোদ প্রহেলিকা

স্বীকার না করে মন পেরোতে চায় ঝড় বজ্র যত ভাঙচুর

পেছনে পড়ে পতিত হয় সবজি বাগান পাটখেত

ঝরে পড়ে তুলসী ফুল সন্ধ্যামণির শ্বাস


কোলের বন্ধনে জড়িয়ে থাকা সম্পর্ক দিশাহীন পাখি

পথের ঠিকানা না জেনেই মেলে দেয় ডানা

পালকে মেখে নেয় ঝড়ের গান, সর্বনাশ

সময় না দিলে গাছও বেঁকে যায়

থানকুনি ঘাস হারিয়ে ফেলে শিকড়

ঘাম পুরুষ আলের কোণে বসে কান্না করে তুমুল


সে অশ্রু বায়ুকোণের ঝড় ডাকে

তছনছ করে দেয় যতটুকু সুন্দর আছে বেঁচে

যতটুকু অক্ষত অতি গোপনে

তাকে একমুঠো ফুল দেবার প্রয়োজন ছিল ভেবে যতবার খনন কাজ শুরু, বৃষ্টি উধাও

খরা প্রহর শূন্য নদী চুপচাপ, উদাস


বন্ধন এক মায়া

বেড়ার গেরোর মতো শক্ত হলে চাঁদ সূর্য সত্য

তুমি আমি সত্য

বিনিময় সমর্পণ দেওয়া নেওয়া সব সত্য

মাটি থলথলে দঁক হলে---

হে ঈশ্বর তোমাকে রাখব কোথায়--


চাঁদের আগুনে পুড়ে যায় আঁচল



২ : জীবন একটা লড়াই খোঁজে



 পূজার ফুল তুলতে গিয়ে পাপড়ি ছিঁড়ে ফেললে বুঝতে পারি মন কতটা বিধ্বংস

কতখানি ধস নেমেছে রক্তে মননে

হাঁ করা ঢালাই রাস্তার মতো যন্ত্রনা নিয়ে কিভাবে কাটছে প্রতিটি প্রহর কাউকে আর বলি না

ভেঙে পড়া কাঠামোর ওপর বালিকা বধূ হেঁটে গেলে কার হাসি পায় হাসো

কার দাঁত খিঁচুনি ওঠে উঠুক

নাবালিকা আলতা পা জানে রাস্তা কত ভাঙা ভয়ংকর

অথচ তাকে হাঁটতে হবে অনেক অলি গলি পেরিয়ে নক্ষত্রের কাছে


হেরে যাওয়া আমাকে এখন বেঁচে উঠতে বলে

নতুন সিঁদুর পরা মুখ স্বপ্ন ভাঙ্গার কাছে বসে থাকে সারারাত

কারুর মুখের দিকে তাকিয়ে ফুল ফোটে না, চাঁদও হাসে না

আসলে জীবন একটা লড়াই খোঁজে কারুর হেরে যাওয়ার ভেতর,

ভাঙা ইচ্ছের হাড়গুলো পেয়ে যায় ঈশ্বরের আকার 



৩ : অনেকদিন পর বৃষ্টি এলো



অনেকদিন পর বৃষ্টির স্বপ্ন দেখলাম

ভেসে যাচ্ছে উঠোন ঘাট তুলসীতলা

নতুন পাতার গাল বেয়ে টপটপ ঝরছে

যেভাবে তুমি ছুঁলে ভালোবাসা গড়িয়ে পড়ে


অনেকদিন পর বৃষ্টি এলো

ভেজা চাঁদের আলো, ভেজা নক্ষত্র, ভেজা সমগ্র আকাশ, ক্রন্দসী


কতদিন ঊষর ধূসর রাত নিয়ে বুকের ভেতর বাঁচাতে চেয়েছি নূপুরের শব্দ

শুকিয়ে আসা ঠা ঠা চোখের মাঝে একটি তারার প্রদীপ জ্বলছে

সেই আলোয় স্নান সেরে একটি ছায়া চলে যাচ্ছে ঠাকুরঘরের দিকে---



৪ : রাত নিকোনোর স্বপ্ন


কিছু শকুন ঠায় তাকিয়ে আছে ঘাস খাওয়া গোরুর দিকে

গোরুটি লেজের দাপটে মশা মাছি সাফ করতে করতে দেখে নেয় আগুন চোখে শকুনের জিভ

আন্দাজ করছে কতটা লম্বা--

একটি কেঠো ঘাসের মতো কি--

অথবা আলের গায়ে পড়ে থাকা শুকনো খড়

মুখে তুলে চিবিয়ে নিলেই জাবর কাটা যাবে সারারাত


শকুনের সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ

কালো মেঘের মতো অন্ধকার আকাশ

রোদ নেই, আলো নেই

রাত নিকোনোর স্বপ্নে গোরুটি ডুবে গেল, চোখে সূর্যোদয় নিয়ে



৫ : শিশির হয়ে জেগে থাক



ঝরা ফুল আর শুকনো পাতা মুখোমুখি

শিশিরের আর্দ্রতা লেগে আছে গায়ে পিঠে

ঝাপসা চোখ বহুদিন লালন করছে অশ্রু

ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ব্যথা কতটা রঙিন হলে মৃত্যু এতো সুন্দর হয়

এমনি করে নারী মরে পড়ে থাকে পুরুষের পাশে

সাজানো স্বপ্ন শরৎ গন্ধ ছুঁতে চেয়ে লীন হয়ে যায় শূন্যে


বৃষ্টি এসো,ধুতে চাই আমার ক্ষতচিহ্ন

ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে যতটুকু ছুঁয়েছি কোমলতা

যতটুকু ভরেছি শ্বাস সুগন্ধে

এবার শুদ্ধ হতে দাও


যত ঝরে ঝরুক ফুল পাতা পালক পেখম

কাশফুল আহ্বানে অশ্রু শিশির হয়ে জেগে থাক শ্যামাঘাসের বিষন্ন বুকে, নববধূর লজ্জার মতো


২০,০৮,২০২১

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা