মোনালিসা রেহমানের কবিতা



কবি মোনালিসা রেহমান প্রায় দু'দশক ধরে কবিতা লিখছেন।কবির জন্ম আলিপুরদুয়ারে 1978 সালের সালের31শে মে।। আলিপুরদুয়ার কলেজ থেকে ইংরেজিতে অর্নাস করে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স ও বি এড সম্পন্ন করে ফরাক্কায় একটা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কবির ডুয়ার্সে বেড়ে ওঠা,পড়াশুনো। ডুয়ার্স তাকে প্রতিনিয়ত সাহিত্য সৃষ্টির রসদ জোগায় ।বাবা মায়ের অনুপ্রেরণা য় লেখা লেখি তে হাতেখড়ি ‌। পরবর্তীতে অলিপুর দুয়ারের মে‌য়ের সাহিত্য প্রেম বেড়েছে উত্তর তরতর ।অনেক পত্র পত্রিকায় কবি লিখেছেন,।তার কবিতার ভাষা অত্যন্ত প্রাঞ্জল হলেও কবিতার বিষয়ভাবনা অতীব গভীর, ও ব্যঞ্জনাপ্রধান।এখনও পর্যন্ত তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।" কবি জগন্নাথ বিশ্বাসের উৎসাহে ও প্রকাশিত মোনালিসা রং প্রথম কবিতার বই   "মোম জ্বালতে জ্বালতে"। এরপরে ,"মেঘেরা হাওয়ার ফানুস","চৌকাঠ ডিঙিয়ে দশবার ভাবতে নেই"," মৃত্যুর মাঝে ফাঁক নেই " প্রত্যেকটা কাব্যগ্রন্থ স্বকীয়তার দাবি  রাখে।বাংলাদেশ থেকে যৌথভাবে  প্রকাশিত হয়েছে তার "ভালোবাসার সাতকাহন "।মূলত কবিতা লিখলেও কবি ছোটগল্পও লেখেন।কবি মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে সমিধ সম্মাননা পেয়েছেন।এছাড়া মধ্যবঙ্গবান্ধব পত্রিকার একুশে পদক নামাঙ্কিত একটি পুরস্কারও পেয়েছেন। বঙ্গের দুই প্রান্তে ই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় অজস্র কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ-ছড়া লিখেছেন।

পেশায় শিক্ষিকা এই কবি চাকুরিসূত্রে  বর্তমানে ফরাক্কায় থাকেন।অচেনা অক্ষর নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে কবির ছয়টি কবিতা।

১ : ছায়া


তোমার দুচোখের পাতায় অজস্র অভিলাসের 

চিহ্ন  এঁকে দিই রোজ...

সুবাসিত বৃষ্টির গন্ধে ভিজে উঠেছে  মন

নিভৃত যাপনের ছাপগুলো ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে 

অন্ধকারকে দু'হাতে মেখে নিই জোনাকির মতন

নিস্তব্ধতায়  আজ বসন্তের পাতাঝরার গান

আমি তো অবাঞ্ছিত ছায়া  হতে চাইনি...

অতিচেতনার ঘ্রাণে ঘ্রাণে শব্দেরা করে খেলা

অনেকবার ডেকেছি তোমায় নিভৃতে

তোমাকে না পেলেও তোমার ছায়াকে পেয়েছি রোজ৷


২ : শব


একটা শহর কেমন জমাট অন্ধকারে 

ডুবে যাচ্ছে ...


ডুবুরির মতো জলের তলায় 

খুঁজে নিতে হয় মুক্তো।


এমন বিপন্ন সময়ের দাস 

পবিত্রতাহীন ,নিজেকেই করেছে

 যারা আজ লাশ।


শব্দবন্ধে সেজে উঠেছে মৃত্যুর 

পরোয়ানা ।

যারা ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছে

তাদের কেমন করে মৃত্যু হবে

সে রহস্য অজানা ।


৩ : গৃহস্থ 


তোমার কবিতা  আমায় ফিসফিস  বার্তা দেয়

 আমি তখন খিলখিল রাইকিশোরী হয়ে যাই

 গাছের ভেতর শান্ত কলরবে দুটো পাখি 

 বৃষ্টি ফোঁটা  মেখে আকাশ দেখে আনমনে

 বাতাসের অনন্ত  গানে  নিত্য বাজে

তাদের নকশিকাঁথার  বিলাপ।

 কলাপাতায় ভাত আর  লেবু লংকা আচারের

 স্বাদে   মোহময়  হয়ে ওঠে  কুঁড়েঘরের রূপ।


৪ : কবিতার গাছ


রক্ত থেকে উঠে আসা কান্নারা

একদিন মুক্তি খোঁজে

নিঃশর্তে কবিতার গাছ হই।

গাছটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় 

নিজেকে আমূল বদলে ফেলি

হাসি কাঁদি নিজের চুল ছিঁড়ে 

পুতুলের চুল বানাই।

একদিন দেখি নিজেই কথা_বলা

পুতুল হয়ে গেছি...


৫ : তেজস্বী

 

  স্বপ্নে যতবার পাঁচিল টপকেছি

  লোকে  বলেছে...

  এগিয়ে যাচ্ছিস সকলের থেকে...

   এরপরের ধাপ

   নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছি

   দিনের পর দিন।


   কখনও কখনও  পাঁচিল

  ভেঙ্গে,অন্যের পাঁচিলে ঊঠে পড়েছি

  তেজি ঘোড়ার মত।

   নিজেকে ছাপিয়ে গেছি বহুদিন।


  স্বপ্নের থেকে বাস্তবকেই এখন বেশি 

   বন্ধু মনে হয়।

   নিজেকে  নিজের প্রহরী বলে

  এখন আর আফসোস হয় না।


৬ : অভিমান 


এই যে এত এত অভিমান 

অদ্ভুত ভাবে কেমন মিলিয়ে যায় 

দুচোখের সুড়ঙ্গে...

সুপ্ত অভিমান তখন অশ্রু লুকোয়,

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চেপে ...


বিস্কোরণে  চেপে রাখা অশ্রু ও

একদিন মুক্ত হয়ে ধুলোতে গড়ায় ।

তবুও মাঝে মাঝে 

 দুর্ভাবনার মাসেও

জ্বলে ওঠে সৌভাগ্যের তারা।


সেইসব মায়াভরা রাতে

 প্রেম জাগে ...

ভিজে যাই নিষ্পাপ দিশেহারা ।

Comments

  1. প্রতিটি কবিতা অসাধারণ ব্যাঞ্জনাময়

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা