দেসা মিশ্রর কবিতা
দেসা মিশ্রর বাড়ি -মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জে।
বহরমপুরের গার্লস কলেজ থেকে দর্শন নিয়ে বি এ পাশ করেছে। এক্কেবারে সাংসারিক হয়েও কবিতা লিখে চলেছে । তার লেখার মধ্যে অতিকথন থাকে না , কিছুটা দার্শনিক চোখ থেকে যায়। জিরো বাউন্ডারি গ্রুপের সাথে যুক্ত আছে ।কবিতা ছাড়াও সাহিত্যের অন্য বিষয়গুলিও মন কে আকৃষ্ট করে তার।
আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে দেসার দশটি কবিতা ।
১ : নিষ্পাপ
বৃষ্টির সাথে শব্দের সঙ্গম
ফুট ফুটে কবিতা
কেন জানিনা শিকল হও রোজ
আগুন রক্ত হাহাকার
সবই তো সহজের জটিল রুপ
তবু পা বাড়িয়ে বাতাস চেটে দেখো
ওর মুখে নতুন দুধের ঘ্রান পাবে
আলো পাবে -
জীবনের অন্য রূপ !
ততক্ষণ আলজেব্রা গুলো কে যুবতী হতে দাও !
২ : উল্লাস
ভূতের সাথে ভবিষ্যৎ কে বেঁধে -টিক টক ঘড়ির হার্ট
দরকারি অদরকারি ভাবনা মিশে নিরেট যখন মন খারাপ
তখন চাইলেই ছুটি আসে না হওয়ার
ডানার স্বাদ রঙ বদলায় অনুক্ষণ
ওদিকে অগুনতি চাতকের বুকে নামি দামি অগ্নেয়গিরি !
বেপরোয়া চোখে শুধুই কঠিন নদী কাটতে থাকা
চারিদিকে কুচি কুচি জলের লাশ আর
বিন্দু বিন্দু বিজয়ের উল্লাস !
৩ : এলার্জি
কাজল থেকে জন্ম নেয় কবিতা
অরণ্য থেকে অভিমান
ফুরিয়ে যাওয়া আমির মধ্যে অল্প মাত্রায় তুমি ঢাললেই
শুকনো পাতা -সিঁদুর পলাশ
তৃষ্ণা -তুমুল মেঘ
ক্ষত -চুম্বন
নিজস্ব যাপনে শুন্য গ্লাসেই নেশা হয় ভীষণ রকম,
সব বোতলেই এলার্জি !
৪ : অপরাজিতা
এক অসহ্য দহন গ্রাস করে শহরের দেহ
চোখ পান করে তীব্র পূর্ণিমা
শব্দের ঠোঁটে শব্দ বসে যেটুকু আদর...
উপহার দেব,
রাতের রিংটোনে গুছিয়ে নেবো
এলোমেলো অসুখ,
পূর্ণতা পেলে...
কড়া ডোজের ওষুধ আর কাব্যের নতুন জীবন
অস্ত কালে শুধু একটি অপরাজিতা পাখা মেলবে
বাগান জুড়ে !
৫ : অবাক মুখোশ
এলোমেলো ইচ্ছে দের আবদার -জোনাক রাত
স্বপ্ন গুলো কে একত্রিত করলাম তাই,
মেঘ দিয়ে মন বোনা খুব সহজ অথবা জটিল
এভাবেই বদলে যায় বৃষ্টির আয়ু রেখা !
কাজলের ঘুম পূর্ণ হলেই জেগে ওঠে অবসাদ -
পায়রার রক্ত ঢাকতে একটি একটি করে তাজা
গোলাপের লাশ
তবু দিন গুলো নদী হয় নারী হয় !
৬ : অপেক্ষা
যাওয়ার বেলায় ছড়িয়ে দিলে অমৃত
বৃষ্টি নেমে পাতা গর্ভবতী হলো
ধানের শিষে উপচে পড়লো যৌবন
পুতুল সব দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে এসে -
সুরেলা পথ বানালো !
চাঁদ কাব্য বুনল কলঙ্ক তো সুন্দর দের ই মানায়,
আমি দূর্বা ঘাস হয়ে চুল এলিয়ে বসে থাকলাম পৃথিবীর শ্বাস জুড়ে,
নতুন পঁচিশে বৈশাখ লিখবো বলে !
৭ : যাপন -যুদ্ধ
যাপনের সব পরীক্ষা প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেয় না,
তাই পথের আলো অন্ধকার -সাফল্য ও শিক্ষা !
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধুলো -রাঁজহাস
হাসি ফুরোলেই ঝরে যায় সবুজ
কুঁকড়ে যায় শিকড়
বিন্দু সময় -সাগর !
যুদ্ধ চলবে আলোর মাঠে,
আলোর ঘুমে নিজের সাথে নিজের !
ক্লান্তি শরীরের আসুক
মনের ক্লান্তি -মৃত্যু
হেরে যাবোনা কথা দিয়েছি -
পুরোনো ঘড়ি কে পেরিয়ে নতুন অবধি
পৌঁছে যাবো
ছুঁয়ে নেবো খোলস ছাড়িয়ে
নিখুঁত জীবন !
ফেলে যাওয়া পথে পড়ে থাকবে
অজস্র ছেঁড়া মুখোশ,
ভবিষ্যতে -সারিগানে লেপ্টে থাকা প্রিয় মুখ !
৮ : নিদ্রাহীন রাত
ঘুমের ভেতর আরো কত ঘুম -বৃথা
পথের ভেতর মৃত জীবিত পথ
পা দুটো থামে,
হিংসে করে মাথা !
এখন রোদের শেষে হলুদ হয় পাতা
পাখির ডানা থেকে খসে পড়ে স্মৃতি ধুলো
চোখ খাঁচা তে থেকেও আকাশ ছুঁয়ে যায়
-এই তো অসুখ !
সব পেয়েছি গুলো মুখ থুবড়ে পড়লে
সাদা পাতা পেন -হার্ট এর জেরক্স কপি
তবু এ যাপন বড্ড অদ্ভুত
ক্ষত দের অক্ষত দেহ
আর কি ভীষণ যন্ত্রনা,
ভেতরের ওই ডাল পালা গুলো ঝড় থামাক
ঘুমোতে চাই !
খোঁজা বাকি আছে অশেষ চাবি
৯ : রহস্য
শোকের কবর দিতে দিতে বুক জমিন ফাঁকা নেই আর
দীর্ঘ রাতের ধারালো নখ ক্ষত বিক্ষত করে পূর্ণ অবয়ব,
সূর্যের অস্ত ভেবে নুইয়ে যাই যেই
কবর নাড়া দিয়ে ওঠে -ঢের বাকি ঢের ঢের !
দূর আকাশে ঘ্রান নিয়েছি -অদৃশ্য শকুন
অথচ গাঢ় ঠোঁট পলিশে আর মাতাল কাজলে গণিকা যেন
হাসি তে ঢলে ঢলে বিরিয়ানি পরিবেশন !
অবাক হওয়ার তো কিছু নেই
আগুন -বরফ
ভীষণ রহস্যময় !
১০ : জন্ম কথা,
ঠিক কত টা ভেঙে পড়লে জানলা দরজা খোলা রাখা বৃথা জানিনা !
অদৃশ্য কাব্য, উধাও ছবি, আরো যা কিছু সব ধোঁয়া,
যত্ন আসেনা নয়নতারা বা দামি গোলাপের উপর,
দীর্ঘ অবসাদ বা বিতৃষ্ণার ওষুধ শুন্য এই অবনী তে
কবি দের পাগল মনে হয়,
ওদের রাষ্ট্র থেকে দূর করা হোক !
সে সময় এই ভাবনা আসেনা -
নিখুঁত ক্ষত একটা অমর কবিতা প্রসব করে !
Comments
Post a Comment