পিনাকী রায়ের কবিতা

 



জন্ম 13 ই জুন 1978 কলকাতায়। স্নাতকোত্তরের প্রাণিবিদ্যা ও এম.ফিলে পরিবেশ জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার সাথে বি.এড ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে সঙ্গী করে বারবার প্রকৃতিতে নিখোঁজ হয়েছেন। পছন্দের পেশা কে পাশে পেয়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার অন্যতম নেশা গুলো যেমন ফটোগ্রাফি চর্চা ও কবিতা লেখা। নিজেকে বরাবরই "লিরিক্যাল" কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। বর্তমানে কবিতাই তার ধ্যান জ্ঞান। তার প্রথম প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হৃদয়ের নীরবতার শব্দ শুনি" ইতিমধ্যেই বহুজনের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিমূর্ততার মধ্যে বরাবরই খুঁজে চলেছেন অমোঘ সৃষ্টি।

আজ জিরো বাউন্ডারির একক উদযাপন বিভাগে থাকছে পিনাকী রায়ের পাঁচটি কবিতা। 


(১)

যুদ্ধ জননী


এখনের মাটিটা বড্ড ঝুরঝুরে

পা ফেললেই আটকে যায় সারা শরীরে,

হাওয়া দিলে আত্মস্থ হয়।

স্বামী সন্তান হারা ওইযে চলেছে

আমার স্বাধীন দেশ। বুকের উপরে পা তোলাই যেত

কিন্তু আপনজনের বুকের ওপরে

অধিকারবোধ সহজাত।

দোরে দোরে ঘোরে শব্দ ভিখারি,

আমার দেশ ভালো আছো?

একটু নীরবতা পালন করো

ওরা ঘুমিয়ে আছে মাটির অনেক গভীরে,

ওই ওদের স্পন্দন শুনতে পাও তো?

আমার আব্রু গেছে, দান করেছি

স্বামী সন্তান।

ক্ষতিপূরণ দেবে? যুদ্ধ যে এখনো থামেনি।

এখনো কত সাফিয়া বেগম ভাত খায় না

শতক ইস্তক,

বুক দিয়ে আগলে রেখেছে মাটির সম্মান।

কালো পিচ ঢেলে ল্যামিনেট করেছো দুঃখ।

মাটিতেই তো ছিলাম, এবার

যুদ্ধ জননী হয়ে মাটিতেই মিশে যাবো।

আমাকে শহীদ বলো না।

                     একটু নীরবতা পালন করো

ওরা ঘুমিয়ে আছে মাটির অনেক গভীরে

                     এখন মাটিটা খুব ঝুর্ ঝুরে।


            (২)

কবিতা উৎসব


পাঁচটা কবিতার বিনিময়ে

এক প্যাকেট রথ্সম্যান,

মানবিকতার বদলে মনুষ্যত্ব

দাবি করা যেতেই পারে।

তোমার আলোচনায় উঠে আসা

নগ্নতা কতটা প্রাসঙ্গিক

তা তো সময় বলবে।

এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে

গাড়ি থামলো।

তারপর দশ ধাপ সোজা উঠে

প্রায় বারো ধাপ নেমে

পাতাল প্রবেশ।

অতলে তলিয়ে যেতে যেতে

চিনি ছাড়া লাল চা, সিঙ্গাড়ার

শিরদাঁড়া ভাঙ্গে।

দূরে সুসজ্জিত মঞ্চের চেকনাই

লোভ চকচকে প্রতিভার আহ্বান

গুরু গম্ভীর কন্ঠে কবিতা নেমে

আসে চিবুক গলা থেকে হৃদপিন্ডে।

নাভি থেকে উঠে আসে সম্ভাষণ।

রাতে শুতে যাওয়ার আগেও

মনের ভেতর তখনও ঘোর লাগা

কবিতা উৎসব।


            (৩)

অথ জীবন কথা


অনেকদিন হল কিছু লিখিনি।

রুচি নেই, নেই আবেগ আর সুযোগ,

হয়তো সেভাবে অবসর মেলেনি,

চারদিককার পরিশ্রম অবসাদের দুর্যোগ।

দরকার মেটাতে মেটাতে জীবনে

আর কিছুই নেই অবশেষ,অথচ

অবশ্যম্ভাবী ব্যাথাকে চেপে গোপনে,

কত ভান,ঢঙ, কৃত্রিমতা তথৈবচ।

সব কথা বলে ফেলতে গিয়ে

একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া অসাধ্য,

তার চেয়ে ভালোবাসার কুয়াশা নিয়ে

প্রয়োজন অপ্রয়োজনের সাথে যুদ্ধ

করতে গিয়ে কোন্ উপকরণ গুলো সাহায্য

করবে উপলব্ধি হয় তখন।

যে ভালোবাসা সবকিছু অগ্রাহ্য

ক'রে, বিবাদহীন পরিতৃপ্তির করে উদঘাটন।

কাকের কালো পাখনার ভেতরে

যে ময়ূরকন্ঠী রঙ ফুটে বের হয়,

তেমনি ক্ষনিকের সাদাসিধে প্রচারে

জীবনের প্রেমটাও প্রয়োজন হয়।


              (৪)

প্রেম ও কোলেস্টেরল


চারটে আলো বদলে দিয়ে

ঘরের অ্যানিমিয়া ঢাকার চেষ্টা,

টিউবলাইট এর ওপরে সোজা ওঠা

কালো কার্বনের শিখাটা

দেয়ালকে কলঙ্কিত করে

মনের মধ্যে জমিয়েছে অনেক কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

জানলা দরজা খোলাই ছিল

তবু হাফ ধরা আফসোস,

ঘরটা যদি একটু বড় হতো

ফুসফুসের জোরটা যেত বেড়ে।

বারবার ঠোঁট দুটো লালা রসে ভিজিয়ে

প্রস্তুত। অমোঘ চুম্বনে অবাঞ্ছিত ঢেঁকুড়

সব ভেস্তে দিয়ে হৃদয়ের গায়ে জমিয়েছে

একগাদা মেদবহুল ভালোবাসা।

লো ডেনসিটি কোলেস্টেরলের

মাত্রা কমাতে গিয়ে

ঠোঁটদুটো শুকিয়ে কাঠ।

শীতের আমেজে লিপবাম এসেছে

হরেক ফ্লেভারের।

প্রতি শীতে তোমার ঠোঁটের ঋন 

বেড়েই চলেছে।

ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে

4° কম,

শরীরের উষ্ণতা পারদ এর ব্যস্তানুপাতিক।

জানলা দরজা হাট করে খোলা।

এবার সাজানো শয্যায় অগ্নিদগ্ধ কোলেস্টেরল,

ঘরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ঘন করে তুলবে।


             (৫)

          হত্যা


আমাকে যে মানুষটা ঠান্ডা মাথায়

খুন করেছিল তাকে হত্যার বরাত

কে দিয়েছিল জানো?

মানবতার প্রাচীন রীতিনীতি।

সেই রাতে আকাশে শুধু জেগে থাকা

গুটিকয়েক নক্ষত্র ভাগাভাগি করে

সময় গুনছিল,

ত্রাণশিবিরে চলছিল বিপর্যয়ের পূর্ব প্রস্তুতি,

জোয়ারের জল এসে বিপদসীমা

মাপ ছিল।

অচেনা পদধ্বনি ইমনের ধাঁচে

এগিয়ে আসছিলো আমার দিকে,

বিক্রমের কাঁধে বেতালের গল্প 

শেষ হয়েছে সবে।

কারা যেন বলাবলি করছিল

মুছে ফেলতে হবে মোটা হরফের লিপি।

টেবিলে রাখা গ্লাসে জলের অনুরণন

প্রতিনিয়ত বলছে তুমি খুন হবে।

ওই যে রাত দ্বিপ্রহরে কোরআন হাতে

কে চলেছে ঠান্ডা মাথায়

হনুমান চালিশা যদি বদলে যায় কোরআনে

কি আসে যায়।

এরপর হাজারো পদধ্বনিতে ভৈরবী

শোনেনি সকাল, একটানা বেজে গেছে

ঠান্ডা মাথার খাম্বাজ আর মালকোশ।





Comments

  1. অসাধারণ সব কবিতা পড়ছি দাদা । আপনার সাথে অনেক কথা আছে দাদা 🙏🏻🙏🏻❤️🌼

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শম্পা সামন্তর কবিতা

মোনালিসা রেহমানের কবিতা

বিবেকানন্দ দাসের কবিতা